আমাদ-ওয়াহাবের বোলিং আর তামিমের ব্যাটে খুলনার বড় জয়

হ্যাটট্রিক হার দিয়ে শুরুর পর অবশেষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল খুলনা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2023, 10:01 AM
Updated : 17 Jan 2023, 10:01 AM

চোট থেকে ফেরার পর এবারের বিপিএলে অনেকটা নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ম্যাচে যদিও রান পেয়েছিলেন, তবে অস্বস্তিতে ভরা ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। খুলনা টাইগার্সও পাচ্ছিল না জয়ের দেখা। এবার তার স্বরূপে ফেরা ও দলের জয় মিলে গেল এক বিন্দুতে। বোলাদের গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে তামিমের অপরাজিত ফিফটিতে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হলো খুলনা।

চতুর্থ ম্যাচে এসে এবারের বিপিএলে প্রথম জয়ের দেখা পেল খুলনা টাইগার্স। চট্টগ্রামে তারা রংপুর রাইডার্সকে হারাল ৯ উইকেটে।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ওয়াহাব রিয়াজ, আমাদ বাটদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রংপুর আটকে যায় ১২৯ রানেই। খুলনা সেই রান টপকে যায় ১০ বল বাকি রেখে।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৪৫তম ফিফটিতে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। এই সংস্করণে ৭ হাজার রানের মাইলফলক থেকে আর মাত্র ৫ রান দূরে তিনি।  

তামিমদের কাজ সহজ করে দেন খুলনার দুই পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ ও আমাদ বাট। স্রেফ ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ওয়াহাব ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। আমাদ নেন ৩ উইকেট।

হারিস রউফের মতো গতিতারকা থাকার পরেও খুলনার ইনিংসের শুরুতে স্পিন ব্যবহার করেন রংপুরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শোয়েব মালিক। ছোট রানের ম্যাচে উইকেটের ধীরগতি কাজে লাগানোর পরিকল্পনাই হয়তো ছিল তার।

কিন্তু সেটি বুমেরাং হয়ে ফেরে রংপুরের দিকে। স্পিনারদের বোলিং খেলে উইকেটে থিতু হওয়া তামিম পরে দারুণভাবে সামলান হারিস, হাসান মাহমুদের গতিময় পেস বোলিং। 

অবশ্য ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে স্পিনেই সাফল্য পেতে পারত রংপুর। শেখ মেহেদি হাসানের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মুনিম শাহরিয়ার। সেটি ঠিকঠাক হাতে নিতে পারেননি মোহাম্মদ নাওয়াজ। রিপ্লে দেখে নট আউটের সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ার।

একাদশে ফেরার ম্যাচে বেঁচে গিয়েও বেশি দূর যাওয়া হয়নি মুনিমের। ৩ চারে ২১ বলে ২১ রান করে পাওয়ার প্লের শেষ বলে আউট হন তিনি। 

এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি তামিম ও মাহমুদুল হাসান জয়। শুরুতে এদিনও খুব সাবলিল ছিলেন না তামিম। তবে সময়ের সঙ্গে খুঁজে পান নিজেকে। মেহেদির বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ট্রেড মার্ক শটে ছক্কা কিংবা আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত শটে মারা বাউন্ডারিতে মেলে চেনা তামিমের দেখা। 

ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে নাওয়াজের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লং অন সীমানার ওপারে পাঠান তামিম। পঞ্চাশে পৌঁছতে খেলেন ৩৫ বল। যেখানে ৪ চারের সঙ্গে ছিল ২টি ছয়।

জয় ছিলেন পুরো ভিন্ন রূপে। দীর্ঘদিন ধরেই ফর্মে না থাকা ব্যাটসম্যান এবারের বিপিএলে প্রথম খেলতে নেমেও ধুঁকতে থাকেন। তবে উইকেট ছুড়ে দেননি। আরেক পাশ থেকে তামিম রান করা ও লক্ষ্য বড় না থাকায় রান রেটের চাপ ছিল না। আস্তে আস্তে অবশ্য ছন্দে ফেরেন তিনি।

তামিম ফিফটি ছোঁয়ার আগপর্যন্ত রীতিমতো টেস্ট ঘরানার ব্যাটিং করেন মাহমুদুল। অগ্রজ সতীর্থের পঞ্চাশ হতেই আড়মোড়া ভেঙে হাত খুলে খেলতে থাকেন তরুণ ব্যাটসম্যান। 

প্রথম ২৮ বলে স্রেফ ১৬ রান করা জয় পরের ১৪ বল থেকে নেন ২২ রান। ওমারজাইয়ের খাটো লেংথের বল মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় ভাসিয়ে ম্যাচ শেষ করেন তিনি। 

এর আগে চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে ছাড়া খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেনি রংপুর। তাদের ইনিংসের একমাত্র বিজ্ঞাপন শেখ মেহেদির ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং। 

উইকেটের চরিত্র বুঝে রয়েসয়ে খেলে দলকে একশ পার করান তিনি। ২টি করে চার-ছয়ে খেলেন ৩৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। 

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন রনি তালুকদার। নাহিদুল ইসলামের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাট করা ওপেনার। 

ওই ওভারের পঞ্চম বলে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি মারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। নাহিদুলের পরের ওভারে স্লগ সুইপ করে বিশাল ছক্কায় ভাসান তিন নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান। 

ছক্কা হজমের পরের বলেই শোধ তোলেন নাহিদুল। ব্যাটের সামনের কানায় লেগে ফিরতি দেন নাঈম। পাওয়ার প্লেতে আসে ২ উইকেটে ৩৫ রান। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ২ ওভারে স্রেফ ৫ রান দেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

রংপুরের হয়ে প্রথম সুযোগ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন খোলস ভাঙতে কিছুটা সময় নেন। সপ্তম ওভারে পল ফন মিকেরেনের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার। 

তবে বড় কিছু করতে পারেননি পারভেজ। দলীয় পঞ্চাশ পেরোনোর পর ওয়াহাব রিয়াজের বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করতে খেলেন ২৪ বল। 

অধিনায়ক শোয়েব মালিকও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। আমাদ বাটের বলে পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নিয়ে মালিকের বিদায় নিশ্চিত করেন মাহমুদুল হাসান জয়।

একপ্রান্ত ধরে রেখে দলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন শেখ মেহেদি হাসান। নাসুম আহমেদের বলে ডিপ এক্সট্রা কভার দিয়ে দারুণ ছক্কা মারেন তিনি। ১৫তম ওভারে একই বোলারকে রিভার্স সুইপে সোজা সীমানার ওপারে পাঠান । ওই ওভার থেকে ১৪ রান নিয়ে রান রেট ছয়ে তোলেন তিনি।

কিন্তু তিনিও পারেননি বড় কিছু করতে। আমাদ বাটের বলে স্কুপ করতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে ধরা উইকেটের পেছনে।

শেষ দিকে সাইফ উদ্দিনের বাউন্সারে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন রকিবুল হাসান। তবে শেষ ওভারে রংপুরকে চেপে ধরেন ওয়াহাব। তার দুই উইকেটের সঙ্গে রান আউটে একটি উইকেট হারিয়ে ওভার থেকে রংপুর নিতে পারে কেবল ১ রান।

শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে থামে রংপুরের ইনিংস, তা পেরিয়ে যেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি খুলনাকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১২৯ (রনি ০, পারভেজ ২৫, নাঈম ১৩, শেখ মেহেদি ৩৮, মালিক ৯, শামিম ৪, নাওয়াজ ৫, ওমরজাই ৯, রকিবুল ১২, হারিস ০, হাসান ১*; নাহিদুল ৩-০-২৩-২, সাইফ উদ্দিন ৪-০-২০-০, মিকেরেন ৩-০--২৪-০, ওয়াহাব ৪-০-১৪-৪, নাসুম ৩-০-২৪-০, আমাদ ৩-০-১৬-৩)

খুলনা টাইগার্স: ১৮.২ ওভারে ১৩০/১ (তামিম ৬০*, মুনিম ২১, মাহমুদুল ৩৮*; রকিবুল ২-০-১৩-০, শেখ মেহেদি ৩-০-২৩-০, নাওয়াজ ২-০-১৭-০, হারিস ৪-০-১৯-০, ওমরজাই ৩.২-০-২৬-১, হাসান ৪-০-২৪-০)

ফল: খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী 

 ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়াহাব রিয়াজ