“হত্যাকাণ্ডের পর কাকে আসামি করলে টাকা মিলবে, তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যায়,” বলেন গোলাম আকবর।
Published : 26 Apr 2025, 05:55 PM
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাউজানে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডগুলো ‘রাজনৈতিক’ কারণে হয়নি বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তর জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চাঁদাবাজি, মাটিকাটা ও টেন্ডারবাজি জড়িত।
সাম্প্রতিক সময়ে রাউজান উপজেলায় অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবরের ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব’ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসে উত্তর জেলা বিএনপি। সেখানে আওতাধীন উপজেলাগুলোর ‘বিরাজমান পরিস্থিতি’ তুলে ধরেন গোলাম আকবর।
দলের চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, “৫ অগাস্টের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করলেও বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাজগুলো বেশি মানুষের চোখে পড়ছে এবং পত্রিকায়ও আসছে।”
তবে ঘটনাপ্রবাহে অনেক তথ্য পত্রিকায় আসে, যেগুলো সঠিক নয় বলে মনে করেন এ বিএনপি নেতা।
“নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও আগামী দিনের মনোনয়নের কারণে এসব হত্যাকাণ্ডগুলো হচ্ছে বলে পত্রিকায় আসছে। কিন্তু কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটছে তার সত্য জানা এবং আগামীতে যেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড না হয়, তার ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।”
চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসের জনপথ’ খ্যাত রাউজানে খুনখারাবি একসময় ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা।
গোলাম আকবর বলেন, “রাউজানে মূলত হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে কলেজ ছাত্র ফারুক হত্যার মাধ্যমে। এ পর্যন্ত শতাধিক ছাত্র যুবককে প্রাণ দিতে হয়েছে রাউজানে। সেসময় ছাত্রলীগ ও অধুনালুপ্ত এনডিপির সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “৫ অগাস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে এসব হত্যাকাণ্ড নতুনভাবে শুরু হয়েছে। এগুলোর মূল কারণ হচ্ছে মাটি কাটা, বালু উত্তোলন, বালুর মহাল দখল, বিক্রির দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদার থেকে কমিশন বাণিজ্য করার প্রতিযোগিতা, সাধারণ ব্যবসায়ীদের তালিকা করে চাঁদা করা, না দিলে বাড়ি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার মত ঘটনা।”
সন্ত্রাসীরা নিজেদের কর্মকাণ্ড আড়াল করতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিএনপির নাম ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাউজানের হত্যাকাণ্ডগুলোর পর মামলায় আসামি করা নিয়ে টাকা দাবির অভিযোগও করেন চট্টগ্রামের এ বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “রাউজানে যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে, সেগুলোতে পরবর্তীতে আসামি দেওয়ার জন্য ‘তোড়জোড়’ শুরু হয়ে যায়। কাকে কাকে আসামি করা হবে, কাকে আসামি করলে টাকা আদায় করা যাবে, সেটা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে যায়।”
বাগোয়ানে মানিক আব্দুল্লাহ হত্যা মামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ মামলায় ইসমাইল নামে দুবাই প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে। যার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। কয়েকটি মামলা পর্যালোচনা করলে সেটা আমরা দেখি।
“পরবর্তীতে শুনেছি তাকে বলা হচ্ছে টাকা দিলে মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।”
গোলাম আকবর বলেন, “একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছে রাউজানে থানা ও উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে দুটি পক্ষ গিয়ে বসে থাকে। তবে সেখানে একটা পক্ষ সব সময় অবস্থান নিয়ে থাকেন এবং ৫ অগাস্টে থানায় হামলা করে অস্ত্র লুটকারীরাও এখন থানায় গিয়ে বসে থাকেন।”
এ জন্য সাধারণ মানুষ থানায় যেতে পারে না অভিযোগ করে গোলাম আকবর বলেন, “কয়েক দিন আগে জেলা যুবদলের সভাপতির নেতৃত্বে ১৫ জন উপজেলা প্রশাসনে যায় সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য । সেখানে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, তারা সেখানে যেতে পারবে না। সেটা নেতার নির্দেশ।”
গোলাম আকবর অভিযোগ করেন, প্রতিদিন রাঙামাটি-কাপ্তাই থেকে গাছ নিয়ে অন্তত ৫০টি ট্রাক আসে। সেগুলো থেকে টাকা আদায় করা হয়। রাউজানে ৩৮টি ইটভাটা আছে সেগুলোর অবস্থা করুণ।
“গত নভেম্বরে প্রতি ইট ভাটা থেকে তিন লাখ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে। দুই লাখ টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে। গত ঈদের আগে এক লাখ টাকা করে চাঁদা তুলেছে। এ টাকা কারা কালেক্ট করে সেটা ব্রিকফিল্ডগুলোতে গেলে জানতে পারবেন।”
তিনি বলেন, “আমি জড়িত থাকলে আমার নামও উন্মোচন করুন। কিন্তু মনগড়া কথা বলে দেবেন না। দলের পার্লামেন্ট বোর্ড এগুলো বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবেন।”
এসময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, এসব ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী জড়িত কিনা।
জবাবে তিনি বলেন, “আমি দলের দায়িত্বে আছি। যারা নিহত হচ্ছে এবং যারা হত্যায় জড়িত, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলে বুঝবেন এসবের সঙ্গে কারা জড়িত।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক এম এ হালিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস, কাজী সালাউদ্দিন, নুরুল আমিন, প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আজিমুল্লাহ বাহার, রাউজান বিএনপি সভাপতি অধ্যাপক জসীম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।