কয়েকশ লোক বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মন্দির লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং শনি মন্দিরে ভাঙচুর করে। অন্য দুই মন্দিরের ফটক ভাঙা হয়।
Published : 29 Nov 2024, 08:07 PM
চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিনটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর পাথরঘাটার হরিশ চন্দ্র মুন্সেফ লেইনে শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির, সংলগ্ন শনি মন্দির ও শান্তনেশ্বরী কালী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে মন্দির পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।
তারা বলছেন, কয়েকশ লোক বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মন্দির লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং শনি মন্দিরে ভাঙচুর করে। অন্য দুই মন্দিরের ফটক ভাঙচুর করা হয়।
তবে পুলিশ বলছে, দুইপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর একটি মন্দিরের ‘সামান্য’ ক্ষতি হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শান্তনেশ্বরী মূল মন্দির পরিচালনা কমিটির স্থায়ী সদস্য এবং হরিশ চন্দ্র মুন্সেফ লেইনের সর্দার তপন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরে নামাজের পর কয়েকশ লোকের একটা মিছিল আসে। এসময় তারা হিন্দু ও ইসকনবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।
“মিছিল থেকে দুর্বৃত্তরা শান্তনেশ্বরী মন্দিরের মূল ফটকের গেইটে আঘাত করতে থাকে, কোপায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় তারা শনি মন্দিরে ভাঙচুর চালায় এবং রক্ষা কালী মন্দিরেও হামলা চালায়। আশপাশের কয়েকটি দোকনেও হামলা হয়।”
সর্দার তপন দাশ বলেন, “অমাদের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ফোন দিলে দ্রুত তারা সেখানে আসে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
“দুপুরের আগে থেকেই মূল মন্দির এবং অন্য দুটি মন্দিরের সব ফটক বন্ধ করা ছিল। কোনো কারণ ছাড়াই মিছিল করে এসে এ হামলা চালানো হয়।”
কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্বৃত্তরা এসে মন্দিরে হামলার চেষ্টা করে। উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। এসময় দুর্বৃত্তরা ছোট একটি মন্দিরে হামলা করে। পুলিশ উভয়পক্ষের মাঝখানে থেকে পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণে আনে।”
বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান ওসি আবদুল করিম।
প্রেক্ষাপট
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
চিন্ময় দাশ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র। তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। তাকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সমর্থকরা আড়াই ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরায়।
ওইদিন বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।
তখন থেকেই চট্টগ্রামে এক ধরনের উত্তেজনার পরিবেশ চলছে, যদিও সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সবাইকে শান্ত থেকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন। এমনকি বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে।
আদালত সেররকম কোনো নির্দেশনা দেয়নি। আর ইসকন দাবি করেছে, আইনজীবী হত্যা এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনের সঙ্গে ইসকনের কেনো ‘সম্পৃক্ততা নেই’। চট্টগ্রামের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য ইসকন বাংলাদেশকে ‘অন্যায়ভাবে দায়ী’ করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে।