বিশ্বকাপের সেরা একাদশে কোহলি-বাটলারদের সঙ্গী রাজা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল ইলেভেন’ এ জায়গা পেয়েছেন ছয় দেশের ক্রিকেটার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 07:38 AM
Updated : 14 Nov 2022, 07:38 AM

বছরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সিকান্দার রাজা। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আলো ছড়িয়েছেন তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। টুর্নামেন্টে জিম্বাবুয়ের তিন জয়েই ম্যাচ সেরা এই অলরাউন্ডার। যা এবারের আসরে সর্বোচ্চ। এমন পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপের সেরা একাদশেও জায়গা করে নিয়েছেন রাজা।

মেলবোর্নে রোববার ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এই সংস্করণের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ইংলিশরা।

স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রায়ের ভিত্তিতে পরদিন এবারের বিশ্বকাপের ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল ইলেভেন’ ঘোষণা করেছে আইসিসি। সেখানে জায়গা পেয়েছেন ৬ দেশের ক্রিকেটার।

শিরোপা জেতা ইংল্যান্ডের আছেন সর্বোচ্চ ৪ জন। অধিনায়ক জস বাটলারকেই দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বভার। একাদশে উইকেটরক্ষকও তিনি।

সেমি-ফাইনাল থেকে বাদ পড়া ভারত থেকে বিরাট কোহলির সঙ্গে আছেন সূর্যকুমার যাদব। রানার্সআপ পাকিস্তান থেকে জায়গা পেয়েছেন শাদাব খান ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। একজন করে ক্রিকেটার রাখা হয়েছে নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে থেকে।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা একাদশ (ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী)

অ্যালেক্স হেলস (ইংল্যান্ড)

গত সেপ্টেম্বরে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ইংল্যান্ড দলে ফেরেন অ্যালেক্স হেলস। বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন এই ওপেনার। ৬ ম্যাচে ১৪৭.২২ স্ট্রাইকরেট ও ৪২.৪০ গড়ে ২১২ রান করেন তিনি।

সেমি-ফাইনালে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেওয়ার পথে খেলেন ৪৭ বলে ৮৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। এছাড়া সুপার টুয়েলভের গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

জস বাটলার (অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক) (ইংল্যান্ড)

সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন বাটলার। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে হেলসের সঙ্গে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১৭১ রানের রেকর্ড জুটি। অপরাজিত থাকেন ৮০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলেন ছোট তবে কার্যকর ইনিংস।

সুপার টুয়েলভে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ বলে ৭৩ রান করে দলকে জেতান তিনি। পাশাপাশি গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে ৯টি ডিসমিসালও আছে বাটলারের।

বিরাট কোহলি (ভারত)

চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৩ বলে ৮২ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস খেলে বিশ্বকাপ শুরু করেন কোহলি। ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিনি পরের ম্যাচগুলোতেও। ৬ ম্যাচে চার ফিফটিতে ৯৮.৬৬ গড় ও ১৩৬.৪০ স্ট্রাইক রেটে করেন আসরের সর্বোচ্চ ২৯৬ রান। বিশ্বকাপের দুই আসরে সর্বোচ্চ রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি।   

সূর্যকূমার যাদব (ভারত)

টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থেকে আসর শুরু করেন সূর্যকুমার। বিশ্বকাপে দারুণ ব্যাটিংয়ে শীর্ষস্থান নিজের করে নেন ভারতের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। উইকেটের চারপাশে শট খেলার দারুণ পারদর্শিতা দেখিয়ে ৬ ম্যাচে তিন ফিফটি, ১৮৯.৬৮ স্ট্রাইকরেট ও ৫৯.৭৫ গড়ে ২৩৯ রান করেন তিনি।

গ্লেন ফিলিপস (নিউ জিল্যান্ড)

