“তারা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে। তবে যাতে সেগুলো এদিকে ফিরে না আসে আমরা সে চেষ্টাটা আমরা করছি।”
Published : 14 Apr 2025, 05:34 PM
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেডে (কেইপিজেড) এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তোলা হাতির পালটি বনাঞ্চলের দিকে চলে গেছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত চার দিনে তিনটি হাতি শঙ্খ নদী পার হয়ে বাঁশখালীর দিকে চলে গেছে।
বিভাগের উপ বন সংরক্ষক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন. “গত বৃহস্পতিবারের দিকে দুইটা এবং রোববার ভোর চারটার দিকে সর্বশেষ হাতিটি নদী পার হয়ে চলে গেছে। এছাড়া পালের আরেকটি হাতি এলাকা ছেড়েছিল আগেই।”
যেহেতু হাতির দলটি নিজের ইচ্ছায় এলাকা ছেড়েছে, তাই তারা ফের লোকালয়ে ফিরে আসবে না, সেটি নিশ্চিত করে বলছেন না এই বন কর্মকর্তা।
ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, “তারা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে। তবে যাতে সেগুলো এদিকে ফিরে না আসে আমরা সে চেষ্টাটা আমরা করছি।”
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়ন এবং আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে কোরিয়ান এক্সেপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে।
দেয়াং পাহাড় ঘেরা ওই এলাকায় ২০১২-১৩ সাল থেকেই হাতির আনাগোনা বেশি। আগেও হাতির আসা-যাওয়া ছিল, তবে তখন তুলনামূলক কম ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের ভাষ্য।
২০১৮ সালের শেষ দিকে হাতির একটি দল স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ওই এলাকায় চারটি হাতির আবাসস্থল, যেগুলো তাণ্ডব চালায়; এলাকাবাসীরা সবসময় আতঙ্কে থাকেন। ধান ও কলা গাছসহ খাবারের খোঁজে প্রায় রাতেই হানা দেয় হাতি।
কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এবং আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারখাইন, বটতলী ও বারশত; কয়েকটি ইউনিয়নে বেশ কয়েক বছর ধরে হাতির দলটি ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে চাষের ফসল ক্ষতির পাশাপাশি হাতির তাণ্ডবে গত কয়েক বছরে নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে গত সাত মাসে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২১ মার্চ রাতে কর্ণফুলী উপজেলার শাহ মীরপুর এলাকায় এক বাড়িতে বন্যহাতি হানা দেয়। এসময় হাতি তিন মাস বয়েসী এক শিশুকে শুঁড় দিয়ে আছড়ে ফেলে।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর দক্ষিণ শাহ মীরপুর, ১১ সেপ্টেম্বর দৌলতপুরে, ২৩ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় মো. কাশেম ওরফে দুলাল (৬০) এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খোশাল তালুকদার বাড়ি এলাকায় রেহানা বেগম (৩৮) হাতির আক্রমণে মারা যান।
এর আগে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি আনোয়ারা উপজেলার বটতল নূরপাড়া এলাকায় হাতির আক্রমণে ৭০ বছর বয়েসী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
হাতি সরোনোর দাবিতে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন সময়ে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
গত ২২ ও ২৭ মার্চ হাতি সরানোর দাবিতে কেইপিজেড গেইটে আনোয়ারা পিএবি সড়কে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় লোকজন।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেইপিজেড এলাকায় দুটি পুরুষ ও দুটি মাদি হাতিসহ মোট চারটি প্রাপ্ত বয়স্ক হাতি ছিল।
উপ বন সংরক্ষক ইয়াছিন নেওয়াজ জানিয়েছেন, হাতিগুলো কেইপিজেড এলাকায়ও অবস্থান করে শুধু পানির জন্য। সেখানেও তারা খাবার সংকটে ভুগে। শুধু জলাধার থাকায় সেগুলো এদিকে চলে আসে। কারণ পানিতে হাতি খুব আরামে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, বাঁশখালী, চুনতি এসব সংরক্ষিত বনে পর্যাপ্ত জলাধার নেই। প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর আয়তনের বনাঞ্চলে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়টা জলাধার আছে। কিন্তু সেখানে দরকার অন্তত ৩০টি জলাধার।
তিনি বলেন, “বনাঞ্চলে জলাধার পেলে হাতিগুলো কেইপিজেডের দিকে আসত না।”
ইয়াছিন নেওয়াজ জানিয়েছেন কেইপিজেড এলাকায় তাদের প্রশিক্ষিত এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) আছে।
“তাদের আমরা এখনও নদীর ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছি। ইআরটি সদস্যরা দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মচারিরা সমন্বিত ভাবে বাঁশখালীর পুকুরিয়ার জনসাধারণের সাথে কথা বলছে। হাতিগুলো এদিকে আসতে চাইলে যেন আসতে না দিয়ে উল্টো পাঠিয়ে দেয় সে কাজ করতে বলা হচ্ছে।”