‘হাজারটা কথার মধ্যেও একটা ব্যাপার, এবার ভালো উইকেটে ভালো খেলা হচ্ছে’

বিপিএলের আয়োজনগত নানা দিক নিয়ে সমালোচনার অনেক জায়গা থাকলেও এবার অন্তত মাঠের খেলা ঠিক আছে, বলছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 03:50 AM
Updated : 11 Jan 2023, 03:50 AM

বিপিএলের আয়োজনগত দিক থেকে সমালোচনার জায়গা অনেক দেখছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পাশপাশি তিনি অনুধাবন করছেন বিসিবির সীমাবদ্ধতাগুলোর বাস্তবতাও। যদিও আরও ভালোভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় বলেও মনে করেন তিনি। তবে একটা ব্যাপার স্বস্তি দিচ্ছে দেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ককে। তার মতে, এবার মাঠের ক্রিকেট অন্তত ঠিকঠাক আছে। যেটির বড় কারণ তিনি মনে করেন, ভালো উইকেটে খেলা হওয়া। 

বিপিএলে মাঠের ক্রিকেট নিয়ে সমালোচনার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র বরাবরই থাকে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট। এই মাঠেই সবচেয়ে বেশি খেলা হয় টুর্নামেন্টের। কিন্তু বরাবরই এখানে বেশির ভাগ ম্যাচ হয় নিরস। মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ধুঁকতে হয়। বোলারদের উপযুক্ত দক্ষতাও ফুটে ওঠে না। টি-টোয়েন্টির সত্যিকারের রসও উপভোগ করা যায় না। 

এবারও শুরুটা ছিল তেমনই। নবম আসরের প্রথম ম্যাচে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সের সামনে স্রেফ ৮৯ রানে থমকে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। মিরপুরের সেই চিরচেনা উইকেটই দেখা যায়। পরের দিনও প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্স আগে ব্যাট করে রান তোলে স্রেফ ১১৩। উইকেট যথারীতি মন্থর। 

তবে ক্রমেই ফুটে ওঠে, এই সময়টায় দেশজুড়ে চলা শৈত্যপ্রবাহ আর স্যাঁতস্যাঁত আবহাওয়ার কারণেই মূলত ওই অবস্থা ছিল উইকেটের। ওই প্রথম দুই দিনও রাতের ম্যাচে উইকেটের চরিত্র বদলে যায় নাটকীয়ভাবে। শৈত্যপ্রবাহ চলে যাওয়ার পর দিনের ম্যাচেও উইকেট দেখা যায় বেশ ভালো। সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ১৪৯ রান তাড়া করে জিতে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশাল জয় পায় রংপুর রাইডার্সের ১৫৮ রান তাড়ায়। 

এছাড়াও এবার ১৯৪ রান তাড়ায় জিতেছে সিলেট, তারাই আবার আগে ব্যাট করে ২০১ রান তুলেছে, খুলনা ১৭৮ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে জিতে গেছে চট্টগ্রাম। মিরপুরে ধারাবাহিকভাবে এরকম বড় রানের ম্যাচ গত কয়েকটি বিপিএলে দেখা যায়নি। 

মঙ্গলবার ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এই ইতিবাচক দিকটির কথাই তুলে ধরলেন সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি। 

“উইকেট ভালো হলে ওদের জন্য খেলা সহজ হয়। এমনিতে উইকেট তো চট্টগ্রামে গেলেই শুধু ভালো পাওয়া যায়। এরকম উইকেট তো পাওয়া যায় না (মিরপুরে)। গত তিন দিন যে উইকেট আমরা দেখলাম, দারুণ উইকেট। এরকম উইকেট হলে কিছু ক্রিকেটার আমরা তৈরি করতে পারব। এটা খুব ভালো দিক যে এত সমালোচনার মধ্যেও মাঠের খেলাটা ঠিক আছে। উইকেট ভালো।” 

“এই উইকেটে এবার ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বোলারদের জন্য ভালো হচ্ছে। এরকম উইকেটে খেলা হলে বোলারদেরও সামর্থ্য বাড়তে থাকে যে, এখানে জায়গা দিলে (ব্যাটসম্যানকে), স্কিল না থাকলে সমস্যা হবে। এরকম উইকেটে খেলা হলে ভালো হবে। এবার হাজার কথার ভেতরেও এই একটা ব্যাপার যে অন্তত উইকেট ভালো, খেলাটা ভালো হচ্ছে।” 

নানা বিতর্ক যদিও বরাবরের মতো এবার সঙ্গী বিপিএলের। বিশেষ করে ডিআরএস না থাকা ও এডিআরএস নামক প্রশ্নবিদ্ধ প্রযুক্তির ব্যবহারের সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে শুরুতেই। আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নিয়মিত। ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে হরহামেশাই। ক্রিকেটাররা সেসবের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দৃষ্টিকটূভাবে। 

মাশরাফি মানছেন এসবও। ইতিবাচক দিকগুলোই আবার তুলে ধরে তিনি বললেন, আম্পায়ারিং আরও ভালো করে তুলতে দায়িত্বটা আম্পায়ারদেরই নিতে হবে। 

“অনেক কিছু ভালো হতে পারত, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে টুর্নামেন্ট যখন মাঠে গড়িয়েছে… দেখুন, আমরা আগে একবার প্রায় দুইশ তাড়া করে জিতেছি, আজকে দুইশ করেছি, অন্যান্য ম্যাচে ১৬০ রান তাড়া করছে, ক্রিকেটারদের একটা অভ্যাস গড়ে উঠছে। দিন শেষে কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে আম্পায়ার যদি তার লেভেল ওপরে নিতে না পারে, এটা তার ব্যাপার।” 

“বাইরে থেকে আম্পায়ার এনে (কাজ চালানো যায়)… কিন্তু আমি বলব, আমাদের আম্পায়ারদেরও সুযোগ দিতে হবে নিজেদেরকে মেলে ধরার। তারা এখন থেকে যদি কিছু শেখে, তাহলে ভালো। কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আসলে হবেই, এটা স্বাভাবিক। যেহেতু স্নিকো বা অন্যান্য কিছু নেই। আমার কাছে মনে হয়, কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া যায় মাঠে, আম্পায়াররা যদি দিতে পারে, যেরকম আমরা বাইরে দেখি বা আন্তর্জাতিক ম্যাচে… সেরকম স্ট্যান্ডার্ড সেট করতে হলে আম্পায়ারদেরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে মাঠে।”