সব মামলার আসামিদের পক্ষে শুনানি না করতে আইনজীবীদের অনুরোধ করেন সমিতির সভাপতি।
Published : 01 Dec 2024, 07:42 PM
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে যত ঘটনায় মামলায়, সবগুলোতে তাকে আসামি করার দাবি জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবি তোলা হয়।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গন থেকে প্রথম শোকযাত্রা করা হয়। শোকযাত্রা শেষে আদালত ভবনের সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ হয়।
সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, “ইসকনের সন্ত্রাসী চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারের পর থেকে পর্যায়ক্রমে যে ঘটনাগুলো হয়েছে, সর্বোপরি আমাদের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় যেসব মামলাগুলো হয়েছে আজকের শোকসভা থেকে আমাদের দাবি হচ্ছে প্রতিটি মামলায় চিন্ময় দাশকে আসামি করতে হবে।
“সেদিনের ঘটনার জন্য পুলিশকে আমি দায়ী করেছি। অতীতে আমরা চট্টগ্রামে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করতে দেখেছি। কিন্তু পুলিশ ওই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কাউকে ভিড়তে দেয় নাই। কিন্তু চিন্ময় দাশকে যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো তখন চিন্ময়ের সন্ত্রাসী সমর্থকরা গাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল।”
তিনি বলেন, “সেদিন আমরা দেখেছি পুলিশের মাইক ব্যবহার করেছে। পুলিশের মাইক ব্যবহার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। চিন্ময় দাশের ওই বক্তব্যের পরে পর্যায়ক্রমে সব সন্ত্রাস, ভাঙচুর, মসজিদে হামলা, তাণ্ডব সর্বোপরি আমার ভাই আলিফকে হত্যা করেছে।
“গতকালকে মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি সমস্ত মামলায় চিন্ময় দাশকে আসামি করতে হবে। আমরা আইনজীবী সমিতি মানব না, চিন্ময় দাশকে যদি আসামি করা না হয়।”
নাজিম উদ্দিন বলেন, “আমাদের পরিষ্কার কথা, এই জঙ্গি সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা মনে করি, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে সকল ধর্মের নাগরিক থাকবে, কিন্তু উগ্রবাদী ইসকন থাকতে পারবে না।
“ইসকন সারাবিশ্বে অনেক দেশে নিষিদ্ধ। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব এই সন্ত্রাসী সংগঠন, জবরদলকারী, মানুষের জমি দখলকারী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হোক।”
তিনি বলেন, “যে হত্যা মামলা হয়েছে সেই হত্যা মামলার ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রয়েছে। এই হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে দেরি হওয়ার কথা নয়। যারা গ্রেপ্তার হয়নি তাদের গ্রেপ্তার করুন, বিচারের আওতায় আনুন। আলিফের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
“আমি অনুরোধ করব, চিন্ময় দাশসহ আমাদের সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যা মামলায় যারা আসামি গ্রেপ্তার হবেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি অনুরোধ করব এই মামলার শুনানিতে কেউ যাবেন না।”
এর আগে ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম।
ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়।
সেদিন আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় তারা বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন।
পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাংচুর ও জনসাধারণের উপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন নগরীর কোতোয়ালী থানায়।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বুধ ও বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের আদালত বর্জন ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। সপ্তাহ শেষে রোববার চট্টগ্রাম আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এদিকে আইনজীবী সমিতি বুধবার বেলা আড়াইটায় আইনজীবী আলিফের শোক সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এতে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন।