‘আবার আবাহনী, জয় আবাহনী’

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করে উচ্ছ্বসিত আবাহনীর সমর্থকরা, কোচ খালেদ মাহমুদ বললেন, এবারের লিগে দারুণ খেলেছে তার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 03:43 PM
Updated : 13 May 2023, 03:43 PM

তানজিম হাসানের শটে বল তখন উড়ে যাচ্ছে ফিল্ডারদের ওপর দিয়ে। সীমানা ছাড়া হওয়ার অপেক্ষা কে করে! ডাগ আউটের সামনে অপেক্ষায় থাকা আবাহনীর ক্রিকেটাররা বাঁধনহারা উল্লাসে ছুটে গেলেন মাঠে। জয়ের স্মারক স্টাম্প সংগ্রহে রাখতে শুরু হলো কাড়াকাড়ি। ততক্ষণে ঢোলে বাড়ি পড়ে গেছে, বাদ্য বাজছে। একটু পর শুরু হলো স্লোগানও। পতাকা হাতে আবাহনীর সমর্থকদের কেউ কেউ বলছেন, ‘আবার আবাহনী’…. কেউ বলছেন ‘জয় আবাহনী।’

প্রসঙ্গ যখন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, আবাহনীর তখন জয়জয়কার তো বটেই। এই নিয়ে ২২ বার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতল তারা। ১০ বারও জিততে পারেনি আর কোনো ক্লাব। আবাহনী হ্যাটট্রিক শিরোপাই জিতেছে তিন দফায়! আরও একটি ট্রফি জয়ের পর ‘জয় আবাহনী’ স্লোগানই খুব মানানসই।

সবশেষ হ্যাটট্রিক শিরোপার পরই ছিল একটু ছন্দপতন। গত মৌসুমে শিরোপা জিতে নেয় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। আবাহনী এমনকি তৃতীয়ও হতে পারেনি।

সফলতম দলের জন্য চতুর্থ স্থান হজম করা কঠিন। এবার তারা ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে। শেষ দিকে এসে যদিও একটু ভজকট পাকিয়ে ফেলেছিল আগের ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়ে। শেষ ম্যাচটি তাই রূপ নিয়েছিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার এই ম্যাচেও লড়াই হলো জমজমাট। ৫ ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা শেখ জামাল পরে ২৮২ রানের পুঁজি গড়ে ফেলল। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান খেললেন ৭০ বলে ৮৯ রানের ইনিংস, অভিজ্ঞ তাইবুর রহমান করলেন ৫৩। শেষ দিকে পারভেজ রসুল (৩৭ বলে ৪২) ও জিয়াউর রহমানের ব্যাটে (১৪ বলে ২৯) শেষ ১০ ওভারে এলো ১২৩ রান!

সেই রান তাড়ায় আবাহনীকে উদ্বোধনী জুটিতেই ১৪৫ রান এনে দিলেন আসরের সফলতম দুই ব্যাটসমান মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও এনামুল হক। শেখ জামাল এরপর ম্যাচে ফিরে উইকেট নিতে থাকল নিয়মিত বিরতিতে। শেষ পর্যন্ত আফিফ হোসেনের ৫৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংসে আবাহনী জয় নিশ্চিত করল শেষ ওভারে।

এক মৌসুম পর শিরোপা পুনরুদ্ধার, আবার ট্রফির ছোঁয়া পাওয়া। ‘আবার আবাহনী’ স্লোগানও তাই জুতসই।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দর্শকে ঠাসা গ্যালারি আর সমর্থকদের তুমুল উত্তেজনার সেই সোনালি দিন অতীত হয়ে গেছে বেশ আগেই। তবে লিগের শেষ ম্যাচে এ দিন গ্যালারিতে কিছু দর্শক অন্তত দেখা গেল। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের একাডেমির ছেলেরা ছিল গ্যালারিতে। আবাহনীর সমর্থকও থাকলেন শ দুয়েক। ঐতিহ্যবাহী দলটির সমর্থকগোষ্ঠীর কয়েকজন তো মাঠে থাকেন নিয়মিতই। তাদের দেখা গেল গলা ফাটিয়ে স্লোগানে শিরোপার উল্লাস করতে।

কোচ খালেদ মাহমুদকেও দেখা গেল বেশ নির্ভার। বড় বাজেটে দল গড়েও গত মৌসুমে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এবার তাই প্রবল চাপে ছিলেন তিনি। যথারীতি বিশাল বাজেটের দল গড়ে আবাহনী। চোটের কারণে তাসকিন আহমেদ খেলতে পারেননি একটি ম্যাচও। আইপিএল আর জাতীয় দলের ব্যস্ততায় কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি লিটন কুমার দাসও। তার পরও আবাহনীর একাদশের বাইরে ছিলেন এমন অনেকে, যারা অন্য কোনো দলে থাকলে নিয়মিত ম্যাচ খেলতে পারতেন অনায়াসেই।

চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে তাই যেন বড় ভার নেমে গেছে খালেদ মাহমুদের। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তার কণ্ঠে ফুটে উঠল লিগজুড়ে ভালো ক্রিকেট খেলার তৃপ্তিও। 

“চাপ তো ছিলই। আমার বেঞ্চ দেখলেই বুঝতে পারবেন, কেমন চাপ ছিল। আমার দল যদি দেখেন, তাসকিন ও লিটন ম্যাচই খেলেনি।(নাজমুল হোসেন) শান্ত স্রেফ তিনটি ম্যাচ খেলে গেছে। এর বাইরেও রাকিবুল, রিশাদ বসে ছিল। নাহিদুলকে কখনও বসাতে হয়েছে। রিপন মণ্ডল ভালো পারফরমার, ওকেও বসাতে হয়েছে। আমার বেঞ্চ শক্তিশালী ছিল। এটা মাথায় রেখেছিলাম যে, জাতীয় দলের খেলা থাকবে। বেঞ্চ শক্তিশালী না হলে চ্যাম্পিয়নশিপ পাওয়া।”

“আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান যে পেরেছি। এই বছর খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি আমরা। একটি ম্যাচ ছাড়া আবাহনী দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। গত ম্যাচে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলিনি। তবে সব মিলিয়ে খুব ভালো খেলেছি আমরা। শেখ জামালের বিপক্ষ প্রথম পর্বের ম্যাচেও আমরা ভালো খেলেছিলাম। কিন্তু পারিনি। ওরা বেশি ভালো খেলে জিতেছিল। আজকে শেখ জামাল ভালো খেলেছে, তবে আমরা আরও ভালো খেলে জিতেছি।”

শুধু নিজ দলের খেলাতেই নয়, খালেদ মাহমুদ মুগ্ধ গোটা লিগের ক্রিকেটীয় মানে। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের সঙ্গে নানা ভূমিকায় কাজ করা এই বোর্ড পরিচালকের মতে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মান ভালো বলেই বাংলাদেশ জাতীয় দল ওয়ানডে ক্রিকেটে এতটা শক্তিশালী।

“এখন কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৮০-২৯০ করে কেউ খুব একটা ডিফেন্ড করতে পারে না। একসময় এটা হতো, এখন আর সেদিন নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা ভালো। বাংলাদেশ ওয়ানডে দল আমরা এত শক্তিশালী যে মনে করি, এটার পেছনে বড় অবদান আছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের। প্রিমিয়ার লিগ এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় বলেই ওয়ানডেতে আমরা এখন এত ম্যাচ জিতি ও প্রতিষ্ঠিত একটা দল এখন।”