চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় শিশু রাইফার মৃত্যুর অভিযোগে করা হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন চার চিকিৎসক।
Published : 27 Aug 2018, 12:36 PM
এরা হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব ও ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান।
সোমবার সকালে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন বলে বাদিপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগপত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক চিকিৎসককে ১০ হাজার টাকা বন্ডে জামিন দিয়েছে।
“চার চিকিৎসক উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষে তারা আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।”
বিচারকের বক্তব্য উদ্ধৃত করে এই আইনজীবী বলেন, “শিশু রাইফার মৃত্যুতে সারা দেশের মানুষ কেঁদেছে। তখন আমিও কান্না ধরে রাখতে পারিনি। আমিও মনে করেছি আমার কন্যা মারা গেছে।
“তবে যে ধারায় মামলা হয়েছে সেটা জামিনযোগ্য। আসামিপক্ষের জামিন পাওয়ার আইনগত অধিকার আছে।”
আসামি পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, শম্ভু প্রসাদ দে এবং খোরশেদ আলম চৌধুরী।
রাণা দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাইফার মৃত্যুতে আমরা সবাই ব্যথিত। তবে মামলাটি বিচারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনকে প্রাধান্য দিতে হবে।
“২০১ এবং ৩০৪ (ক) ধারায় যে অভিযোগ এ মামলায় আনা হয়েছে, তাতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারা মোতাবেক আসামির জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। সে কথাই আমরা আদালতে বলেছি।”
রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আদেশের বাইরে আদালত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন- সবারই শিশু আছে। রাইফার মৃত্যুতে আমরা সবাই মর্মাহত। বিচারক হিসেবে আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমার নেই।”
শুনানি শেষে রাইফার বাবা রুবেল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় আমার মেয়ের মৃত্যুর পর মামলা করেছি।
“আশা করি আসামিরা সাজা পাবে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে।”
দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।
‘ভুল চিকিৎসায়’ রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ওই হাসপাতালে তখন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ও এক নার্সকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
এরপর চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মুখোমুখি অবস্থানে যায়; দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে।
এর মধ্যে র্যাব ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একদিন সেবা বন্ধ রাখেন মালিকরা; ফলে ভুগতে হয় রোগীদের।
এদিকে রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের প্রতিবেদন কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
পরবর্তীতে রাইফার বাবা রুবেল খান বাদি হয়ে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে দুইদিন পর পুলিশ ২০ জুলাই এটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে।