“পরপর দুইটি ঘটনা কেন ঘটেছে, এটা কোনো পিওরলি অ্যাকসিডেন্ট নাকি আপনারা যেটা বলছেন সেটা সে উত্তর পেতেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে,” বলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
Published : 06 Oct 2024, 05:10 PM
চট্টগ্রামে পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুইটি তেলবাহী জাহাজে আগুনের পেছনে ‘নাশকতা’ রয়েছে, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) এমডির এমন সন্দেহের পর তার উত্তর পেতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠনের কথা বলেছেন নৌ উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
রোববার চট্টগ্রামে বিএসসির কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অল্পদিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো নাশকতা কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “পরপর দুইটি ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে মানুষের মনে একটা সন্দেহ থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যে সময়টাতে আছি, এটা তো একটু অস্থির সময়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি এ অস্থিরতাটা কমাতে।”
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “ছোটখাট ঘটনা ঘটলেও আপনাদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে, এটা অন্য কোনো ব্যাপার কি না। সে সন্দেহ যাতে দূর হয় এবং প্রকৃত বিষয়টা বের করে আনতে পারি…একটা বেশ বড় এনকোয়ারি কমিটি, যেখানে সব ধরনের এক্সপার্টরা থাকবে। সিকিউরিটি এক্সপার্ট থেকে শুরু করে যারা অয়েল ট্যাংকারে কাজ করেছেন এবং বিএসসির প্রতিনিধি নিয়ে ৯-১০ জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে।”
অনুসন্ধান দলের সদস্যরা সাগরে গিয়ে জাহাজ দুটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা আসবেন, অন দ্য স্পট জাহাজটাও তারা দেখবেন, আসলে বিষয়টা কী। মানুষ যেগুলো সন্দেহ করছে সে ধরনের কিছু আছে কিনা।
“কী হয়েছে সেটা নিয়ে অনুমানভিত্তিক আমি কোনো কথা বলতে চাই না। ইনকোয়ারি হবে; শেষ হলে তার রেজাল্টগুলো আপনারা জানতে পারবেন। এ মুহূর্তে কিছু বললে এনকোয়ারি ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে যাবে।”
কমিটির প্রতিবেদন দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, পরপর দুইটি ঘটনা কেন ঘটেছে এটা কোনো পিওরলি অ্যাকসিডেন্ট নাকি আপনারা যেটা বলছেন সেটা, সে উত্তর পেতেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
বিএসসির তেলবাহী জাহাজে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সকালে বন্দরের ডলফিন জেটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল খালাসের সময় জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতির সামনের অংশে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় জাহাজটিতে ১১ হাজার ৭০০ টন ক্রুড অয়েল ছিল। আগুনের ঘটনায় একজন ক্যাডেটসহ তিনজন নিহত হন।
এই ঘটনার পাঁচদিন পর শুক্রবার মধ্যরাতে বহির্নোঙ্গরে একটি মাদার ভ্যাসেল থেকে ক্রুড অয়েল লাইটার করে নিয়ে আসার সময় চার্লি অ্যাংকরেজে এমটি বাংলার সৌরভে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
জাহাজ থেকে নামার সময় পানিতে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ক্রু মারা যান। জাহাজটিতেও ১১ হাজার ৫৫ টন ক্রুড অয়েল ছিল।
শুক্রবারের ঘটনার পর এ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে ‘নাশকতা’ আছে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক।
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে ১৯৮৭ সালে যুক্ত হয় ডেনমার্ক থেকে আনা দুটি তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’।
মূলত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি করা তেল গভীর সমুদ্র থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে আনার কাজ করত ট্যাংকার দুটি।
সাধারণত একটি অয়েল ট্যাংকার ২৫ বছর পর্যন্ত ‘লাইফটাইম’ থাকলেও জাহাজ দুটি রাষ্ট্রীয় ‘প্রয়োজনে’ ৩৭ বছর ধরে অপারেশনাল কার্যক্রমে ছিল। এক বছর আগে জাহাজ দুটি স্ক্র্যাপ হিসেবে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তা থেকে সরে এসে পুনরায় জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু করে বিএসসি।
পুরনো হওয়ায় উচ্চ মূল্যে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সচল রাখার চেষ্টার মধ্যে পাঁচ দিনের ব্যবধানে ট্যাংকার দুটিতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পৃথক ঘটনায় জাহাজ দুটির মোট চারজন নাবিক প্রাণ হারান।
ট্যাংকার দুটি অনেক বেশি পুরনো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় দেশের সমুদ্রসীমার বাইরে যাবার পর্যায়েও ছিল না। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে অপরিশোধিত তেল খালাসের (লাইটার) কাজ করে আসছিল।
ঝুঁকি নিয়ে চলাচলের মধ্যে আগুন লেগে চারজন নিহত হবার পর অবশেষে বিএসসি তাদের জাহাজ দুটি সমুদ্র পরিবহন থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
'বাংলার জ্যোতির' পর এবার অয়েল ট্যাংকার 'বাংলার সৌরভে' আগুন
বাংলার সৌরভের আগুনে 'নাশকতা' দেখছেন বিএসসির এমডি
অবশেষে বহর থেকে বাদ পড়ছে বাংলার সৌরভ ও জ্যোতি