আগামী ১৫ মে চট্টগ্রামে সংযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস- এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
Published : 28 Feb 2018, 08:26 PM
তবে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ এপ্রিল মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চিটাগাং চেম্বার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, “এলএনজি আসতেছে। ১৫ মে থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে। আপনারা ভাগ্যবান, যা গ্যাস আসবে এই পথে যাবে। চিটাগাংয়ে শুরুতে দেওয়া হবে। মধ্য মে তে আপনারা গ্যাস পাবেন। আপনারা প্রস্তুতি নেন।”
এলএনজি সরবরাহের প্রক্রিয়া বর্ণনা করে তিনি বলেন, “একটা ভাসমান টার্মিনাল থাকবে। এখানে একটা জাহাজ এসে লাগবে। এ জাহাজ যাবে না, থাকবে। অন্য জাহাজ এলএনজি নিয়ে আসবে। সেটা এসে এই জাহাজে এলএনজি দিবে। ওই জাহাজ থেকেই গ্যাস যাবে পাইপ লাইনে।
“খুঁটিনাটি সব আমরা দেখেছি। কাতারের সাথে এলএনজি আমদানির বিষয়ে একটা এমওইউ করা ছিল। খুব কমপ্লিকেটেড আপনারা জানেন… জাহাজ কোন জায়গায় হবে, মহেশখালী দিয়ে পাইপ লাইন করা, সেই পাইপ লাইন আবার এখানে এসে কানেক্ট করা।”
দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসায় সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগে নিয়ে এগোচ্ছে। ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “একটা টার্মিনাল হচ্ছে- ৫০০ এমএমসিএফটি আসবে। তারপর আরেকটা টার্মিনাল হবে, আরও ৫০০ এমএমসিএফটি আসবে। মোট এক হাজার হবে।”
সভায় ব্যবসায়ীরা এলএনজির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটায় পেট্রোবাংলা কোনো ব্যবসা করবে না। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়া আর কোনো ট্যাক্স হবে না। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন।
“দাম যা বাড়বে তা আপনাদের সক্ষমতার মধ্যে রাখব। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে দিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার এবং আপনাদের সক্ষমতা দেখে দাম নির্ধারণ করা হবে।”
ব্যবসায়ীদের নতুন শিল্প-কারখানা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছাতে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক যেটা লাগে তার অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, কাজ চলছে। আপনারা আস্তে আস্তে এর সুফল পাবেন।
“চট্টগ্রামের যেটা সমস্যা গ্যাস স্ট্যাগারিং বা প্রেশার সমস্যা, আর থাকবে না। বিদ্যুতের ব্যপারে জানেন আপনাদের এখানে প্ল্যান্ট আছে কিন্তু গ্যাস নাই। ফার্টিলাইজার চালালে বিদ্যুৎ চালানো যায় না। পরিসংখ্যান সব জানি। কিন্তু সমাধানগুলো ছিল না। গ্যাসের সমাধান না হলে কোনো সমাধান নেই। এখন ইনশাল্লাহ গ্যাস আসছে।”
এর আগে চিটাগাং চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ২০২২ সালে মোট গ্যাসের চাহিদা হবে ছয় হাজার এমএমসিএফটি এবং ২০৩০ সালে ১০ হাজার এমএসসিএফটি। অন্যদিকে আমাদের মজুদ গ্যাসের পরিমাণ কমতে থাকবে।
“এক্ষেত্রে আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে কতটুকু চাহিদাপূরণ সম্ভব হবে এ বিষয়ে গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
২০০৯ থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ছেড়ে উদ্যোক্তাদের চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে চেম্বার সভাপতি দীর্ঘমেয়াদী গ্যাস সরবরাহ ও মূল্যনীতি দেওয়া, এনার্জি রেগুলেটরি কমিটির মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রস্তাব করেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ।