হালদার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকায় ফটিকছড়ি এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে।
Published : 25 Aug 2024, 09:48 PM
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির এখনো তেমন উন্নতি হয়নি; বরং শনিবার রাতের বৃষ্টির কারণে উল্টো চারটি ইউনিয়নে পানি বেড়েছে।
তবে ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের আশা, দুয়েক দিন পর পানি নামতে শুরু করবে।
হালদার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকায় ফটিকছড়ি এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ফটিকছড়িকে আবার বন্যা থেকে রক্ষা করতে হলে হালদার অরক্ষিত অংশে বাঁধ নির্মাণে বিকল্প নেই বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মীরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন রোববারও বন্যা কবলিত অবস্থায় আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। কিন্তু গতকাল রাতে ও আজকে সকালে বৃষ্টির কারণে ওচমানপুর, ইছাখালী, কাঠাছড়া ও মিঠানলা ইউনিয়নে পানি বাড়ছে।
“এতে করে মঘাদিয়া, খইছড়া ও মায়ানী ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয় কিনা তা নিয়ে সেখানকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।”
আগে থেকে বন্যা কবলিত ১২টি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি জানিয়ে ইউএনও বলেন, “সেনা সদস্যরা সব স্থানে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। সব এলাকায় মেডিকেল টিমও পৌঁছেছে। ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্রে আজও প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রিত আছেন।
“সকালের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই অংশে যান চলাচল করলেও বিকেল থেকে মহাসড়কের ওই অংশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। উভয়মুখী সড়কেই যানজটের কারণে গাড়ি চলতে পারছে না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেনী নদীর রামগড় অংশে পানি গতকালও বিপৎসীমার উপরে ছিল। আজ পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”
বৃষ্টি না থাকলে দুয়েক দিন পর মীরসরাইয়ের বন্যার পানি নামতে শুরু করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে চট্টগ্রামের উত্তরের আরেক উপজেলা ফটিকছড়িতে হালদা নদীর বাঁধ উপচে ও ভেঙে যে পানি ঢুকে পড়েছিল, তা রোববার কমলেও সব জায়গা থেকে পানি সরেনি।
বন্যায় উপজেলার ভুজপুর, নাজিরহাট পৌর সদর, বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়নহাট, পাইন্দং, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, সমিতির হাট, ভক্তপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হালদা নদীর পানি গত দুদিন ধরে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর প্রায় ৩৬ কিলোমিটার অংশে কোন বাঁধ নেই।
“এই বিশাল অংশ দিয়ে নদী উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে বাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা সদরের একটি অংশে স্থানীয়দের সহায়তায় ব্লক ফেলে আমরা বন্যা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিলাম। তা না হলে উপজেলাও ডুবত।”
ভবিষ্যতে ফটিকছড়িতে আকস্মিক বন্যা ঠেকাতে উপজেলার হালদা সংলগ্ন ৩৬ কিলোমিটার অংশে বাঁধ নির্মাণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন এই প্রকৌশলী।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, ফটিকছড়ির ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ফটিকছড়ি উপজেলার ১৯ হাজর ৫৮০ পরিবারের ১ লাখ দুই হাজর মানুষ এবং মীরসরাই উপজেলার ৪০ হাজার পরিবারের ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত জেলার বন্যা দুর্গতদের মাঝে ১৯১ টন চাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী ও বিজিবির পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ বিতরণ করছে।
এদিকে রোববার সকালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের স্পিলওয়ের ১৬টি গেট খুলে প্রতিটি দিয়ে ৬ ইঞ্চি পরিমাণ পানি ছাড়া হয়। তবে ছয় ঘণ্টা পর বেলা ২টার দিকে আবার গেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছয় ঘণ্টার ওই পানি ছাড়ার কারণে সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে কোনো প্রভাব পড়েনি।
তবে বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিলে বন্যার শুরু থেকে থাকা কয়েকফুট উচ্চতার পানি রোববারও ছিল। রোববার বিলের পানির উচ্চতা কিছুটা কমেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সোহাগ তালুকদার বলেন, “কাপ্তাই বাঁধ থেকে যেটুকু পানি ছাড়া হয়েছে তাতে আপাতত কোনো প্রভাব লোকালয়ে পড়বে না।”