বাংলাদেশের তরুণ পেসারের পারফরম্যান্সে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররাও দারুণ অনুপ্রাণিত, বললেন ভারতের অভিজ্ঞ ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা।
Published : 21 Jul 2023, 03:07 PM
বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন স্মৃতি মান্ধানা, সেরা বোলারদের বিপক্ষেও তার ব্যাট ছুটেছে দাপটে। সেই স্মৃতির হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন মারুফা আক্তার। নিজ থেকে বাংলাদেশের তরুণ পেসারের কাছে গিয়ে সেই ভালো লাগার কথা বলেছেনও ভারতের সহ-অধিনায়ক। মারুফার ভেতরে বড় ক্রিকেটার হওয়ার ‘আগুন’ দেখতে পাচ্ছেন স্মৃতি। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার পেস সহায়ক কন্ডিশন ও উইকেটে এই পেসারের বোলিং দেখতে মুখিয়ে আছেন ভারতের অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মারুফার প্রতিভার আলো ছড়িয়ে পড়ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজে তিনি যেন পুরোপুরি উদ্ভাসিত। এখনও পর্যন্ত সিরিজের ৫ ম্যাচের সবকটিতে একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছে দল। তিনিও প্রতিদান দিচ্ছেন পারফরম্যান্সে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ বোলিংয়ের পর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক তিনিই। ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নারী ওয়ানডেতে প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে জয় এনে দেন বাংলাদেশকে। ওয়ানডেতে পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড তা। পরের ম্যাচে দল হারলেও অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শুরুতে এনে দেন উইকেট।
উইকেট যতটা না ধরা দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে মারুফার বোলিংয়ের ধরন ও স্কিল। সহজাতভাবেই তিনি বেশ গতিময় ও দারুণ আগ্রাসী। নতুন বল সুইংও করাতে পারেন দুই দিকেই। বাতাসে যেমন সুইং করাতে পারেন, অফ দা পিচ মুভমেন্টও আদায় করে নিতে পারেন, লেট সুইং করাতে পারেন। ব্যাটার বুঝে বল করায় উন্নতি হচ্ছে ক্রমেই।
আলাদা করে নজর কেড়েছেন তিনি ফিল্ডিংয়েও। দুর্দান্ত এক অ্যাথলেট। ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে সেখানেও সামর্থ্য আছে কিছুটা। সব মিলিয়ে ১৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতই নয়, তিনি উজ্জ্বল বর্তমানও।
কোভিডের দিনগুলিতে বাবার সঙ্গে কৃষি জমিতে হাল টেনে খবরের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি, এখন তার ক্রিকেটের আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে।
বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে স্মৃতি মান্ধানা যেমন বললেন, মারুফাকে দেখে অনুপ্রাণিত এমনকি ভারতীয় দলের সবাই।
“আমি বলব, সে খুব ভালো একজন ক্রিকেটার। গত ম্যাচ শেষে তার সঙ্গে খানিকটা কথা হয়েছে আমার। তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছি যে, তার পারফরম্যান্স আমাদের সবাইকেও দারুণ অনুপ্রাণিত করেছে।”
“তার বয়স কত, এটা কোনো ব্যাপার নয়। মাঠে যেভাবে সে নিজেকে উপস্থাপন করছে, (বোলিংয়ের পাশাপাশি) ফিল্ডিংয়ে যেভাবে সে নিজেকে মেলে ধরছে, তা অসাধারণ। তার ভেতরে ভালো ক্রিকেটার হয়ে ওঠার যে আগুন দেখেছি… আমি নিশ্চিত, সামনের পথচলায় সে বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠবে।”
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এই সিরিজের সবগুলো ম্যাচই হয়েছে বেশ মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে। পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল না বললেই চলে। মারুফা জ্বলে উঠেছেন এমন বিরুদ্ধ প্রান্তরেই।
স্মৃতি মান্ধানা মনে করিয়ে দিলেন সেই দিকটিও। মারুফার বোলিংয়ের বিশেষত্ব তুলে ধরে আইসিসি উইমেন’স র্যাঙ্কিংয়ে ওয়ানডেতে ছয় ও টি-টোয়েন্টিতে তিনে থাকা এই ব্যাটার বললেন, পেস সহায়ক দেশগুলিতে এই পেসারকে দেখতে চান তিনি।
“তার অ্যাকশন একদমই আলাদা। সে যতটা জোরে বল করে, অ্যাকশনের কারণেই এর চেয়ে আরও দ্রুতগতির মনে হয়। তার রিলিজ পয়েন্ট থেকে আমাদের ধারণার চেয়ে আরেকটু বেশি স্কিড করে তার বল। রিলিজ থেকে তার বল ধারণার চেয়ে প্রায় ২ মাইল (ঘণ্টায়) বেশি দ্রুতগতির মনে হয়। তাই আরেকটু বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় (ব্যাটারদের)।”
“এই ধরনের উইকেট অবশ্যই তাকে খুব একটা সহায়তা করছে না। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সে কেমন করে, দেখার অপেক্ষায় থাকবে।”