রনির বিধ্বংসী ফিফটির পর রংপুরের জয়

হার দিয়ে শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরু করল বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 05:37 PM
Updated : 6 Jan 2023, 05:37 PM

প্রথম ম্যাচ শুরু দিনের আলোয়, পরেরটি কৃত্রিম আলোয়। দুই ম্যাচের ব্যাটিংয়েও পার্থক্য হলো যেন দিন রাতের মতোই। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল করতে পারল না ৯০ রানও। কিন্তু পরের ম্যাচে রনি তালুকদারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রংপুর রাইডার্স পেল বড় সংগ্রহ। পরে শিশির ভেজা মাঠে বোলিং-ফিল্ডিংয়ের চ্যালেঞ্জও জিতে নিল তারা। তারকায় ঠাসা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান শুরু হলো হার দিয়ে।

বিপিএলের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের জয় ৩৪ রানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে রংপুর তোলে ১৭৬ রান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এই স্কোরের ভিত গড়ে দেন রনি তালুকদার। ৩১ বলে ৬৭ রানের ইনিংসের পথে অভিজ্ঞ ওপেনার ফিফটি করেন ১৯ বলে। বিপিএলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যা দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।

এই রান তাড়া করার শক্তি-সামর্থ্য কুমিল্লার ছিল কাগজে-কলমে। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান খুশদিল শাহর জায়গা হয়েছে এই ব্যাটিং লাইন আপে আট নম্বরে। এতটাই লম্বা ব্যাটিং অর্ডার। কিন্তু ২২ গজে সেই সামর্থ্যের ছাপ তারা রাখতে পারেননি। গুটিয়ে যায় তারা ১৪২ রানে।

টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বলেছিলেন, পরে বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জে নিতে বড় পুঁজি তাদের গড়তেই হবে। সেই লক্ষ্য পূরণে তাদের এগিয়ে নেন রনি তালুকদার।

৮.৫ ওভারে ৮৪ রানের উদ্বোধনী জুটিতে প্রায় দর্শক হয়ে থাকেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আরেক প্রান্তে রনি ব্যাট হাতে চালাতে থাকেন তাণ্ডব।

দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শুরুটা করেন নাঈম। তবে ওই ওভারেই দুটি বাউন্ডারিতে ছুটতে শুরু করেন রনি। এরপর তাকে আর থামাতে পারছিলেন না কুমিল্লার কোনো বোলারই।

স্পিন-পেস, সবকিছুতেই গুঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ফিফটিতে পৌঁছে যান পাওয়ার প্লের মধ্যেই! অভিষিক্ত তরুণ পেসার আশিকুর জামানকে টানা চার বাউন্ডারি মারার পথে পূর্ণ হয় তার পঞ্চাশ।

শেষ পর্যন্ত নবম ওভারে রনিকে থামান খুশদিল শাহ। টি-টোয়েন্টিতে আগের সর্বোচ্চ ৬৬ রান পেরিয়েই বিদায় নেন তিনি স্টাম্পড হয়ে। ৬৭ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি ১১টি, ছক্কা ১টি।

রনির বিদায়ের সময় নাঈমের রান ছিল ২২ বলে ১৫। সঙ্গীকে হারিয়ে তিনি একটু হাত খোলার চেষ্টা করেন। বাউন্ডারি মারেন পরপর দুই ওভারে। কিন্তু শুরুর মন্থরতা আর পুষিয়ে দিতে পারেননি। ফজলহক ফারুকির স্লোয়ার শর্ট বলে কাট করে ধরা পড়েন তিনি পয়েন্ট সীমানায়। ২৯ রান করতে পারেন তিনি ৩৪ বলে।

তিনে নামা শোয়েব মালিক অবশ্য শুরু থেকে ধরে রাখেন রানের গতি। তবে সিকান্দার রাজা আউট হয়ে যান একটি ছক্কার পরই। অধিনায়ক সোহান এরপর মালিকের সঙ্গে মিলে দলকে এগিয়ে নেন।

২৬ বলে ৩৩ রান করে রান আউট হন মালিক। সোহান অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ১৯ রান করে।

রান তাড়ায় কুমিল্লা প্রথম ৩ ওভারে ২৫ রান তুললেও এরপরই হজম করে ধাক্কা। চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল ইসলাম ফিরিয়ে দেন লিটন কুমার দাসকে (১২ বলে ১০)।

তিনে নেমে দাভিদ মালান শুরু করেন প্রথম বলেই বিশাল ছক্কায়। পরের ওভারে কুমিল্লা বাউন্ডারি পায় তিনটি। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন মালান (৯ বলে ১৭)।

তার বিদায়ে একটু থমকে যায় রানের গতিও। শুরুটা ভালো করলেও ওপেনার সৈকত আলি আউট হন ২১ বলে ১৬ করে। বাড়তে থাকে রানের চাপ।

অধিনায়ক ইমরুল কায়েস চারে নেমে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন বটে। তবে তাল মেলাতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। ২৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। বেনি হাওয়েলের বলে ১৫ রান করে আউট হয়ে যান সোহানের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে।

দ্রুত রান তোলার তাড়ায় ইমরুল কায়েস বিদায় নেন ২৩ বলে ৩৫ করে। পরে মোহাম্মদ নবি, খুশদিল শাহর মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানরা পারেননি ডানা মেলে দিতে। সাতে নেমে জাকের আলি ১৩ বলে ১৯ রান করে একটু কমান ব্যবধান। তার পরও রংপুর জিতে যায় যায় পরিষ্কার ব্যবধানেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৭৬/৫ (নাঈম ২৯, রনি ৬৭, মালিক ৩৩, রাজা ১২, সোহান ১৯*, হাওয়েল ৬, মেহেদি ২*; ফারুকি ৪-০-২৮-১, নবি ২-০-৩০-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-১, আশিকুর ৪-০-৪৭-০, খুশদিল ৪-০-২৫-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৩-১)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.১ ওভারে ১৪২ (সৈকত ১৬, লিটন ১০, মালান ১৭, ইমরুল ৩৫, মোসাদ্দেক ১৫, নবি ৫, জাকের ১৯, খুশদিল ১, মুস্তাফিজ ১, আশিকুর ০, ফারুকি ১*; রবিউল ৪-০-৩৩-২, ওমারজাই ৩-০-২৭-১, হাসান ৩.১-০-২০-৩, রকিবুল ১-০-৭-১, রাজা ৪-০-২৩-২, হাওয়েল ৪-০-১৬-১)।

ফল: রংপুর রাইডার্স ৩৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার।