গত মাসে একদিনের ব্যবধানে পরপর তিনটি মা মাছের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর আরও একটি মৃত কাতলা মাছ মিলেছে হালদা নদীর রাউজান অংশে।
বুধবার সকালে মোবারকখিল এলাকার সোনাইরমুখ স্লুইসগেটের কাছে শাখা খালে মাছটির সন্ধান পায় হালদা পাড়ের বাসিন্দারা। পরে মৃত মা মাছটি সেখানে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
বর্ষীয়ান মৎস্যজীবী কামাল সওদাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হালদার শাখা খালে মাছটি মরে ভেসে উঠেছিল। এটি ৩ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন ১০ কেজি ৭০০ গ্রাম। শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না।”
হালদা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন- আইডিএফ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতিতে মাছটি উদ্ধার করা হয়।
রাউজানের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাছটি পচে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।”
মাছটির বয়স নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মাছের বয়স নির্ধারণের জন্য আঁশ পরীক্ষা করতে হয়। এরআগে এরকম কয়েকটি মৃত মাছের আঁশ আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরিকে দিয়েছিলাম পরীক্ষার জন্য।”
এর আগে গত ২৬ জুলাই সকালে হালদা নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাটে ১২ কেজি ওজনের এবং একই দিন বিকালে সাত্তারঘাটে ১০ কেজি ওজনের মৃত মা মাছ পাওয়া গিয়েছিল।
তার আগে ২৫ জুলাই সকালে নদীর কাগতিয়া স্লুইস গেট এলাকায় ৯ কেজি ওজনের আরেকটি কাতলা মাছ পাওয়া যায়।
সেসময়ও মৃত মা মাছগুলোর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাই অল্প সময়ের ব্যবধানে চারটি মা মাছের মৃত্যু হলেও এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না মৎস্য বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা।
শুধু মা মাছই নয় মাঝে মাঝেই মৃত ডলফিনও মিলছে হালদায়। সবশেষ গত ২০ জুলাই রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় সাড়ে সাত ফুট লম্বা একটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়।
এরআগে ১৪ জুলাই রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরা এলাকায় হালদার সংযোগ খাল বুড়িসর্তায় প্রায় সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ১২০ কেজি ওজনের আরেকটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়।
এ নিয়ে গত সাড়ে তিন মাসে ৫টি মৃত ডলফিনের সন্ধান পাওয়া গেল। গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে হালদা ও কর্ণফুলী নদী এবং সংলগ্ন শাখা খালে সাতটি মৃত ডলফিন মিলেছিল।
নদীতে চলাচলকারী বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের আঘাতে এসব ডলফিন মারা পড়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
আগের মত বালুবাহী ড্রেজার না চললেও হালদায় মা মাছ শিকারের জন্য জাল পাতা হয়। পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষায় বসানো ব্লকে এবং নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লেগেও ডলফিন মারা যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রামের রাউজান, হাটাহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা হালদা নদীতে মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় ভারি বর্ষণে (এপ্রিলের শেষ বা মের শুরুতে) পাহাড়ি ঢল নামলে এবং অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথি থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেসময় নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা।
আরও খবর