ম্যাচ শুরুর অনেক আগে থেকেই ভারতীয় দর্শকদের উন্মাদনা মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের বাইরে।
Published : 19 Oct 2023, 02:00 PM
পথের অনেক দূর থেকেই মাঠমুখি লোকের স্রোত। স্টেডিয়ামের সামনে এসে দেখা গেল মোটামুটি জনসমুদ্র। ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানে প্রকম্পিত চারপাশ। ভিরাট কোহলি, রোহিত শার্মাদের নামে গলা ফাটানো তো আছেই। সব মিলিয়ে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের বাইরে উৎসবের আবহ। বিশ্বকাপের উন্মাদনা অবশেষে টের পাওয়া গেল!
লোকের আগ্রহের ঘাটতি, ফাঁকা গ্যালারি, এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে এবার বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। কিন্ত ভারতের ম্যাচ যে ব্যতিক্রম, সেটি আরেকবার টের পাওয়া গেল বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও। পুনে শহরে বা শহরে থেকে অনেক দূরের এই স্টেডিয়ামের আশেপাশে বিশ্বকাপের আঁচ ততটা টের পাওয়া যায়নি গত কয়েক দিনে। কিন্তু ম্যাচের দিনের চিত্রটা ভিন্ন।
ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা তিনেক আগেই মাঠের সামনে দেখা গেল লোকের ভিড়। তখনও স্টেডিয়ামের গেটই খোলেনি। লোকে তবু লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে বসে আছে রাস্তার পাশে। বেশির ভাগ দর্শকের গায়ে ভারতের জার্সি। কোহলি, রোহিতের নামে জার্সিই দেখা গেল বেশি। হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজার জার্সি গায়েও দেখা গেল অনেককে। অনেক আগে থেকেই দর্শকেরা ভিড় করায় মাঠের বাইরে খাবারের দোকানগুলিও জমজমাট।
এই বিশ্বকাপে ভারতের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। ভারতীয়দের প্রত্যাশা ও উত্তেজনাও তাতে বেড়ে গেছে আরও। দর্শকদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে তাদের আশার কথা জানা গেল। বাংলাদেশকে আজ গুঁড়িয়ে দেবে ভারত, এমনই চাওয়া তাদের।
সুনিল কুমার নামের এক দর্শক যেমন বললেন, “রোহিত আজকে বাংলাদেশে বোলারদের পিটিয়ে বোলিং করা ভুলিয়ে দেবে। লিখে রাখেন, আজকে সেঞ্চুরি করবে আমাদের অধিনায়ক।” ভিরাট কোহলির জার্সি পরা একজন পাশ থেকে চিৎকার করে বললেন, “রোহিত সেঞ্চুরি করবে কি না, জানি না। তবে ভিরাট নিশ্চিতভাবেই করবে।” অঙ্কিত রক্ষিত নামের আরেকজন বললেন, “রোহিত বা কোহলি কিংবা গিল, সেঞ্চুরি যে-ই করুক, আমরা খুশি। আমরা শুধু চাই, বাংলাদেশ যেন আজ দাঁড়াতেই না পারে।”
তবে ব্যতিক্রমী দর্শকও আছেন। মুম্বাই থেকে খেলা দেখতে আসা অভিমন্যু রাওয়াল যেমন লড়াই দেখতে চান, “ভালো ম্যাচ দেখতে চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি যেমন, একদমই একতরফা ছিল। খেলা দেখে মজাই পেলাম না। অবশ্যই চাই ভারত জিতুক। তবে আজকে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন হয়। বাংলাদেশ তো এমনিতে ভারতের বিপক্ষে ভালোই খেলে। কিন্তু বিশ্বকাপে এলে আর পারে না। আজকে অন্তত কিছুটা জমাতে যেন পারে খেলা।”
ভারতীয় দর্শকদের স্রোতে বাংলাদেশী সমর্থক পাওয়াই গেল না তেমন একটা।
বাংলাদেশের জার্সি গায়ে বিসিবির দু-একজন কর্মকর্তাকে দেখা গেল। নিলয় বিশ্বাস নামের একজনকে পাওয়া গেল বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। তিনি থাকেন বেঙ্গালুরুতে, তবে ঘুরে ঘুরে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি দেখছেন। চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড ম্যাচটি দেখেছেন। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন পুনেতেও। এই ম্যাচের টিকিট যদিও তার নেই। সাচিন টেন্ডুলকারের ভক্ত হিসেবে ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত সুধির কুমার তাকে একটি টিকিটের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুধির পারেননি টিকিট জোগাড় করতে। নিয়ল তাই হন্যে হয়ে একটি টিকট খুঁজছেন।
গ্যালারিতেও আজকে বাংলাদেশের সমর্থকদের পেতে হলে এভাবে হন্যে হয়েই খুঁজতে হবে। ৩৭ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারি আজকে নীল সমুদ্রে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তাই শুধু মাঠের ১১ ভারতীয়ই নয়, গোটা গ্যালারিও।