শিপলির ছোবলে ৭৬ রানে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা

টানা দুই ম্যাচে ৭৩ ও ৭৬ রানে গুটিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা, রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 08:38 AM
Updated : 25 March 2023, 08:38 AM

ম্যাচের শেষ দিকে হঠাৎ তুমুল কৌতূহল। শ্রীলঙ্কা কি পারবে? ব্লেয়ার টিকনারের তিন বলের মধ্যে লাহিরু কুমারার ছক্কা ও চারে শেষ পর্যন্ত তারা পেরেই গেল! ভাববেন না ম্যাচ জিতে গেল। নিজেদের সবশেষ ওয়ানডেতে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৭৩ রানে। সেই স্কোর লঙ্কানরা পেরোতে পারল! তবে শেষ ওখানেই। ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরও একটি বিব্রতকর হার সঙ্গী হলো তাদের। হেনরি শিপলির ৫ উইকেটের সঙ্গে অন্য পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রেকর্ড ব্যবধানের জয়ে সিরিজ শুরু করল নিউ জিল্যান্ড। 

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ১৯৮ রানে গুঁড়িয়ে দিল নিউ জিল্যান্ড। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে আপাতত তারা উঠে গেল সবার ওপরে। 

ওয়ানডেতে লঙ্কানদের বিপক্ষে কিউইদের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। রানের হিসেবে আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১৫ সালে ডানেডিনে ১২০ রানের জয়। 

অকল্যান্ডে শনিবার নিউ জিল্যান্ড অলআউট হয় ২৭৬ রানে। উইকেটে পেস ও বাউন্স ছিল যথেষ্টই। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভয়ঙ্কর নয়। কিউইদের পুঁজি আদৌ নিরাপদ কি না, তা নিয়ে ধারাভাষ্যকক্ষে চলছিল আলোচনা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা স্রেফ ১৯.৫ ওভারেই গুটিয়ে যায় ৭৬ রানে। 

নিজেদের সবশেষ ওয়ানডেতেই গত জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ৭৩ রানে গুটিয়ে লঙ্কানরা ম্যাচ হেরেছিল ৩১৭ রানের রেকর্ড ব্যবধানে। 

নিউ জিল্যান্ডের বোলিং নায়ক হেনরি শিপলি। মাত্র চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নামা ২৬ বছর বয়সী পেসার লঙ্কান ব্যাটিং ধসিয়ে দেন ৩১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। 

আইপিএলের ছাড়পত্র দেওয়ায় নিউ জিল্যান্ড এই ম্যাচে পায়নি কেন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে, টিম সাউদি ও মিচেল স্যান্টনারকে। তবু জিততে বেগ পেতে হয়নি তাদের। 

ইডেন পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসে ছিল না কারও বড় রান কিংবা বড় জুটি। একমাত্র ফিফটি করেন ফিন অ্যালেন। তিনিও আউট হয়ে যান ৪৯ বলে ৫১ রান করে। একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি ৬৬ রানের। তবে কয়েকজনের কার্যকর ইনিংস ও জুটির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা মোটামুটি সংগ্রহ পায়। 

নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা ছিল আগ্রাসী। অভিষিক্ত ওপেনার চ্যাড বাওয়েস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেন ম্যাচের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে। প্রথম ৪ ওভারে রান আসে ৩৪। 

তবে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি বাওয়েস। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর নানা মোড় পেরিয়ে স্ত্রীর দেশ নিউ জিল্যান্ডকে আপন করে নেওয়া ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান ১৪ রান করে। 

এরপর ছোট ছোট জুটি হয়েছে, ব্যাটসম্যানরা থিতু হয়ে উইকেট হারিয়েছেন। পরের তিন জুটির রান ৩৫, ৩৭, ও ৩৯। 

চামিকা করুনারত্নের পুল শট ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে ২৬ রানে ফেরেন তিনে নামা উইল ইয়াং। ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে টানা দুই বলে ছক্কার পর করুনারত্নের বলে বাউন্ডারিতে অ্যালেন পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৭ বলে। তবে ওই ওভারেই থেমে যায় তার ইনিংস। 

