লাল বলের লড়াইয়ে ইতি টানছেন ওয়েড

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 05:44 AM
Updated : 15 March 2024, 05:44 AM

২০০৭ সালের অক্টোবরে যে পথচলার শুরু হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার হয়ে অ্যাডিলেইডে, ২০২৪ সালের মার্চে এসে তাসমানিয়ার হয়ে তা থেমে যাচ্ছে পার্থে। এবারের শেফিল্ড শিল্ড ফাইনাল দিয়েই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিচ্ছেন ম্যাথু ওয়েড। 

ঐতিহ্যবাহী এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল শুরু আগামী বৃহস্পতিবার। পার্থে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ওয়েডের তাসমানিয়া। এই ম্যাচ খেলার জন্য আইপিএলে নিজের অংশগ্রহণ পিছিয়ে দিয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যান। গুজরাট টাইটান্স দলের সঙ্গে তিনি যোগ দেবেন পরে।

শেফিল্ড শিল্ডের ফাইনালটি হবে তার ১৬৬তম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ১৯ সেঞ্চুরি ও ৫৪ ফিফটিতে রান করেছেন ৯ হাজার ১৮৩, ব্যাটিং গড় ৪০.৮১। ক্যারিয়ারে ক্যাচ নিয়েছেন ৪৪২টি, স্টাম্পিং করেছেন ২১টি।

জন্ম তার তাসমানিয়ায় হলেও প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছর খেলেছেন ভিক্টোরিয়ায়। পরে ২০১৭-১৮ মৌসুমে ফেরেন তিনি নিজ রাজ্যে। সেবার ফাইনালে ওঠে তাসমানিয়া। কিন্তু সেখানে তারা হেরে যায় কুইন্সল্যান্ডের কাছে। সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন অবশ্য ওয়েড। নিজ রাজ্যের হয়ে প্রথম শিরোপা সাফল্যের শেষ সুযোগ তার এবার।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তার টেস্ট ক্যারিয়ার থমকে ছিল গত তিন বছর ধরেই। সেটিরও আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হতে চলেছে।

তার টেস্ট ক্যারিয়ার ৩৬ ম্যাচের। ২৯.৮৭ গড়ে ১ হাজার ৬১৩ রান করেছেন তিনি ৪ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন ২২ টেস্ট, বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪টি। দুই ভূমিকাতেই শতরান দুটি করে।

২০১২ সালে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবেই তার টেস্ট অভিষেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। নবম টেস্টে তার ব্যাট থেকে শতরান আসে আরেকটি। এর মধ্যে ফিফটিও ছিল দুটি। তবে ব্যাট হাতে শুরুর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ২০১৭ সালে জায়গা হারান টিম পেইনের কাছে। সেই পেইন পরে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কও হয়ে যান।

ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বাইয়ে দিয়ে ২০১৯ সালে ওয়েড আবার টেস্ট দলে ফেরেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ওই অ্যাশেজে দুটি সেঞ্চুরি করেন এজবাস্টন ও ওভালে। তবে এবারও ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। টানা ১৪ ইনিংসে ফিফটি না পাওয়ার পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ভারত সিরিজের পর জায়গা হারান দলে। কিছুদিন পরে হারান বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিও। এরপর আর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অবশ্য ‘ফিনিশার’ হিসেবে নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরেন তিনি। ওই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রঙিন পোশাকে খেলা চালিয়ে যাবেন এখনও। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা একরকম নিশ্চিত।

মূলত সাদা বলের ক্যারিয়ার আরেকটু দীর্ঘায়িত করতেই লাল বলের ক্রিকেট ছাড়ছেন ওয়েড। পিঠের ব্যথা তাকে ভোগাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তার ধারণা, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট না খেললে সীমিত ওভারের ক্যারিয়ার আরেকটু লম্বা করার সুযোগ থাকবে। শেফিল্ড শিল্ডের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচটির আগে নিজের সিদ্ধান্তের কথা সতীর্থদের জানিয়ে দেন তিনি।

বিদায় বেলায় সংশ্লিষ্ট অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি ওয়েড বললেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলতে পারাই তার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

“প্রথমত আমার পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি, লাল বলের ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে আমার ভ্রমণের কারণে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে স্ত্রী জুলিয়া, তিন সন্তান উইন্টার, গোল্ডি ও ডিউককে। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে উপভোগ করেছি। সাদা বলের ক্রিকেট যদিও খেলে যাব, তবে আমার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে দেশের হয়ে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরতে পারা।”

“ক্যারিয়ার জুড়ে পাশে থাকার জন্য সব সতীর্থের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি ক্রিকেট ভিক্টোরিয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হিসেবে আমার ভিত গড়ে তোলার জন্য এবং ক্রিকেট তাসমানিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা ঘরের রাজ্যে আমার ক্যারিয়ার শেষ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।”