শেষ ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। ব্যাট হাতে টিম ডেভিড ও ক্যামেরন গ্রিনের মতো আগ্রাসী ও পেশি শক্তির দুই ব্যাটসম্যান। বিশ্বের সেরা বোলারদের জন্যও কাজটি তখন কঠিন। কিন্তু অসাধারণ বোলিংয়ে তাদেরকে আটকে রেখে লক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টসকে জয় এনে দিলেন মহসিন খান। কখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা এই পেসার নিজের এমন বোলিং ও দলের দারুণ এই জয়টি উৎসর্গ করলেন অসুস্থ বাবাকে।
আইপিএলে মঙ্গলবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ৫ রানে হারায় লক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্ট। ৮ ছক্কায় মার্কাস স্টয়নিসের ৪৭ বলে ৮৯ রানের ইনিংসে লক্ষ্নৌ ২০ ওভারে তোলে ১৭৭ রান। সেই রান তাড়ায় ইশান কিষান ও রোহিত শর্মা ৯০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর পথ হারায় মুম্বাই। পরে ডেভিড দলকে আবার ফেরান লড়াইয়ে। শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন ১১ রান, ডেভিড তখন খেলছিলেন ১৭ বলে ২৯ রান নিয়ে।
লক্ষ্নৌ অধিনায়ক ক্রুনাল পান্ডিয়া বল তুলে দেন তখন মহসিনের হাতে। প্রথম দুই ওভারে যিনি দিয়েছিলেন ২১ রান। কিন্তু শেষ ওভারে প্রচণ্ড স্নায়ুর চাপের মধ্যে দারুণ স্কিলের প্রদর্শনী মেলে ধরেন তিনি। স্লোয়ার, ফুল লেংথ, লেংথ বল আর ইয়র্কারের মিশেলে তিনি বড় শট খেলতেই দেননি ডেভিড ও গ্রিনকে। ওভারে দুই বল থেকে রানই হয়নি, সিঙ্গেল আসে তিনটি আর শেষ বলে দুই রান। সব মিলিয়ে মহসিন দেন মোটে ৫ রান!
ম্যাচের পর ২৪ বছর বয়সী এই পেসার আবেগময় কণ্ঠে শোনালেন অসুস্থ বাবার কথা।
“দুঃখজনকভাবে আমার বাবা হাসপাতালে ছিলেন। আইসিইউতে ছিলেন। গতকালই তিনি ছাড়া পেয়েছেন। ম্যাচটি আমি খেলছিলাম বাবার জন্য। বাবা হয়তো টিভিতে ম্যাচটি দেখছিলেন। তার জন্যই খেলছিলাম আমি। ১০ দিন ধরে তিনি আইসিইউতে ছিলেন। আজকে আমার ওভারটি দেখে হয়তো তিনি হয়তো অনেক খুশি হয়েছেন।”
গত আইপিএলে মহসিনের পারফরম্যান্স ছিল চমকপ্রদ। ৯ ম্যাচ খেলে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্যভাবে স্রেফ ৫.৯৬। গোটা টুর্নামেন্টে ১০ উইকেট শিকারি বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দিয়েছিলেন একমাত্র তিনিই।
তবে আইপিএলের পর চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন বছরজুড়ে। গত আইপিএল থেকে এবারের আইপিএল পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেটেই ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। এবারও এই ম্যাচের আগে স্রেফ একটি ম্যাচ খেলে ৩ ওভারে ৪২ রান দিয়েছিলেন।
“ভালো লাগছে যে দলের ভরসার প্রতিদান দিতে পেরেছি। আগের ম্যাচে বাজে বোলিং করার পরও এই ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়েছে আমাকে। শেষ ওভারে বোলিং দেওয়া হয়েছে…।”
“এক বছর পর খেলছি আমি। মাঝের সময়টায় ইনজুরিতে ছিলাম। সময়টা খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। গতবছর যেভাবে বোলিং করেছিলাম, আজকে মনে হয়েছে যে ওভাবে করতে পেরেছি, এজন্যই আমি খুশি।