হংকংয়ের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বাবর হায়াতের মতে, তাদের জন্য দিনটি ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।
Published : 02 Sep 2022, 10:52 PM
কেউ ব্যবসায়ী, কেউ খাবার ডেলিভারি করেন, কেউ আবার ছাত্র। হংকং দলে বেশির ভাগই পেশাদার ক্রিকেটার নন। জীবিকার তাগিদে সবাই যুক্ত অন্য পেশার সঙ্গে। ভালোবাসা, ভালোলাগা, আবেগের জায়গা থেকেই ক্রিকেটে আসা তাদের। এই মানুষগুলোই প্রতিনিধিত্ব করছেন একটি দেশকে, খেলছেন আন্তর্জাতিক আঙিনায়। এশিয়া কাপ খেলতে পারাই তাদের জন্য বড় অর্জন।
সেই ক্রিকেটারদেরই যদি সুযোগ হয় স্বপ্নের তারকাদের সংস্পর্শ পাওয়ার, তাদের ড্রেসিং রুমে সময় কাটানোর, পরামর্শ পাওয়া, আড্ডা, উপহার বিনিময়ের! ভারতের ড্রেসিং রুমে এমন আনন্দময় সময়ই কেটেছে হংকংয়ের ক্রিকেটারদের।
নামিবিয়া, উগান্ডা, জার্সি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে… গত তিন মাস ধরে একের পর এক সফর করেছে হংকং দল। এখন খেলছে তারা এশিয়া কাপে। ওমানে বাছাই পর্বে দাপুটে পারফরম্যান্স করে দলটি জায়গা করে নিয়েছে মূল পর্বে।
‘এ’ গ্রুপে হংকংয়ের সঙ্গী ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমানে ক্রিকেটের শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে ওপরের দিকে যাদের অবস্থান। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, বাবর আজমের মতো সময়ের সেরা ক্রিকেটাররা রয়েছে এই দুই দলে।
হংকং দলের ক্রিকেটারদের এরই মধ্যে সুযোগ হয়েছে আধুনিক ক্রিকেটের এই তারকাদের বিপক্ষে খেলার। যারা বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারেরই আদর্শ, অনুপ্রেরণা। গত বুধবার হংকং লড়েছে ভারতের বিপক্ষে। অনেক কাছ থেকে দেখেছেন রোহিত-কোহলিদের।
তাতে যেন তৃপ্তি হচ্ছিল না বাবর হায়াত, আয়ুশ শুক্লা, নিজাকাত খানদের। ম্যাচ তারা হেরেছে ৪০ রানে। তবে হারটা প্রত্যাশিতই ছিল। তাদের লড়াই বরং মুগ্ধ করেছে অনেকেকে। ম্যাচ শেষে তাদের ভাবনায় ছিল, কীভাবে সঙ্গ পাওয়া যায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের।
ম্যাচ শেষ হতে না হতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে হংকংয়ের ক্রিকেটাররা স্থানীয় লিয়াজোঁ কর্মকর্তার মাধ্যমে অনুরোধ করেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করার। অনুরোধ সানন্দেই গ্রহণ করা হয়। ভারতীয় দল তাদের ড্রেসিং রুমে আমন্ত্রণ জানান হংকংয়ের ক্রিকেটারদের।
১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে দুই দলের ক্রিকেটাররা আড্ডা জমান। হংকং দলের প্রায় সবাই ছবি তোলেন রোহিত, কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া এবং ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও বর্তমান প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে।
ভারতীয় ড্রেসিং রুম থেকে বিদায় নেওয়ার আগে স্বাক্ষর করা একটি ব্যাট ও জার্সি উপহার হিসেবে দেন হংকংয়ের ক্রিকেটাররা। যেখানে লেখা ছিল, “বিরাট, একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার পাশে আছি, সামনে আরও অনেক অসাধারণ দিন অপেক্ষা করছে।”
এই ম্যাচের আগে ভারতের বিপক্ষে ২০১৮ সালে খেলেছিল হংকং, এশিয়া কাপে। এবারের মতো ওই ম্যাচেও খেলেছিলেন বাবর হায়াত। ২২ ওয়ানডে ও ৩৩ টি-টোয়েন্টি খেলা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বললেন, স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভাসছেন তিনি।