বিশ্বকাপের এবারের আসরে সেঞ্চুরি হয়েছে দুটি। যার একটি নিউ জিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান গ্লেন ফিলিপসের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৪ বলে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৩৬ বলে ৬৪ রান। সবমিলিয়ে ১৫৮.২৬ স্ট্রাইকরেটে ২০১ রান তার। পাশাপাশি দারুণ ফিল্ডিংয়েও নজর কাড়েন তিনি।

সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)

এবারের আসরে জিম্বাবুয়ের সাফল্যের মূল কারিগর ছিলেন রাজা। প্রাথমিক পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৪৮ বলে ৮২ রানের ইনিংস। পরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও রাখেন ব্যাটে-বলে সমান অবদান। ৮ ম্যাচে ১৪৭.৯৭ স্ট্রাইক রেট ও ২৭.৩৭ গড়ে ২১৯ রান করেন তিনি। আসরের সর্বোচ্চ ১১ ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকে।

সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে বল হাতে নেন ২৫ রানে ৩ উইকেট। ওভারপ্রতি সাড়ে ৬ করে রান দিয়ে তার শিকার মোট ১০ উইকেট।

শাদাব খান (পাকিস্তান)                                        

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ভীষণ বিপদে পড়া পাকিস্তানকে কক্ষপথে ফেরানোয় দারুণ অবদান শাদাব খানের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ২২ বলে খেলেন তিনি ৫২ রানের ইনিংস। পরে বল হাতে নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচেও চমৎকার বোলিং করেন এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ফাইনাল ম্যাচে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় নেন ১ উইকেট।

৭ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৬.৩৪ রান দিয়ে শাদাব নেন ১১ উইকেট।

স্যাম কারান (ইংল্যান্ড)

প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে এই সংস্করণে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন স্যাম কারান। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। সবমিলিয়ে ওভারপ্রতি ৬.৫২ রান ও ১১.৩৮ গড়ে ১৩ উইকেট শিকার করে ফাইনাল সেরার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও জেতেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা প্রথম।

আনরিক নরকিয়া (দক্ষিণ আফ্রিকা)

গতির ঝড়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে কাঁপন ধরানোর কাজটি করতে বেশ পটু আনরিক নরকিয়া। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সেটাই করেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই পেসার। দুর্দান্ত বোলিংয়ে নেন ৪টি করে উইকেট। সবমিলিয়ে ৫ ম্যাচে স্রেফ ওভারপ্রতি ৫.৩৭ রান ও ৮.৫৪ গড়ে নরকিয়ার শিকার ১১ উইকেট।

মার্ক উড (ইংল্যান্ড)

চোটের কারণে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ খেলতে পারেননি ইংল্যান্ডের গতিতারকা মার্ক উড। তবে সুপার টুয়েলভের চার ম্যাচে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন এই ডানহাতি পেসার। আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি করে উইকেট নেওয়া উড সবমিলিয়ে ১২ গড়ে ধরেন ৯ শিকার।

শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

চোট কাটিয়ে বিশ্বকাপ দিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। আসরের শুরুতে ছন্দের খোঁজে থাকলেও নিজেকে দ্রুতই গুছিয়ে নেন তিনি। ফাইনালেও প্রথম ওভারে অ্যালেক্স হেলসকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দলকে ভালো শুরু এনে দেন বাঁহাতি এই পেসার। কিন্তু পরে চোটে পড়ে নিজের কোটা শেষ করতে পারেননি তিনি।

তবে এর আগে চমৎকার সব পারফরম্যান্স উপহার দেন তিনি। সুপার টুয়েলভে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪ রানে ৩ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেমি-ফাইনালে ওঠার পথ সহজ করেন আফ্রিদি। ৭ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৬.১৫ রান দিয়ে আফ্রিদির শিকার মোট ১১ উইকেট।

দ্বাদশ খেলোয়াড়: হার্দিক পান্ডিয়া (ভারত)

সেরা একাদশে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতের অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়াকে। ব্যাট হাতে ১৩১.৯৫ স্ট্রাইকরেটে ১২৮ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নেন তিনি ৮টি উইকেট। সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া। কিন্তু ম্যাচটি জিততে পারেনি ভারত।