সাহসের অস্ত্রে ইংল্যান্ড-বধ

সাহসিকতা আর মানসিকতায় ছোট বদল এনেই বড় পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 04:26 AM
Updated : 13 March 2023, 04:26 AM

সময়ের প্রবাহে বদলে যায় কত কিছুই! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে। দিনের পর পর দিন সমালোচনা আর ট্রলের ঝড় পেরিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত হয়ে ওঠেন বড় ভরসা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধুঁকতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে ওঠেন জয়ের নায়ক। এই সবকিছুর পেছনে আছে মানসিকতা আর সাহসিকতা। এই জায়গায় ছোট পরিবর্তনেই বড় ফল মিলেছে বলে বিশ্বাস মিরাজের।

মিরাজ-শান্তদের হাত ধরেই বাংলাদেশ বধ করেছে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা প্রথম দুই ম্যাচেই।

ইংল্যান্ড যদিও সেরা দলকে পায়নি এখানে। অ্যালেক্স হেলস, লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম বিলিংস, জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুক নেই এই সফরে। স্রেফ ১৩ জনের মধ্য থেকে একাদশ বাছাই করতে হচ্ছে তাদের। ব্যাটিংয়ের গভীরতাও নেই খুব বেশি। তবে তার পরও তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। যারা আছেন এই দলে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে যাবে, খেলা শুরুর আগে এমন বিশ্বাস খুব বেশি লোকের ছিল না। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ভোগান্তি যে বরাবরের।

সেই বাংলাদেশই চমকে দিয়েছে। শুধু মাঠের ফলাফলেই নয়, বিস্ময় উপহার দিয়েছে তারা খেলার ধরনেও। ভয়ডরহীন ক্রিকেটের ছাপ রেখেছে তারা দুই ম্যাচেই। দুটি জয়েই ছিল অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের দারুণ মিশেল। সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদের মতো অভিজ্ঞরা যেমন পারফর্ম করেছেন, তেমনি শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, হাসান মাহমুদের মতো তরুণরাও মেলে ধরেছেন নিজেদের।

শান্ত প্রথম ম্যাচে ঝড়ো ফিফটির পর দ্বিতীয় ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলেছেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। হাসান মাহমুদ দুই ম্যাচেই বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে ডেথ ওভারে তার বোলিং আর দ্বিতীয় ম্যাচে জস বাটলারকে বোল্ড করা ইয়র্কার মনে থাকবে অনেক দিন। অভিষেক সিরিজে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও দুটি ম্যাচেই কার্যকর ব্যাটিংয়ে নিজের ছাপ রেখেছেন হৃদয়। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে মিরাজ গড়ে দিয়েছেন বড় পার্থক্য।

দ্বিতীয় ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ মিরাজ তুলে ধরলেন এই ব্যাপারগুলিই। সংশয় আর ভাবনার পিছুটান না রেখে সাহস নিয়ে খেলায় এই সাফল্য ধরা দিয়েছে বলে বিশ্বাস তার।

“এখন যারা খেলোয়াড় আছে, ইতিবাচকভাবে খেলছে। টি-টোয়েন্টি খেলাটা কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই যে আমি কীভাবে খেলব, ধরে খেলব নাকি এভাবে খেলব… এরকম না। এখানে কিন্তু প্রতিটা বলই ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হয়। সাহস নিয়ে ক্রিকেট খেলতে হয়। আমাদের খেলোয়াড় যারা আছে, সবাই শুধু মানসিকতাটা পরিবর্তন করেছে যে, আমাদের কীভাবে ম্যাচ পরিকল্পনা করব, কীভাবে খেলব। এভাবে হচ্ছে।”

সেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই শান্তর সঙ্গে খেলে আসছেন মিরাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়ক মিরাজের সহ-অধিনায়ক ছিলেন শান্তই। কিছু ম্যাচে শান্তও দিয়েছেন নেতৃত্ব। পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজনের শুরু ও এগিয়ে চলা ছিল দুই রকম। তবে শান্ত যেভাবে দুঃসময়কে জয় করেছেন, এখন হৃদয় যেভাবে আবির্ভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছেন উজ্জ্বল সম্ভাবনার, এসব কিছুই বড় পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন মিরাজ।

“কিছু তরুণ খেলোয়াড় আসছে। ওরাও ভালো ক্রিকেট খেলছে। যেমন তৌহিদ হৃদয়। ওর অভিষেক হয়েছে, কিন্তু মনে হয় না অভিষেকের মতো খেলছে। আপনি শান্তকে দেখেন। শান্তকে নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি, অনেক ধরনের বাজে মন্তব্যও করেছি। কিন্তু ও এখন ভালো ক্রিকেট খেলছে, সার্ভিস দিচ্ছে।”

“ও বাধা পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করেছে। ও কিন্তু ধারাবাহিকভাবে অনেকদিন ধরে ভালো খেলছে। বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে, বিপিএলে সর্বোচ্চ রান করেছে। তারপর এই সিরিজে খুবই ভালো খেলেছে। এই যে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলা, এগুলো কিন্তু দলকে সাহায্য করছে।"