“সেই শক্তি আবার দেশে ১৫ অগাস্ট, জেল হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে চায়,” বলেন তিনি।
Published : 17 Jun 2023, 08:05 PM
বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বানাতে ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণেই আজ দেশের অগ্রগতি। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল।
“যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের দোসররা এই বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়। মিনি পাকিস্তান বানানোর জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা কিভাবে কথা বলছে- তা আপনারা দেখছেন।”
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়, যেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
ওই সমাবেশমুখী একটি মিছিল চট্টগ্রাম কলেজের ফটক অতিক্রমের সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে জামালখানে ডা. খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়ের দেয়ালে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্মের আলোকচিত্র নিয়ে তৈরি ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
মোজাম্মেল হক বলেন, “ঘৃণা জানাই গত পরশু মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার বীর চট্টলার মাটিতে যে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা তার। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শুধু নয়- জাতির পিতার ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে, তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের শাস্তি দাবি করছি।
“গত কয়েকদিন যাবৎ তাদের যে আস্ফালন দৌরাত্ম্য, স্বাধীনতাবিরোধীদের যে কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের আশকারায় হচ্ছে, সেটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠেছিল বলেই আমরা এদেশ স্বাধীন করেছিলাম। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং ৩ নভেম্বর জেলে জাতীয় নেতাদের হত্যা করেছিল। সেই শক্তি আবার দেশে ১৫ অগাস্ট, জেল হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে চায়।
“আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিছি। ট্রেনিং জমা দিইনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই তাদের রাজনৈতিক কবর রচনা করতে হবে।”
মোজাম্মেল হক বলেন, “আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ও শহীদদের নামে নামকরণ করতে। সেটা করা হবে।
“ইতিমধ্যে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে। বীরের কণ্ঠে বীরগাঁথা। ৯ মাস কোথায়, কিভাবে ছিলেন তা যেন রেকর্ড করা যায়। সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য সেখানে থাকবে। বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা পাঠান। সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাবেশে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেন, “৯টি বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ হবে। চট্টগ্রাম দিয়েই আজ শুরু হল। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় সমাবেশ হবে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
সাবেক এই নৌমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা শুরু হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি সরকার উৎখাতের চক্রান্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল। তখন বিএনপির জন্ম হয়নি। গত বুধবার চট্টগ্রামে বিএনপির কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করেছে।”
জামালখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে ২১ জুন দেশের সব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ও ইউএনও কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।
সমাবেশের উদ্বোধক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বক্তব্য রাখেন হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম।
পরে বিকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নগরীর জামালখানে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ম্যুরাল ভাংচুরের স্থান পরিদর্শন করেন।