“আপনারা দয়া করে অছাত্র যারা, তাদের হল থেকে যার যার জায়গায় পাঠিয়ে দেন। তার তো কোনো যুক্তি নেই সেখানে থাকার। সে কোনো গ্রুপ না গ্রুপ এটা দেখার দরকার নাই। আপনি আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা পাবেন। দয়া করে সেটা করুন।”
Published : 19 Dec 2023, 05:47 PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ দূর করতে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাবে চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নওফেলের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় সভায় তারা এ বিষয়ে কথা বলেন।
সভায় তাদের দু’জনের কাছেই প্রশ্ন ছিল- মঞ্চে তারা পাশাপাশি হাসিমুখে বসে আছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ কয়েকদিন পরপরই মারামারিতে জড়ায়। এসব ঘটনায় তাদের নামও জড়ায়। এগুলো বন্ধে তারা উদ্যোগী হবেন কিনা?
শুরুতেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির পাল্টা হাসতে হাসতে বলেন, “কে জড়ায়? আপনারই তো জড়ান।”
এরপর পাশে বসা মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাগুলো হয়, নিয়মিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে যে রিপোর্ট দেয় মন্ত্রণালয়ে, সেখানে আমি আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট পাই, পড়ি। আমি ভিসি মহোদয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি, যাদের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ১০ বছরের ঊর্ধ্বে হয়ে গেছে আর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ৫ বছরের ঊর্ধ্বে হয়ে গেছে..একটা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি যে ১০ বছরের ঊর্ধ্বে লাগায়, সে শিক্ষার্থী না। সে ওখানে ফ্রি লজিংয়ের জন্য আছে। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না।
“আপনারা দয়া করে অছাত্র যারা, তাদের হল থেকে যার যার জায়গায় পাঠিয়ে দেন। তার তো কোনো যুক্তি নেই সেখানে থাকার। সে কোনো গ্রুপ না গ্রুপ এটা দেখার দরকার নাই। আপনি আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা পাবেন। দয়া করে সেটা করুন।”
সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, “ক্যাপাসিটি হচ্ছে তিন হাজারের। স্টুডেন্ট আছে ২৫ হাজার। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে জেলখানাতেও তো আপনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। পরিস্থিতি এখন সেটাই হচ্ছে। সেখানে যখন কোনো কাজ নেই, বেকার, পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছে। দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গাতে কিছু কিছু সংগঠন করছে, নাম দিচ্ছে, কতক্ষণ উনার (নাছির) নাম, কতক্ষণ আমার নাম।
“আবার এই দুই নামের মধ্যে ছোট ছোট অনেক নাম আছে। তারা একে অপরের সাথে টিজিংয়ের মত করে। অর্থাৎ এখানে বুলিং হচ্ছে সবচেয়ে বেশি, র্যাগিং হচ্ছে। র্যাগিং এবং বুলিংকে তারা রাজনৈতিক একটা রূপ দিচ্ছে। সিনিয়র জুনিয়রের সামনে হাত কেন নাড়ল, এটা নিয়ে মারামারি। এটাকে এখন নাম দিছে রাজনৈতিক মারামারি।”
নওফেল বলেন, “আমরা উপাচার্য মহোদয়কে বলেছি- জিনিসটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ধরে একটা শিক্ষার্থী ওখানে পরে থাকবে, ও কি করবে? ঘরে তো আর যাবে না। ওখানে গ্রুপ বানাবে। তারপর এটার পিছনে এক্স-ওয়াই-জেড লাগিয়ে নাম দিবে। সেটা নিয়ে সে চলছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা তো বেসিক ডিসিপ্লিনের বিষয়। শিক্ষার্থীরা যদি লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে এবং সেখানে এটাচ থাকে তার তো ক্রিমিনালিটি করার সময়-সুযোগ নেই।
“নির্বাচনের পরে আমরা চিঠি দিয়ে ইস্যুটা বলব। ভারবালি অনেকবার বলেছি। উপাচার্য মহোদয় এখনো আছেন। উনার মেয়াদও প্রায় শেষ। এটা যদি উনি করে যেতে পারেন সেটা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের পরিবেশে অনেক শৃঙ্খলা ফেরত আসবে।”
এরপর আ জ ম নাছির বলেন, “এখানে আমাদের মাননীয় ভিসি মহোদয়, উনাকে আমি অনেকবার বলেছি। এমনকি এটার সাক্ষী আমাদের জেলা পুলিশ সুপার, ডিআইজি মহোদয় আছেন। সবাইকে বলেছি। আর যে বিরোধগুলো হয়, নেগেটিভ সংবাদগুলো আপনাদের মাধ্যমে জাতি জানতে পারে।
“এগুলোতে একটা চুল পরিমাণে কোনো ধরণের রাজনৈতিক সংশ্লেষ বা আমাদের গ্রুপিংয়ের কোনো বিন্দু বিসর্গ সম্পৃক্ততা নেই। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। এটা তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথা বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটিকে নিতে হবে। আপনারা বিষয়টা যদি বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটিকে অবহিত করেন এক্ষেত্রে আমরাও রক্ষা পাব।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে দুই নেতার অনুসারীরাই বিভিন্ন পদে আসেন। এমনকি একবার এক নেতার অনুসারী সভাপতি হলে অন্য নেতার অনুসারী হয় সাধারণ সম্পাদক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের নেতৃত্ব চলছে। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পক্ষটি নিজেদের নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়। যদিও বারবার তিনি সেখানে তার কোনো পক্ষ নেই বলে দাবি করেন।
দুই পক্ষের অনুসারীরা আবার শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। এসব গ্রুপ পরস্পরের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়ায়। একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এসব ঘটনায় মামলা হয়, পুলিশ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়, তদন্ত কমিটি হয়, কমিটির সুপারিশের পর কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়, আবার তাদের শাস্তি মওকুফও করা হয়। এরপর আবার কোনো ইস্যুতে সংঘর্ষে জড়ায় বিবদমান পক্ষগুলো।