আরও একবার ব্যর্থ মুশফিকুর রহিম, থিতু হয়েও ফিফটির আগে আউট মুমিনুল হক, অপরাজিত ফিফটিতে দলের আশা জিইয়ে রাখলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
Published : 22 Apr 2025, 06:32 PM
দিনের শুরুতে বাগড়া বাধাল বৃষ্টি। দিনের শেষে দ্রুতই নেমে এলো আঁধার। বেরসিক প্রকৃতির বিরূপ আচরণে হারিয়ে গেল অর্ধেকের বেশি ওভার। মাঝের সময়টায় নাজমুল হোসেন শান্তর লড়াইয়ে আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় দিনেই সাধারণত অনেকটা ঠিক হয়ে যায় ম্যাচের গতিপ্রকৃতি। কিন্তু সিলেট টেস্টে এ দিন খেলা হয় মোটে ৪৪ ওভার। অধিনায়কের ফিফটিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান করে বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৯৪ রান। জিম্বাবুয়ের লিড পেরিয়ে স্বাগতিকরা এখন ১১২ রানে এগিয়ে।
শান্ত ছাড়া আর কেউ ব্যাটিংয়ে তেমন নির্ভরতা দিতে পারেননি। অস্বস্তিময় ইনিংস শেষে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ফিফটির কাছাকাছি গেলেও মুমিনুল হকের ব্যাটিংয়েও ছিল না স্বস্তি। আরও একবার হতাশ করেন মুশফিকুর রহিম।
আগের রাতের টানা বৃষ্টির পর সকালেও বেশ কিছুক্ষণ চলে হালকা বর্ষণ। ভেসে যায় প্রথম সেশন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পর শুরু হয় খেলা। শুরু থেকেই ব্লেসিং মুজারাবানির শর্ট বলের বিপক্ষে অস্বস্তিতে দেখা যায় জয়কে।
দিনের সপ্তম ওভারে শরীর বরাবর তাক করা বাউন্সারে আর টিকতে পারেননি ২৪ বছর বয়সী ওপেনার। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। ৬৫ বলে করেন তিনি ৩৩ রান। এ নিয়ে টানা ১৭ ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে ব্যর্থ তিনি। সবশেষ ১০ ইনিংসে ৯ বারই তিনি আউট হলেন কট বিহাইন্ড বা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
জয়ের বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। এরপর আরেকটি পঞ্চাশছোঁয়া জুটি গড়েন মুমিনুল ও শান্ত। ক্রিজে নেমে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে ভিক্টর নিয়াউচির সুইং বোলিংয়ে ভুগতে থাকেন মুমিনুল।
রিচার্ড এনগারাভার বলে পরপর দুটি চার মারেন শান্ত। বদলা নেওয়ার জেদেই হয়তো বাউন্সার মারেন বাঁহাতি পেসার। সেটি আবার মাথার অনেক ওপর দিয়ে চলে যায় সীমানায়। পরের বৈধ ডেলিভারিতেও বাউন্ডারি মারেন শান্ত। ওভারে আসে মোট ১৮ রান।
ইতিবাচক শুরুর পর ওয়েসলি মাধভেরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে বসেন শান্ত। তবে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিতে পারেননি নিয়াশা মায়াভো। ২৬ রানে বেঁচে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে মুমিনুলের ক্যাচ নিতে ভুল করেননি মায়াভো। নিয়াউচির অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। তার গ্লাভস ছুঁয়ে যাওয়া বল লুফে নেন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক। ৬ চারে ৮৪ বলে ৪৭ রান করেন মুমিনুল।
এরপর টিকতে পারেননি মুশফিক। মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ৪ রান করে আউট তিনি।
টেস্টে টানা চার ইনিংস ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা সাত ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ মুশফিক। গত বছর পাকিস্তান সফরে ১৯১ রানের ইনিংসের পর থেকেই রান নেই তার ব্যাটে। টানা ১২ ইনিংসে চল্লিশও ছুঁতে পারেননি ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
দেশের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একশ টেস্ট খেলা থেকে আর মাত্র ৫ ম্যাচ দূরে সাবেক এই অধিনায়ক। কিন্তু এই বয়স ও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এখন জায়গা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
দিনের বাকি অংশে আর উইকেট পড়তে দেননি শান্ত ও জাকের আলি। ৭ চারে ৮৪ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি করেন শান্ত। অন্য প্রান্তে জাকের অবশ্য ছিলেন নড়বড়ে। বেশ কিছু বল কানায় লেগে অল্পের জন্য বেঁচে যান কিপার-ব্যাটসম্যান।
৬০ বলে ২১ রানে অপরাজিত জাকের। ১০৩ বলে ৬০ রানে নতুন দিন শুরু করবেন শান্ত। চতুর্থ দিন নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে অর্থাৎ ৯টা ৪৫ মিনিটে শুরু হবে খেলা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৯১
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৭৩
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৫৭/১) ৫৭ ওভারে ১৯৪/৪ (জয় ৩৩, মুমিনুল ৪৭, শান্ত ৬০*, মুশফিক ৪, জাকের ২১*; নিয়াউচি ১৩-৪-২৮-১, মুজারাবানি ১৫-৫-৫১-৩, এনগারাভা ১৩-০-৫৫-০, মাধভেরে ৮-১-৩২-০, মাসাকাদজা ৮-৩-১৩-০)