পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ব্রোকারদের তথ্যভাণ্ডার করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ।
Published : 11 Jan 2018, 05:25 PM
পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে ব্রোকারদের তথ্য ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্রোকাদের জন্য তৈরি করা হবে কার্ড। আর কার্ড ছাড়া কেউ পরিবহন ব্রোকারের কাজ করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফরম বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পরিবহন মালিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাক, কভার্ড ভ্যান ভাড়া নেওয়ার মূল কাজটি করেন ব্রোকাররা। তবে কতজন এ কাজে জড়িত তার কোনো সঠিক তথ্য নেই।
তাদের ভাষ্য, এ কাজে জড়িত শতাধিক ব্রোকার থাকলেও আবার তাদের অধীনে কিংবা আলাদাভাবে আরও দুই থেকে তিনশতাধিক মানুষ এ কাজ করছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক, কভার্ড ভ্যান চলাচল করে।
“এসব মালামাল পরিবহনের জন্য যতগুলো গাড়ির চাহিদা তা চট্টগ্রামের ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিকরা পূরণ করতে পারেন না। এজন্য অন্য জেলার গাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য পরিবহন মালিকদের ব্রোকারদের দ্বারস্ত হতে হয়।”
পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাইরের জেলায় মালামাল পরিবহনের জন্য অনেক সময় তারা খরচ কমাতে অন্য জেলা থেকে মাল নিয়ে চট্টগ্রাম আসা গাড়িগুলো ব্যবহার করে।
আর বাইরে থেকে আসা ট্রাক-কভার্ড ভ্যানগুলোও তাদের খরচ পোষাতে চট্টগ্রাম থেকে মালামাল নিয়ে নিজ জেলায় যায়। এজন্য জেলার গাড়িগুলো ঠিক করতে চট্টগ্রামের পরিবহন মালিকদের সহায়তা করে ব্রোকাররা।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, “ব্রোকাররা মালামাল পরিবহনের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেও সেগুলো ঠিক মতো পৌঁছেছে কিনা তার দায় দায়িত্ব নেয় না এবং গাড়িগুলোর কাগজপত্র ও চালক ঠিক আছে কিনা তারও সঠিক কোনো তথ্য থাকে না তাদের।
“প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে মালমাল নিয়ে অন্য জেলায় যাওয়ার সময় কিংবা আসার ক্ষেত্রে গাড়ি থেকে মালামাল চুরির অহরহ ঘটনা ঘটে থাকে। এতে অনেক সময় চালক ও মালিকদের সন্ধান পাওয়া যায় না।”
মালামাল পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য এ তথ্যভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এডিসি রউফ।
এজন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও ব্রোকার প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘পণ্য পরিবহন ট্রাক, কভার্ড ভ্যান মার্কেট অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি’ করা হয়েছে, যারা তথ্যভাণ্ডারের এ কাজটি সম্বন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, “যারা প্রকৃত ব্রোকারের কাজ করবে তাদের সবাইকে তথ্যভাণ্ডারের আওতায় আসতে হবে। আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে ব্রোকাররা তাদের তথ্য ফরম সংগ্রহ করে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কাছে জমা দেবে।
“আর সেখান থেকে জমা দেওয়া হবে পুলিশকে। পুলিশ এসব ফরমের তথ্য যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্রোকারদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। কার্ডব্যতীত কেউ পরিবহন ঠিক করার বন্দোবস্ত করতে পারবে না।”
তিনি আরো জানান, পাশাপাশি আরও কিছু ফরম তৈরি করা হবে যেগুলো কার্ডধারী ব্রোকাররা নিয়ন্ত্রণ করবে। সেসব ফরমে মালামাল পরিবহনের জন্য ভাড়া করা ট্রাক-কভার্ড ভ্যানের চালকের বৃত্তান্ত, মালিকসহ বিভিন্ন তথ্য থাকবে।
এ তথ্যটি মালামাল প্রেরক, ব্রোকার, পুলিশ ও স্থানীয় এজেন্টের কাছে জমা থাকবে।
সকালে ডাটাবেজ ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অপরাধ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে ও সুফিউর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন, ট্রাফিক পশ্চিম জোনের সহকারী কমিশনার কামরান হোসেনসহ পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা।