নবীন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার স্পেন্সার জনসনের গতি ও স্কিলে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
Published : 22 Aug 2023, 01:16 PM
নেতৃত্বের অধ্যায় শুরুর আগে রোমাঞ্চ, ভালো লাগা এমনিতেই কাজ করছে মিচেল মার্শের মনে। অস্ট্রেলিয়ার নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ও ভারপ্রাপ্ত ওয়ানডে অধিনায়ক আরও বেশি উচ্ছ্বসিত দলের নতুনদের নিয়ে। বিশেষ করে স্পেন্সার জনসনকে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে বল হাতে ছুটতে দেখার অপেক্ষায় তর সইছে না তার। বাঁহাতি ফাস্ট বোলারকে যতটুকু দেখেছেন, তাতেই মুগ্ধতার শেষ নেই মার্শের।
সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মার্শ। প্যাট কামিন্সের চোটের কারণে ওয়ানডে সিরিজেও নেতৃত্ব চালিয়ে নেবেন তিনি। এই সফর দিয়েই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পেয়েছেন জনসন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে এই সময়ের আলোচিত নাম ২৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ফাস্ট বোলার।
গত বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত বোলিং করেই মূলত আলোচনায় উঠে আসেন জনসন। এরপর শেফিল্ড শিল্ড ও অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলেও ছাপ রাখেন নিজের সামর্থ্যের। সেই পথ ধরেই এখন তিনি জাতীয় দলে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে জনসনকে কিছুটা দেখে এবং তার বিপক্ষে খেলে মনে ধরে যায় মার্শের। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের ধারণা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নেবেন এই ফাস্ট বোলার।
“বেশ বড়সড় স্কোয়াড নিয়েই যাচ্ছি আমরা, বেশ কজন তরুণ ক্রিকেটার আছে দলে, যা রোমাঞ্চকর। স্পেন্সার জনসনের মতো ছেলেরা উঠে আসছে, সে নিশ্চিতভাবেই সুযোগ পাবে (মাঠে নামার)। তাকে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি দেখিনি আমরা, দেখেছি কি? ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কিছু চোটে ভুগতে হয়েছে তাকে। বলা যায়, গত বছরই দৃশ্যপটে নিজেকে মেলে ধরেছে সে।”
“আমার মনে আছে, একটি ম্যাচে (বিগ ব্যাশে) আমি ধারাভাষ্য দিচ্ছিলাম, সে (জনসন) বল করছিল ১৫০ কিলোমিটার গতিতে, পাশাপাশি সুইং করাচ্ছিল দুই দিকেই। সে অবিশ্বাস্য এক প্রতিভা। ওয়াকায় ওয়ানডে কাপের ফাইনালে তার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তার গতি ও স্কিলে মুগ্ধতায় ভেসে গেছি আমি। আমার ধারণা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও সে দ্রুত আপন করে নেবে।”
চোটের কারণেই মূলত অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে শীর্ষ পর্যায়ে আসতে এতটা অপেক্ষা করতে হয়েছে জনসনকে। ২০১৭ সালে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে একটি ম্যাচ খেলে তিনি এরকম হারিয়ে যান। পরে ২০২১ সালে আরও দুটি ম্যাচ খেলে আবার পড়ে যান আড়ালে।
অবশেষে গত বিগ ব্যাশ দিয়ে তিনি আলোয় আসেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবার খেলতে নেমেই। ব্রিজবেন হিটের হয়ে ১০ ম্যাচে তার উইকেট ছিল ৯টি। তবে শেষের ওভারগুলোয় দুর্দান্ত বোলিং করে তিনি নজর কাড়েন।
বিগ ব্যাশের পথ ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও শুরুটা হয় তার অসাধারণ। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও পরের ইনিংসে শিকার করেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৭ রানে নেন ৭ উইকেট! দ্রুতই জায়গা পান অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলে। সেখানে প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে উইকেট নেন ৪টি।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট ও কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলে এখন তিনি খেলছেন ইংল্যান্ডের দা হান্ড্রেড-এ। এই টুর্নামেন্ট খেলতেই জীবনে প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান তিনি। প্রথম ম্যাচেই ২০ বলে স্রেফ ১ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করে হইচই ফেলে দেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রাঙানোর অপেক্ষায়।
জনসন ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা সফর দিয়ে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছেন অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে গত বিগ ব্যাশের টুর্নামেন্ট সেরা হওয়া ম্যাথু শর্ট এবং ওই আসরেই দারুণ পারফর্ম করা পেস বোলিং অলরাউন্ডার অ্যারন হার্ডি। এছাড়াও সুযোগ মিলেছে লেগ স্পিনার তানভির স্যাঙ্ঘার।
আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকিয়ে তাদেরকেও যতটা সম্ভব সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে রাখলেন মার্শ। বিশেষ করে ২১ বছর বয়সী লেগ স্পিনার তানভিরকে নিয়ে তার অনেক আশা ভবিষ্যতের জন্য।
“আমার মনে হয়, এই সফরের কোনো পর্যায়ে অবশ্যই ওদেরকে পরখ করে দেখব আমরা। এটা দারুণ যে, ওরা পারফরম্যান্সের পুরস্কার পাচ্ছে। গত ৬ মাসে তানভিরকে চোটের কারণে বেশ ভুগতে হয়েছে। তবে আমরা জানি, সে কতটা প্রতিভাবান। কোনো সন্দেহই নেই যে আগামী কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ওদেরকে আমরা অনেক দেখতে পাব এবং এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও দেখব।”
“তানভির খুবই স্মার্ট এক তরুণ বোলার। আমি যা মনে করতে পারি এবং শুনেছি, সে খুব ভালো ক্রিকেটার, বলের পর বল করে যেতে পারে। দুর্দান্ত এক প্রতিভা। বিগ ব্যাশে ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা দেখেছি, কোনো কোনো ছেলেকে দেখলেই বোঝা যায়, সে দারুণ বোলার। তানভির তাদেরই একজন। তাকে সুযোগ পেতে দেখতে মুখিয়ে আছি আমি।”
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অস্ট্রেলিয়ার ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু ৩০ অগাস্ট। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর শুরু ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এই সফর শেষে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ভারতেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।