২০১৮ সালের ১৩ জুন ইফতারের দাওয়াতে গিয়ে শিশুটিকে নিসয়ে পালিয়ে যান সাখাওয়াত। দুদিন পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় সীতাকুণ্ড থেকে।
Published : 17 Mar 2025, 07:02 PM
সাত বছর আগে নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে চার বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকে অপহরণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন ও তার স্ত্রীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দণ্ডিতরা হলেন- মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন এবং তার স্ত্রী মোসাম্মৎ কমলা বেগম।
সাখাওয়াত নগরীর সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।
সোমবার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এই আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি শফিউল মোর্শেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুটিকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
একই আইনের ৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। উভয় সাজা একত্রে চলবে বলে আদেশ দিয়েছে আদালত।
আর আসামি মোসাম্মৎ কমলা বেগম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩০ ধারায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন বলেন, মামলার অন্য তিন আসামি আনোয়ারা বেগম, মোহাম্মদ বশির আহমেদ ও মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারা বেগম আসামি সাখাওয়াতের মা এবং অন্য দু’জন তার ভাই।
অপহরণের শিকার শিশুটি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তার বাবা সবজি বিক্রেতা।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামি সাখাওয়াত হোসেন ও তার স্ত্রী অপহরণের শিকার শিশুটির বাসায় সাবলেট থাকতেন। ঠিকমতো ভাড়া দিতে না পারায় ঘটনার বছরখানেক আগে তাদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন শিশুটির বাবা।
২০১৮ সালের ১৩ জুন সন্ধ্যায় ইফতারের দাওয়াতে ওই শিশুর বাসায় যান সাখাওয়াত। ইফতার শেষে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততার ফাঁকে শিশুটিকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে সাখাওয়াত শিশুটিকে বাইরে গিয়ে পালিয়ে যান। পরে শিশুটির বাবাকে টেলিফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা পতেঙ্গা থানায় সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনার দুদিন পর ১৫ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়ে সাখাওয়াতের স্ত্রীর হেফাজত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সেদিন সাখাওয়াতের স্ত্রী, মা ও ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। সাখাওয়াতকে ওই বছরের ১৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পতেঙ্গা থানার সেসময়ের এসআই মামুনুর রশীদ।
২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় আদালতে।
এই মামলায় পাঁচ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।