“তাদের ড্রেসিং রুমে যাওয়া এবং সব ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলা, বিশেষ করে বিরাট ও রোহিতের সঙ্গে, তাদের থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া; এই মুহূর্তগুলো তো আমাদের জন্য হরহামেশা আসে না। তাই এটা ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।”
দলের পেসার আয়ুশ শুক্লার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে গত জুলাইয়ে। ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার অকল্যান্ডের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং। হংকংয়ের হয়ে খেলার জন্য গত তিন মাস ধরে অনলাইন ক্লাস করছেন তিনি।
আয়ুশের কাছে মুহূর্তটি আরও বেশি মধুর। তার শেকড় যে ভারতে! ভারতীয় বাবা-মায়ের সন্তান এই পেসার সেদিন আউট করেন রোহিত শর্মাকে। তার খুশি পরে দ্বিগুন হয়ে যায় রোহিতের সঙ্গে কথা বলে ও ছবি তুলতে পেরে।
সবকিছু মিলিয়ে দিনটি আয়ুশের কাছে ছিল জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে।
“রোহিতকে আউট করা ছিল অসাধারণ মুহূর্ত, সেরা অনুভূতি। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, রোহিত শর্মাকে আউট করেছি। তাদের সঙ্গে একই মাঠে খেলতে পারাই আমার জন্য অনেক বড় অভিজ্ঞতা।”
“কে জানে, আবার কখন তাদের বিপক্ষে খেলার সুযোগ মিলবে… আশা করি পরবর্তী এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপে। এটা তাই ছিল এক জীবনের পাওয়া।”
ভারতীয় ক্রিকেটারদের আন্তরিকতা স্পর্শ করেছে আয়ুশকে।
“তারা খুবই ভালো। মনেই হয়নি প্রথমবার দেখা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা হয়েছে। আমি খুবই অবাক হয়েছি, খুশিও।”
হংকং দলের তিন-চারজন ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন। তবে বাকিরা বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকেন নিজেদের জীবিকায়। দলের সহ-অধিনায়ক কিঞ্চিৎ শাহর জুয়েলারি ব্যবসা আছে। স্কট ম্যাকেখনির নিজের ব্যবসা। কয়েকজন করেন সরকারি চাকরি।
আয়ুশ বললেন, এশিয়া কাপে ভারতের পেশাদার ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখে তারা শিখেছেন অনেক কিছু।
“বাইরে থেকে যখন তাদের ব্যাট কিংবা বল করতে দেখি, যে জিনিসগুলো আমরা শিখতে পারি সেটাও অনেক কিছু। তাদের জীবন-যাপন (ডায়েট, অনুশীলন), তাদের প্রস্তুতি নেওয়ার ধরন; সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে চাই আমরা এবং তাদের মতো পেশাদার হওয়ার চেষ্টা করি।”
“আমাদের জন্য ভারতীয় দলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল অনেক বড় পাওয়া। দিনশেষে, আমাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের কাছেই সেরা ব্যাপার কোহলির বিপক্ষে খেলতে পারা। সে কী করে, কীভাবে প্রস্তুতি নেয়, এটা দেখা ছিল দারুণ। মাঠের বাইরে তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। তারা কীভাবে অনুশীলন করে, কী কী করে?”
ভারতের বিপক্ষে হারার পর শুক্রবার হংকংয়ের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। বিশ্ব ক্রিকেটের আরেক বড় দল, যাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ তাদের সচরাচর হয় না। আয়ুশ বললেন, এশিয়া কাপে খেলা তাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।
“অবশ্যই, সুযোগ-সুবিধায় তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা জানি, যা কিছু আমরা জানতে পারছি এবং যা কিছু শেখা যায়, তা অনেক কিছু। সহযোগী দেশের জন্য এই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা বিশাল ব্যাপার। দারুণ কিছু শেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের।”