অধিনায়ক টম ল্যাথাম ফেরেন ৫ রানেই। ফিফটির কাছে গিয়ে ড্যারিল মিচেল বিদায় নেন ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ রান করে। 

১৫২ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হয়ে একমাত্র ফিফটি জুটি গড়েন গ্লেন ফিলিপস ও অভিষিক্ত অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্র। তবে ফিফটি করতে পারেননি তাদের কেউই। ফিলিপসের ইনিংস শেষ হয় ৩৯ রানে। 

লোয়ার অর্ডারদের ব্যর্থতায় শেষ দিকে দলকে বলতে গেলে একাই টানছিলেন রবীন্দ্র। কিন্তু অভিষেকে ফিফটির সুবার পেয়েও তিনি আউট হয়ে যান ৪৯ রানে। নিউ জিল্যান্ড খেলতে পারেনি ৫০ ওভার। 

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন করুনারত্নে। 

শ্রীলঙ্কার রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে হেনরি শিপলিকে দুটি বাউন্ডারি মারেন পাথুম নিসানকা। তবে পরের ওভারে তিন রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান আরেক ওপেনার নুয়ানিন্দু ফার্নান্দো। পরের ওভারে নিসানকাকে বোল্ড করে শিকার শুরু করেন হেনরি। 

এরপর উইকেট হারায় তারা নিয়মিত বিরতিতে। কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি ২০ রান, সবচেয়ে বড় জুটি স্রেফ ১৫ রানের। 

১৬ বল খেলে শূন্য রানে ফেরেন কুসাল মেন্ডিস, অধিনায়ক দাসুন শানাকা পান 'গোল্ডেন ডাক।'

দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ১৮ রান দলের সর্বোচ্চ। এছাড়া দু অঙ্ক স্পর্শ করেন স্রেফ আর দুজন। 

প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ৪ উইকেট শিকারি শিপলি শেষ দিকে ফিরে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। 

শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ১৯.৫ ওভারে। ওয়ানডেতে এর চেয়ে কম ওভার খেলেছে তারা আগে একবারই। ২০০২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬.৫ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা (৭৮ রান)। 

ওয়ানডেতে লঙ্কানদের পঞ্চম সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটি। নিউ জিল্যান্ডের আগে সবচেয়ে কম ছিল ১১২ রান। 

শ্রীলঙ্কার সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার আশায় আরেকটু ধাক্কা লাগল এই হারে। সিরিজের পরের ম্যাচ মঙ্গলবার, ক্রাইস্টচার্চে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.৩ ওভারে ২৭৬ (বাওয়েস ১৪, অ্যালেন ৫১, ইয়াং ২৬, মিচেল ৪৭, ল্যাথাম ৫, ফিলিপস ৩৯, রবীন্দ্র ৪৯, শিপলি ৬, হেনরি ০, সোধি ১০, টিকনার ৬*; রাজিথা ৭.৩-০-৩৮-২, মাদুশাঙ্কা ৮-০-৫৮-১, কুমারা ১০-০-৪৬-২, করুনারত্নে ৯-০-৪৩-৪, হাসারাঙ্গা ১০-০-৬৭-০, শানাকা ৫-১-১৬-১)। 

শ্রীলঙ্কা : ১৯.৫ ওভারে ৭৬ (নিসানকা ৯, ফার্নান্দো ৪, কুসাল ০, ম্যাথিউস ১৮, আসালানকা ৯, শানাকা ০, করুনারত্নে ১১, হাসারাঙ্গা ২, রাজিথা ৫, মাদুশানকা ৪*; হেনরি ৬-২-১২-০, শিপলি ৭-০-৩১-৫, মিচেল ৩-০-১২-২, টিকনার ৩.৫-০২০-২)। 

ফল: নিউ জিল্যন্ড ইনিংস ১৯৮ রানে জয়ী। 

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে। 

ম্যান অব দা ম্যাচ: হেনরি শিপলি।