নিজেদের শেষ ম্যাচ শেষ করে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে যাচ্ছিলেন নাসির হোসেন। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড ও নর্দার্ন স্ট্যান্ড থেকে তখন ভেসে আসছিল স্লোগান, 'নাসির….নাসির'। সেদিকে তাকিয়ে নাসির বলে উঠলেন, 'দুই মাস আগেও শুধু দুয়ো শুনতাম।'
স্রেফ দুই মাসের ব্যবধানে দর্শকের আচরণ এভাবে বদলে দিয়েছেন আসলে নাসির নিজেই। বিপিএলের আগে তিনি অনেক দিন ধরেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। কিন্তু বিপিএলে ঢাকা ডমিনেটর্স ব্যর্থ হলেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। সেই সন্তুষ্টি তার আছে। তবে দল যে ভালো করেনি একদমই। টুর্নামেন্ট শেষে ঢাকার অধিনায়কের অনুভূতি তাই মিশ্র।
বিপিএলের গত আসরে খেলা হয়নি নাসিরের। এবার শুধু দলই পাননি, পেয়ে যান ঢাকার অধিনায়কত্বও। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তার এই দায়িত্ব পাওয়া নিয়েও ছিল ভ্রুকুটি। পারফরম্যান্স দিয়েই জবাব দিয়েছেন তিনি। এবারের আসরে ঢাকার সবচেয়ে সফল পারফর্মার তিনিই।
১২ ম্যাচে স্রেফ ৩টি জিতে প্রথম পর্বেই বিদায় নিয়েছে ঢাকা। মঙ্গলবার শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১১৯ রানের লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি তারা। উইকেট না পেলেও এ দিন ৪ ওভারে স্রেফ ১৫ রান খরচ করেন নাসির। পরে ব্যাটিংয়ে দলের সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন তিনি।
সব মিলিয়ে প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচে ৪৫.৪৫ গড়ে ৩৬৬ রান নাসিরের। পঞ্চাশ পেরিয়েছেন দুই ম্যাচে। শুরুর ছয় ম্যাচেই খেলেছেন ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। বল হাতে ওভারপ্রতি ৬.৮১ রান খরচায় তার শিকার ১৬ উইকেট। বোলিংয়ে এখন পর্যন্ত সবার ওপরেই তিনি, ব্যাটিংয়ে আছেন তিন নম্বরে।
ঢাকার তিন জয়ের প্রথমটি ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় ছিলেন নাসির। যদিও তার পারফরম্যান্স খুব প্রভাববিস্তারী ছিল না। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের প্রভাব খুব একটা পড়েনি ঢাকার দলীয় ফলে। তবু পরিসংখ্যানের দিক থেকে এবারের বিপিএলে নাসিরের একপ্রকার পুনরুজ্জীবনই ঘটেছে বলা যায়।
টুর্নামেন্টে ঢাকার শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্টি জানানোর পাশাপাশি নাসির শোনালেন উন্নতির তাগিদও।
“নিজের পারফরম্যান্স বলব, আলহামদুলিল্লাহ…! আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। আমি বলব যে, ভালো পারফরম্যান্স হয়েছে। তবে আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। যেমন আজকের ম্যাচটায় আমি জিতিয়ে বের হতে পারলে আরেকটু ভালো লাগত।”
“আরও কিছু ছোট ছোট জায়গা ছিল যেখানে উন্নতি করতে পারতাম। তবে সবমিলিয়ে আমি বলব যে বিপিএল (পারফরম্যান্স) ঠিক আছে।”
নিজের পারফরম্যান্স ছাড়াও মাঠের অধিনায়কত্বে দারুণ সম্পৃক্ত দেখা গেছে নাসিরকে। তবে বেশিরভাগ ম্যাচেই ফল পক্ষে না আসায় শেষ পর্যন্ত তিনি হতাশ।
“আমি সবসময় অধিনায়কত্ব উপভোগ করি। সবসময় দলের ভালোর জন্যই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত হয় বা ভুল কিছু হয়। আমি আমার তরফ থেকে শতভাগ চেষ্টা করি যেন দলের ভালো হয়। আমি খুশি হতাম যদি দল ভালো করত। যেহেতু ফল আসেনি, তাই আমি খুশি নই। আমার দল সেরা চারে থাকলে বলতে পারতাম খুশি।”