শিরোপার সুবাস পাচ্ছে রংপুর

দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে ১০ উইকেট হাতে রেখে ৮৮ রান প্রয়োজন তাদের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2022, 02:23 PM
Updated : 15 Nov 2022, 02:23 PM

জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২৪তম আসরে শিরোপার দুয়ারে পৌঁছে গেছে রংপুর বিভাগ। দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ রাউন্ডের ম্যাচে ড্র করলেই হবে তাদের। তবে সিলেট বিভাগের বিপক্ষে জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়েছে আকবর আলির দল।

বগুড়ার শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য স্রেফ ৮৮ রানের লক্ষ্য পেয়েছে রংপুর। দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৮ রানে গুটিয়ে গেছে সিলেট।

প্রথম ইনিংসে সিলেটের ১০৭ রানের জবাবে রংপুর করে ১৮৮ রান। ৮১ রানের লিড থাকায় দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন বড় লক্ষ্য তাড়া করতে হবে না রংপুরের। তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শুরু করবে তারা।

২০১৪-১৫ প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর। এরপর গত চার আসরে তিনবার হয় রানার্সআপ। এবার পঞ্চম রাউন্ড শেষেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায় তারা। পাঁচ রাউন্ড শেষে তিন জয়ে রংপুরের ছিল ২৮ পয়েন্ট। দুই নম্বরে থাকা সিলেটের ঝুলিতে রয়েছে ২১ পয়েন্ট।

৩ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে শেষ রাউন্ডের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে রংপুর। মিম মোসাদ্দেকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়ে ১৩১ রানের মাথায় ফেরেন নাসির হোসেন। তার ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান।

পরের ওভারে আউট হন ৩৮ রান করা মোসাদ্দেক। এরপর আর কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। ৫৭ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে লিড আরও বড় করতে পারেনি রংপুর।

সিলেটের পক্ষে চলতি লিগে প্রথমবার খেলতে নেমে ৫ উইকেট নেন ইবাদত হোসেন। রেজাউর রহমান রাজার শিকার ৪ উইকেট।

৮১ রানের পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই ইমতিয়াজ হোসেনকে হারায় সিলেট। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়েন তৌফিক খান তুষার ও প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে উঠে আসা নাসুম আহমেদ।

তৌফিক করেন ৩৬ রান। নাসুমের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রানের ইনিংস। পরের ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলে দ্বিতীয় ইনিংসেও বড় হয়নি সিলেটের সংগ্রহ।

রংপুরের পক্ষে বল হাতে আব্দুল্লাহ আল মামুন নেন ৪ উইকেট। এছাড়া সোহেল রানা ও রবিউল হকের শিকার ২টি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)

সিলেট ১ম ইনিংস: ১০৭

রংপুর ১ম ইনিংস: ৫৭.৩ ওভারে ১৮৮ (আগের দিন ১০৫/৩) (মোসাদ্দেক ৩৮, নাসির ৪১, আকবর ৫, আরিফুল ১৩, রিশাদ ৮, রবিউল ২, মুশফিক ১০, সোহেল ২*; ইবাদত ২০-৬-৩৮-৫, খালেদ ১৪-৪-৪৭-১, রাজা ১২.৩-৩-৩৭-৪, তানজিম ৬-০-২৮-০, নাসুম ৫-০-১১-০)

সিলেট ২য় ইনিংস: ৪৯.৩ ওভারে ১৬৮ (ইমতিয়াজ ১, তৌফিক ৩৬, নাসুম ৩৩, অমিত ১৯, জাকির ২০, জাকের ১৮, আল আমিন জুনিয়র ৪, তানজিম ১০, রাজা ১২, ইবাদত ৯, খালেদ ৪*; সোহেল ৮-২-২৬-২, রবিউল ১৩-৩-৩২-২, মুশফিক ৯.৩-০-৩৫-১, আরিফুল ১১-২-২৫-১, মামুন ৮-০-৪০-৪)

সৌম্যর বোলিং ঝলকের পর তানজিদের সেঞ্চুরি

খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে রাজশাহী বিভাগ। দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচে রাজশাহীকে ফলো-অন করিয়েছে খুলনা। তবে তানজিদ হাসানের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়ছে রাজশাহী।

