নতুন শহীদ মিনারের নকশা নিয়ে আপত্তি আছে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের।
Published : 19 Feb 2024, 07:10 PM
চট্টগ্রাম নগরীতে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠের অস্থায়ী শহীদ মিনারে এবারও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
সোমবার নগর ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক কর্মী, সংস্কৃতি কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে করা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “নির্মাণাধীন শহীদ মিনার দৃশ্যমান না হওয়া এবং সিঁড়ি সংকীর্ণ ও বয়োবৃদ্ধদের চলাচলের উপযোগী না হওয়া নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। এ বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় তা বোঝার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা একটি কমিটি করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি।
“কমিটির মতামত ও আজকের সভায় উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলো, গতবারের মতো এবারও শহীদ দিবসে মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করব।”
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মেয়রের সঙ্গে দেখা করে বিশেষজ্ঞ কমিটি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দৃশ্যমান করতে, মিনারের উচ্চতা বাড়াতে এবং প্লাজার ওপরের বেদিতে ওঠানামা সহজ করতে ১০টি সুপারিশ দেয়।
এর মধ্যে আছে- শহীদ মিনারের চারটি স্তম্ভের উচ্চতা বাড়ানো, বেদি আরো দেড় ফুট উঁচু করা, প্লাজার দুইপাশের দেয়ালগুলোর উচ্চতা কিছুটা হ্রাস করা অথবা পারফোরোটেড টাইপ (ছিদ্রযুক্ত) করা এবং প্লাজার দক্ষিণ পূর্বের উন্মুক্ত মঞ্চের পেছনে থাকা গ্রিনরুমের দেওয়ালের উচ্চতা ৬ ফুট রেখে অবশিষ্ট অংশ অপসারণ করা।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের মধ্যে আরো আছে, দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকা ‘লিলি পন্ড ওয়াটার বডি’ অপসারণ, মূল বেদীর দুই পাশে বাঁকানো গাইড ওয়ালের উচ্চতা কমানো, পূর্ব পাশের প্রবেশ র্যাম্প ও সিঁড়ির মধ্যকার দেয়াল অপসারণ করে পূর্ণাঙ্গ র্যাম্প করা।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। তখন ব্যয় ধরা হয় ২৩২ কোটি টাকা। পরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে হয় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আওতায় ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন, ৮ তলা মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভবন ও নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর এক সভায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষরা নতুন শহীদ মিনারের ডিজাইন নিয়ে আপত্তি জানান। সেই প্রেক্ষিতে ২ ডিসেম্বর আরেকটি সভা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আপত্তি হলো, নতুন শহীদ মিনারটি নিচের সড়ক থেকে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া প্লাজার দু’পাশ থেকে বেদিতে ওঠার সিঁড়ি অপ্রশস্ত, যা জাতীয় দিবসে বড় জন সমাগমের উপোযোগী নয়।
সোমবারের সভায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, ১৪ দলীয় জোট নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দুনন্দন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ডেপুটি কমান্ডার নুরউদ্দিন ও কালাম চৌধুরী, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসিনা আক্তার, কলামিস্ট মাসুম চৌধুরী, নাট্যজন সুচরিত দাশ খোকন, সমাজসেবী দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, অলক ঘোষ, রাশেদ হাসান, প্রণব চৌধুরী।
সভায় অংশ নেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, কলিম সরওয়ার, চৌধুরী ফরিদ ও হাসান ফেরদৌস।
পুরনো লিংক-
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ৩ সমস্যা চিহ্নিত
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ‘দৃশ্যমান’ করার প্রস্তাব
নতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স: চট্টগ্রাম শহীদ মিনার ‘আপাতত’ সরানোর প্রস্তাব