এবার হালদায় তিন মৃত মা মাছ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রে গত সপ্তাহে মিলেছিল তিনটি মৃত ডলফিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2022, 03:42 PM
Updated : 26 July 2022, 03:42 PM

হালদা নদীতে এবার একদিনের ব্যবধানে তিনটি মৃত মা মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে।

চলতি বছর এই প্রথম হালদায় কোনো মৃত মা মাছের সন্ধান মিলল। তবে একদিনের ব্যবধানে তিনটি কাতলা মাছের মৃত্যুকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার সকাল ও সন্ধ্যায় হালদা নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট এবং সাত্তারঘাট এলাকায় দুটি মৃত কাতলা মাছের সন্ধান পায় স্থানীয়রা। এরমধ্যে নয়াহাটের মাছটি প্রায় ১২ কেজি ওজনের এবং সাত্তারঘাটেরটি ১০ কেজির।

এর আগে সোমবার সকালে নদীর কাগতিয়া স্লুইস গেট এলাকায় ৯ কেজি ওজনের আরেকটি কাতলা মাছ পাওয়া যায়।

মৃত মা মাছগুলোর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি মৎস্য বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে মা মাছের মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ জানাতে পারছেন না তারা।

রাউজান উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মৃত মাছগুলোর দেহে কোনো আঘাত নেই। সম্ভবত তিনটি মাছ একই দিনে মারা গেছে। ভিন্ন সময়ে ভেসে উঠেছে বা পাওয়া গেছে। তিনটি মাছেই পচন ধরেছে।

“সকালে মৃত মাছটি পাওয়ার পর আমরা সারাদিনই নদীতে ছিলাম। সাত্তারঘাট এলাকায় বিকেলে একটি শিশু শেষ মাছটি পায়।”

হালদায় এখন যান্ত্রিক নৌযান চলে না জানিয়ে পীযূষ প্রভাকর বলেন, “যদি বিষ প্রয়োগের কারণে মারা যেত, তাহলে নদীর কোনো একটি এলাকার সব মাছই মরে ভেসে উঠত। আর জালে আটকে শিকারিরা মাছ নিয়ে চলে যেত। সেক্ষেত্রে মৃত মাছ পাওয়া যেত না।

“কী কারণে মাছগুলো মারা গেছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভোগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলতি বছর ২৪ জুলাই পর্যন্ত কোনো মা মাছ মারা যায়নি। হঠাৎ করে দুইদিনে তিনটি মা মাছের মৃত্যু এলার্মিং।

“মাছগুলোর শরীরে কোনো ধরনের আঘাত নেই। বাহ্যিকভাবে দেখে ধারণা করছি, অক্সিজেন শূন্যতায় মাছগুলোর মৃত্যু হতে পারে। হয়তো নদীর কোনো কূমে বা বাঁকে চোরা শিকারিরা মাছ ধরার জন্য বিষ প্রয়োগ করেছিল। পরে মরে ভেসে ওঠায় এখন পাওয়া যাচ্ছে।”

এর আগে ১৪ জুলাই রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরা এলাকায় হালদার সংযোগ খাল বুড়িসর্তায় প্রায় সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ১২০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়।

এরপর ২০ জুলাই দুপুরের দিকে আজিমের ঘাট এলাকায় আরেকটি বড় আকারের মৃত ডলফিন ভেসে আসে। সেটির দাঁতসহ মুখের একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

সবশেষ ২১ জুলাই সকালে রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় মৃত ডলফিনটি ভেসে আসে।

মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, “এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি ডলফিন ও তিনটি মা মাছের মৃত্যু আশঙ্কার।”

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত হালদায় ৩৮টি এবং কর্ণফুলীতে দুটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে। অথচ হালদায় ডলফিন হত্যা বন্ধে উচ্চ আদালত থেকেও নির্দেশনা এসেছে।

হালদায় আগের মত বালুবাহী ড্রেজার না চললেও মা মাছ শিকারের জন্য জাল পাতা হয় নিয়মিত। পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষায় বসানো ব্লকে এবং নদীতে চলাচলকারী নৌযানের সাথে ধাক্কা খেয়েও ডলফিন মরতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা হালদা নদীতে মৌসুমের প্রথম বা দ্বিতীয় ভারি বর্ষণে (এপ্রিলের শেষ বা মের শুরুতে) পাহাড়ি ঢল নামলে এবং অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথি থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেসময় নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা।

পুরনো খবর:

Also Read: এক দিনের ব্যবধানে হালদায় মিললো আরেকটি মৃত ডলফিন

Also Read: হালদায় এক সপ্তাহে ভেসে এল দুটি মৃত ডলফিন

Also Read: হালদায় আরেকটি ডলফিনের মৃত্যু, কারণ অনুসন্ধানের পরামর্শ

Also Read: হালদায় মা মাছ শিকারে এখন ‘ফিক্সড ইঞ্জিন’

Also Read: হালদায় তৃতীয় দফা ডিম ছেড়েছে মা মাছ

Also Read: ডিম ছেড়েছে মাছ, পরিমাণে কম, পরের জোয়ারের অপেক্ষা হালদায়

Also Read: হালদায় হতাশা: ডিম ছাড়ায় 'ভাটা' যে কারণে