চার বছরে খালে পড়ে নগরীতে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার সময় তারা পড়ে যান।
Published : 27 May 2024, 10:30 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতি ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ও বোয়ালখালী উপজেলায় খালে পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বিকালে নগরীর কোতোয়ালী থানার আছাদগঞ্জ শুটকি পল্লী এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যাওয়া আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি।
অপরদিকে বোয়ালখালীতে মাছ ধরতে গিয়ে খালের পানিতে ডুবে মো. মনসুর আলম (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে থেকেই বৃষ্টি ঝরছে। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙে এবং দেয়াল ধসে ছয় জেলায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
নগরীর আছাদগঞ্জে মারা যাওয়া ওই যুবক খালের পাড়ে প্রস্রাব করতে বসেছিলেন বলে স্থানীয়দের বরাতে জানিয়েছেন নগরীর ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর।
তিনি বলেন, হঠাৎ ওই যুবককে খালে পড়ে যেতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ লাফিয়ে নেমে তাকে তুলে আনেন। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত আনার কথা বলেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকালে শুঁটকি পল্লীর ওদিকে খালে পড়ে যায় ওই যুবক। স্থানীয়রা কয়েকজন ওই যুবককে খালের কিনারায় যেতে দেখে। তিনি হয়ত প্রসাব করতে খালের পাড়ে যান। গত সপ্তাহেই খালটি পরিষ্কার করা হয়। এতে কোনো ময়লা বা কচুরিপানা ছিল না। পুরো পরিষ্কার ছিল। তবে পানি বেশি ছিল।
এলাকার এক নারী ওই যুবককে পানিতে পড়ে যেতে দেখে অন্যদের খবর দেয়। এলাকার চার-পাঁচজন ছেলে খালে নামে তাকে তুলে আনেন।
কাউন্সিলর বলেন, ওই যুবকের পরনে সাদা টি শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট ছিল। তার পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করছি। ওই যুবককে একা হেঁটে খাল পাড়ে যেতে দেখা গেছে।
“তিনি প্রস্রাব করতে খালের একদম ধার ঘেঁষে বসেন। এরপর কি মাথা ঘুরে, স্লিপ করে না কি বাতাসে খালে পড়ে গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুরতহালে শরীরে গুরুতর কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। হয়ত পানিতে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
তিনি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।
এর আগে ২০২৩ সালের অগাস্টে নগরীর উত্তর আগ্রাবাদের রঙ্গীপাড়ায় একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হয় দেড় বছরের শিশু ইয়াছিন আরাফাত। এর ১৬ ঘণ্টা পর নালার আবর্জনার নিচ থেকে ইয়াছিনের মরদেহ উদ্ধার হয়।
তার আগে গত বছরের ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেহপুর ইসলামিয়া হাটসংলগ্ন বাদামতলা এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী নিপা পালিতের (২০)।
এর বছর দুই আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন নগরীর মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও এর এক যাত্রী নিহত হন।
ওই বছরের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুর মোড়ে জলাবদ্ধতার মধ্যে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। তার মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকায় ফুটপাত ধরে হেঁটে যাবার সময় রাস্তা থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার।
এরপর ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর একই খালে তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন। তিন দিন পর নগরীর মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
বোয়ালখালীতে খালে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু
বোয়ালখালী উপজেলায় খালের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া মো. মনসুর আলম (৬০) উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উজির আলী চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা।
সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ছন্দারিয়ার খালের পোপাদিয়া বাদুড়তলা এলাকায় স্থানীয়রা মনসুর আলমকে ভাসতে দেখেন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা বলেন, বৃদ্ধ মনসুর আলম খালে জাল দিয়ে মাছ ধরতেন। তিনি খাল থেকে জাল টেনে তোলার সময় পানিতে পড়ে যান। তার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে।
বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় লোকজন এক ব্যক্তিকে খাল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি পানিতে ডুবে মারা গেছেন।