দ্বিতীয় দিন শেষে রাজশাহীর সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২০২ রান। প্রথম ইনিংসে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল স্রেফ ৫৪ রানে। যা বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ।

২১২ পিছিয়ে থাকায় আবার ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় তাদের। তানজিদের অপরাজিত সেঞ্চুরির পরও ১০ রানে পিছিয়ে রয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

প্রথম দিন শেষ দিকে ৩ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় রাজশাহী। দ্বিতীয় দিন সকালেও চলতে থাকে আসা-যাওয়ার মিছিল। সৌম্য সরকারের বোলিং ঝলকে ৪৩ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।

সানজামুল ইসলামের অপরাজিত ১১ রানের সুবাদে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডের হাত থেকে মুক্তি পায় তারা।

২০১৩-১৪ মৌসুমে রংপুরের বিপক্ষে ৪৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ঢাকা মেট্রো। এর আগে ২০০৮-০৯ মৌসুমে চট্টগ্রামের বিপক্ষে খুলনা অলআউট হয় ৫৪ রানে।

খুলনার পক্ষে স্রেফ ৫ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন সৌম্য। জিয়াউর রহমানের শিকার ৩ উইকেট।

ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকান তানজিদ। দিন শেষে ৮ চার ও ৩ ছয়ের মারে ১০৮ রানে অপরাজিত রয়েছেন তিনি।

দিনের শেষ ওভারে ইমরুল কায়েসের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হন প্রীতম কুমার। ভাঙে ৯০ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)

খুলনা ১ম ইনিংস: ২৬৬

রাজশাহী ১ম ইনিংস: ২৬.৫ ওভারে ৫৪ (আগের দিন ৩/২) (তাইজুল ২, তানজিদ ১০, শান্ত ২, তৌহিদ ১১, প্রীতম ১৩, সানজামুল ১১*, মোহর ০, শফিকুল ০, নাহিদ ০; আল আমিন ৬-১-২১-২, আশিকুর ৬-০-১৪-১, জিয়াউর ৯-৩-১০-৩, সৌম্য ৪.৫-১-৫-৪, শেখ মেহেদি ১-০-৪-০)

রাজশাহী ২য় ইনিংস: ৫১.৪ ওভারে ২০২/৫ (ফলো-অন) (জহুরুল ২৫, জুনায়েদ ১৮, তানজিদ ১০৮*, শান্ত ১১, তৌহিদ ০, প্রীতম ৩১; আল আমিন ৯-১-৩১-০, আশিকুর ৮-০-২৭-১, জিয়াউর ৩-০-১৩-০, সৌম্য ১১-০-৪৯-২, নাহিদুল ৪-০-১৭-০, শেখ মেহেদি ১২-১-৪৪-১, রায়হান ৪-০-১৩-০, ইমরুল ০.৪-০-১)

ইয়াসিনের ৬ উইকেট, পারভেজ-জয়ের ফিফটি

বিকেএসপিতে প্রথম স্তরের ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে বড় লিডের পথে ছুটছে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৮৭ রান। তারা এগিয়ে গেছে ১৯২ রানে।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে চট্টগ্রাম অলআউট হয় ২০৩ রানে। জবাবে ঢাকাকে ১৯৮ রানে গুটিয়ে ৫ রানের লিড পায় তারা।

১ উইকেটে ৫৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল ঢাকা। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রান পেয়েছেন কেবল ওপেনার আব্দুল মজিদ। তার ব্যাট থেকে আসে ৬৭ রান। বাকিদের ব্যর্থতায় ১৫২ রানে ৯ উইকেট হারায় ঢাকা।

রিপন মন্ডলকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৪৬ রান যোগ করেন সুমন খান। ৭ চার ও ২ ছয়ের মারে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংসে দলকে দুইশর কাছাকাছি নিয়ে যান শেষ দিকের এ ব্যাটসম্যান।

চট্টগ্রামের পক্ষে ৬ উইকেট নেন ডানহাতি পেসার ইয়াসিন আরাফাত। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় ৫ উইকেট। এছাড়া হাসান মুরাদের শিকার ৩ উইকেট।

দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দীর্ঘদিনের রানখরা কাটিয়ে ফিফটি করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। সালাউদ্দিন শাকিলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৮ চারের মারে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৮ রানের পর যেকোনো পর্যায়ে ক্রিকেটে এটি তার প্রথম ফিফটি।

বাঁহাতি পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৪ রানের ইনিংস। দিন শেষে মুমিনুল হক ৩৭ ও শাহাদাত হোসেন ১২ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)

চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ২০৩

ঢাকা ১ম ইনিংস: ৪৫.৪ ওভারে ১৯৮ (আগের দিন ৫৩/১) (মজিদ ৬৭, মাহিদুল ১১, তাইবুর ৭, শুভাগত ২৪, নাদিফ ৪, সানি ৪, সুমন ৫০*, শাহবাজ ৫, সালাউদ্দিন ০, রিপন ৫; ইয়াসিন ১৫-২-৭১-৬, মেহেদি ১১-১-৩৭-০, মুরাদ ৯.৪-২-২৯-৩, নাঈম ১০-০-৪৮-১)

চট্টগ্রাম ২য় ইনিংস: ৫৮ ওভারে ১৮৭/৩ (পিনাক ৬, জয় ৭৩, পারভেজ ৫৪, মুমিনুল ৩৭*, মাহমুদুল ১২*; সুমন ১০-১-৩১-০, শাকিল ১০-১-৩৮-২, রিপন ৫-১-১০-০, শুভাগত ২০-৪-৫৩-১, শাহবাজ ৩-০-৬-০, তাইবুর ৭-০-৩৪-০, সানি ৩-০-১১-০)

কাজী অনিক-রকিবুলের ফিফটি, সালমানের ৫ উইকেট

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে ফিফটি হাঁকিয়েছেন ঢাকা মেট্রোর দুই বোলার রকিবুল হাসান ও কাজী অনিক। বল হাতে ৫ উইকেট নিয়েছেন বরিশালের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান সালমান হোসেন ইমন।

দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচটিতে দ্বিতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বরিশালের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০৩ রান। তারা এগিয়ে রয়েছে ৯২ রানে। প্রথম ইনিংসে বরিশালের করা ২১১ রানের জবাবে মেট্রো থামে ২২২ রানে। তারা পায় ১১ রানের লিড।

২ উইকেটে ১৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন খেলতে নেমে মেট্রোর স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছুই করতে পারেননি। প্রথম দিন শেষ বিকেলে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল খেলেন ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৩ রানের ইনিংস।

তবু স্রেফ ১৩২ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে মেট্রো। শেষ দুই উইকেটে আরও ৯০ রান যোগ করার মূল কারিগর বাঁহাতি পেসার কাজী অনিক। ব্যাট হাতে ৪ চার ও ৩ ছয়ে তিনিও করেন ৬৩ রান। ডানহাতি পেসার একেএস স্বাধীন অপরাজিত থাকেন ২১ রানে।

সালমান ৪৪ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট। বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার শিকার ৪ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে দিনের শেষ ভাগে সাজঘরে ফিরেছেন বরিশালের দুই ওপেনার আবু সায়েম চৌধুরী ও ইফতেখার হোসেন। ফজলে মাহমুদ রাব্বি ২৬ ও ইসলামুল আহসান ৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)

বরিশাল ১ম ইনিংস: ২১১

ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৫৭.২ ওভারে ২২২ (আগের দিন ১৯/২) (সাদমান ২৫, রকিবুল ৬৩, শামসুর ৫, আইচ ১৮, আমিনুল ৫, শরিফউল্লাহ ৪, কাজী অনিক ৬৩, স্বাধীন ২১, গালিব ৮*; রাব্বি ১৬-৩-৩৬-০, রুয়েল ১৯-২-১০৩-৪, সোহাগ ৬-১-৩১-০, সালমান ১৫-২-৪৪-৫, তানভির ১.২-০-৩-১)

বরিশাল ২য় ইনিংস: ৩০ ওভারে ১০৩/২ (আবু সায়েম ২৩, ইফতেখার ৩৯, ফজলে রাব্বি ২৬*, ইসলামুল ৬*; স্বাধীন ৩-১-১৩-০, গালিব ৭-১-৩২-০, রাকিবুল ৭-২-১২-১, কাজী অনিক ৭-১-২০-০, শরিফউল্লাহ ৬-০-২২-০)