ওই দম্পতির সন্তানকে নানির জিম্মায় দিতে আদালত আদেশ দিয়েছে।
Published : 11 Jun 2024, 03:23 PM
প্রেমে জড়িয়ে চার বছর আগে যার হাত ধরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ইয়াসমিন, সেই জোবাইরের হাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে চট্টগ্রামের এই তরুণীকে।
চকবাজার থানার চাঁন মিয়া মুন্সী রোড এলাকার তালাবন্ধ একটি বাসা থেকে গত ২৩ মে ইয়াসমিন আক্তারের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সন্তানসহ নিরুদ্দেশ ছিলেন স্বামী জোবাইর উল্লাহ (৩১)।
এই যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, বিয়ের পর চেনা মানুষকেও অচেনা ঠেকে ওই তরুণীর কাছে, শুরু হয় জোবাইরের নির্যাতন। সেই নির্যাতন থেকে বাঁচতে আদালতে দুইবার মামলা ঠোকেন ইয়াসমিন।
স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা আর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ইয়াসমিনকে খুন করে জোবাইর পালিয়েছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জোবাইর তার স্ত্রীকে খুন করে তিন বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে সন্তানকে আনোয়ারা উপজেলায় বোনের বাড়িতে রেখে নিজে চলে যান কক্সবাজারের মহেশখালীতে।
সম্প্রতি জোবাইর বোনের বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে রোববার আনোয়ারা উপজেলার মালঘর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার জোবাইর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান ওসি।
ইয়াসমিনের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, ইয়াসমিনের স্বামী জোবাইর ওই দিন সকালে ঘরের মালিককে ফোন করে জানান, আগের রাতে তারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। তখন তিনি তার স্ত্রীকে মারধর করেন। বর্তমানে ইয়াসমিন কী অবস্থায় আছে তা দেখতে বলেন।
“বাড়ির মালিক পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর পুলিশ গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে।”
ইয়াসমিনের পরিবারের বরাতে ওসি আকবর বলেন, “নগরীতে পোশাক কারখানায় চাকরির সুবাদে জোবাইরের সাথে ইয়াসমিনের পরিচয় হয়। সেই সূত্রে চার বছর আগে তারা বিয়ে করেছিল। তাদের তিন বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে।
“বিয়ের কিছু দিন পর থেকে জোবাইর বিভিন্ন অজুহাতে ইয়াসমিনকে মারধর করতেন এবং পরকীয়ায় আসক্ত হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগে ছিল।”
পুলিশ কর্মকর্তা আকবর বলেন, স্বামীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে ইয়াসমিন ২০২১ সালের শেষে আদালতে জোবাইরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু মামলা পরিচালনা না করায় সেটি খারিজ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে আরেকটি মামলা করেছিলেন ইয়াসমিন। এসব নিয়ে জোবাইর তার স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
ইয়াসমিনের মা ফাতেমা বেগমের ভাষ্য, ২২ মে রাত সোয়া ৯টার দিকে ইয়াসমিন তাকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, জোবাইর মারধর করছে এবং মামলায় হাজিরা দেওয়ার আগে খুন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
ওসি আকবর জানান, জোবাইর ২৩ মে সকাল ৯টার দিকে জোবাইর তার বাড়িওয়ালাকে ফোন করে বাসায় খোঁজ নিতে বলেন এবং কোন জায়গায় ঘরের তালার চাবি আছে সেটাও জানিয়ে দেন।
তখন বাড়িওয়ালা ইয়াসমিনের নিথর দেহ দেখে এবং বিছানার চাদর বালিশ অগোছালো দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে ইয়াসমিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই দম্পতির সন্তানকে নানির জিম্মায় দিতে আদালত আদেশ দিয়েছে বলে জানান ওসি।