নাঈমের লড়িয়ে ইনিংস, তানভিরের আঁটসাঁট বোলিং

কক্সবাজারে বিসিএলের ম্যাচে উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের লড়াই জমে উঠল প্রথম দিনেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 12:53 PM
Updated : 25 Feb 2023, 12:53 PM

ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট! সেখান থেকে একটি ভালো জুটি। এরপর দ্রুত দুটি উইকেট! এভাবেই লড়াই চলল দিনজুড়ে। উত্তরাঞ্চলের একের পর এক ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হলেন, কিন্তু বড় স্কোরের আগেই তাদের থামালেন পূর্বাঞ্চলের বোলাররা। থামানো গেল না কেবল একজনকে। অভিজ্ঞতার ঝুলি মেলে ধরে দারুণ লড়াইয়ে দলকে টেনে নিলেন নাঈম ইসলাম।

বিসিএলের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে কক্সবাজারে প্রথম দিন শেষে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের রান ৬ উইকেটে ২৮৮।

তানজিদ হাসান তামিম, মাহমুদুল হাসান জয় ও নাসির হোসেন ৪০ ছুঁয়েও যেতে পারেননি ৫০ পর্যন্ত। ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তবে প্রায় ৫ ঘণ্টার লড়াইয়ে ২০৭ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থেকে যান নাঈম ইসলাম।

পূর্বাঞ্চলের পেসার আবু জায়েদ চৌধুরি ৩ উইকেট নিলেও ছিলেন ভীষণ খরুচে। বাংলাদেশ টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পেসারের ১৪ ওভার থেকে রান আসে ৯৩। দিনের সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে তানভির ইসলাম। সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এই বাঁহাতি স্পিনার লাল বলেও নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে ২ উইকেট নেন ৩০ ওভারে স্রেফ ৫৫ রান দিয়ে।

টস জিতে বোলিংয়ে নামা পূর্বাঞ্চল প্রথম বলেই দেখা পায় উইকেটের। আবু জায়েদ চৌধুরির ডেলিভারি ছিল বাজে, লেগ স্টাম্পের ওপর। সেটিকেই আলতো করে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন ব্যাটসম্যান তৌফিক খান তুষার, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় কাভারে।

তবে তানজিদ ও জয়ের দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই ধাক্কা দল সামলে ওঠে দ্রুতই। দুই ব্যাটসম্যানই বেশ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাড়াতে থাকেন রান। পূর্বাঞ্চলের বোলাররাও চাপ ধরে রাখতে পারেননি আলগা বোলিংয়ে। দ্বিতীয় উইকেটে ৯১ রানের জুটি গড়ে ওঠে ওভারপ্রতি পাঁচের বেশি রানে।

পেসার এনামুল হকের ইয়র্কারে তানজিদ এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে এই জুটি। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

একটু পর তানভিরের বলে প্রিয় ইনসাইড আউট শটের চেষ্টায় জয় ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৪২ রান।

পরের জুটি খুব বড় হয়নি। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব শুরুটা করেছিলেন ভালো। কিন্তু ২৪ রানে তাকে এলবিডব্লিউ করেন আবু জায়েদ। আমিনুল অবশ্য ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, বল তার ব্যাটে লেগেছে। আউট হওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।

দুই দলই তখন লড়ছে সমান তালে। উত্তরাঞ্চলের রান ৪ উইকেটে ১৩৭। সেখান থেকে লড়াইয়ে উত্তরাঞ্চলকে এগিয়ে নেন নাঈম। সঙ্গী হিসেবে পান নাসির হোসেনকে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জুটি গড়েন ৭০ রানের।

নাঈম বরাবরের মতোই ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন। বিপিএলে ভালো ফর্মে থাকা নাসির এগোতে থাকেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। ফিফটির কাছে গিয়ে নিজের পতনও ডেকে আনেন নিজে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে তানভিরকে ছক্কা মেরে ফিফটি করার চেষ্টায় ধরা পড়েন তিনি লং অনে। ৭ চারে ৪৬ রানে বিদায় নেন তিনি।

নাঈম এরপর জুটি গড়ে তোলেন মাহিদুলকে নিয়ে। এই দুজনের বন্ধন ৬৬ রানের। দ্বিতীয় নতুন বলে মাহিদুলকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ। পেছনের পায়ে বল লাগার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই হাঁটা দেন ৩৬ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান।

এত সব উইকেট পতনের মধ্যেই মনোযোগ না হারিয়ে দারুণ দৃঢ়তায় দিন পার করে দেন নাঈম। দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০তম সেঞ্চুরির আশায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বিসিবি উত্তরাঞ্চল: ৮৮.৪ ওভারে ২৮৮/৬ (তৌফিক ০, তানজিদ ৪৫, জয় ৪২, আমিনুল ২৪, নাঈম ৭৫*, নাসির ৪৬, মাহিদুল ৩৬, সানজামুল ৭*; রিপন ১৫.৪-৩-৪৯-০, আবু জায়েদ ১৪-০-৯৩-৩, এনামুল ১১-৪-৪১-১, তানভির ৩০-৮-৫৫-২, মুমিনুল ১০-১-২৬-০, আশরাফুল ৮-২-১৮-০)।