Published : 24 Aug 2023, 06:57 PM
চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন।
সিডিএ এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে রাখার প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত হয়েছে আজকের বোর্ড সভায়।
“আমাদের সভার সিদ্ধান্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সেটি অনুমোদনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।”
আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বন্দর নগরীর প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হতে পারে বলে প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন তার মেয়াদের শেষ সময়ে ২০০৯-১০ অর্থ বছরের বাজেটে নগরীর বিমানবন্দর থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
২০০৯ সালের ২৮ জুন দেওয়া সেই বাজেটে নগরীর এয়ারপোর্ট থেকে দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার, সদরঘাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ ও নদী শাসনের জন্যই ব্যয় ধরা হয়েছিল মোট আড়াই হাজার কোটি টাকা।
সেদিন সিটি করপোরেশনের পক্ষে এত বিশাল বাজেটের প্রকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, “স্বপ্ন দেখতে হয়। স্বপ্ন দেখলেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। অতীতেও অনেকে বলেছিল অনেক কিছু সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না। আমরা করে দেখিয়েছি। এখনও স্বপ্ন দেখছি। ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে।”
এর প্রায় ৯ বছর পর নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
এর আগে ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়া ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে এবং আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার সময় পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়ে হয় সাত বছর, আর ব্যয় বেড়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
চলতি বছরের নভেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেও এর র্যাম্পগুলো ২০২৪ সালের জুনে চালু করা হবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি ও বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্প কাজে বিলম্ব হয়।
সবশেষ ২০২২ সালের সংশোধিত প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টে পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া বন্দরের গাড়ি সহজে চলাচলের জন্য যথাযথ ‘ফাউন্ডেশন, সাব স্ট্রাকচার ও সুপার স্ট্রাকচার’ তৈরি করে নতুন নকশায় অ্যালাইনমেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়।
১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং- চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি জংশনে থাকবে থাকবে ২৪টি লুপ ও র্যাম্প।
এতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যেসব গাড়ি চলাচল করবে, সেগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সহজে নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে।
ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। সল্টগোলা থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত এলাকার কাজ শেষ পর্যায়ে।
দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনের অংশ পর্যন্ত কাজ বাকি। এখানকার বেশিভাগ পিলারের কাজ শেষ। বাকি কাজ চলমান।
পুরনো খবর
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: ৫ বছর পর নকশা বদলে ব্যয় বাড়ছে হাজার কোটি টাকা
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এগিয়েছে ৬৫%, বাড়ছে ভোগান্তির সময়
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: প্রকল্প বিলম্বিত, দুর্ভোগও দীর্ঘায়িত
পূর্বসূরিদের রক্ত যেন বৃথা না যায়: পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী