ছয়টি ফিফটির পর অবশেষে তিন অঙ্কের স্বাদ পেলেন মাহিদুল ইসলাম, ৮৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেন মাহমুদউল্লাহ।
Published : 22 Apr 2024, 07:08 PM
দারুণ সরব ব্যাট হঠাৎ হয়ে পড়েছিল নিশ্চুপ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাহিতুল টানা চার ম্যাচে ব্যর্থ দু অঙ্ক ছুঁতে। তবে বিবর্ণ সময়টা বেশি দীর্ঘায়িত হতে দিলেন না তরুণ এই কিপার-ব্যাটসম্যান। দারুণ সেঞ্চুরিতে তিনি রাঙালেন সুপার লিগের প্রথম ম্যাচ। তার সঙ্গে জ্বলে উঠলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহও। দুই প্রজন্মের দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব হারিয়ে দিল দুই সেঞ্চুরিয়ানের শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগ শুরুর দিনে শেখ জামালকে ৫ উইকেটে হারায় মোহামেডান।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে সোমবার সাইফ হাসান ও তাইবুর রহমানের সেঞ্চুরিতে ২৫৯ রানের পুঁজি পায় শেখ জামাল। মাহিদুলের সেঞ্চুরি ও মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৮৭ রানের সৌজন্যে শেষ ওভারে সেটি টপকে যায় মোহামেডান।
১২ ম্যাচে মোহামেডানের নবম জয় এটি। পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বর স্থান ধরে রেখেছে তারা। সমান ম্যাচে আট জয়ে চার নম্বরে শেখ জামাল।
প্রাথমিক পর্বের ১১ ম্যাচে সব মিলিয়ে ছয়টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন মাহিদুল। এর মধ্য পাঁচটি ছিল টানা পাঁচ ম্যাচে। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে ৯৪ রান করলেও তিন অঙ্কের দেখা তিনি পাননি। সুপার লিগে মেটালেন সেই আক্ষেপ।
৫ চার ও ৬ ছক্কায় তিনি করেন ১০১ রান। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে তৃতীয় সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মাহিদুল। ৮৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে মোহামেডানের জয় সঙ্গী করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
এই দুজনের জুটির আগে কিছুটা চাপেই ছিল মোহামেডান। রান তাড়ায় বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তিন নম্বরে নামা রুবেল মিয়াও ফেরেন দ্রুত।
আরেক ওপেনার রনি তালুকদার শুরুটা করেন দুর্দান্ত। টিপু সুলতানকে পরপর দুই ছক্কার পর তিনি মারেন দুটি চার। তবে উড়ন্ত শুরুর পর কিছুটা খোলসবন্দী হয়ে পড়েন তিনি। পরে আরও ৩৬ বল খেলে তিনি মারেন স্রেফ ৩টি চার।
শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৪১ রান করেন জিয়াউর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
৬৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। চতুর্থ উইকেটে দলকে এগিয়ে নেন মাহিদুল ও মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ১৭৯ রানের জুটি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়ে বের হবেন তারা।
জয় থেকে ১২ রান দূরে আউট হয়ে যান মাহিদুল। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ দ্রুত আউট হলে কিছুটা রোমাঞ্চের আভাস মেলে ম্যাচে। তবে সেটি হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল হক।
চলতি লিগে দ্বিতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ৩টি করে চার-ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। নিয়ন্ত্রিণে থেকেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় মোহামেডান।
সকালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই সৈকত আলির উইকেট হারায় শেখ জামাল। তিন নম্বরে নামা ফজলে মাহমুদও তেমন কিছু করতে পারেননি। স্রেফ ৩৭ রানে ২ উইকেট হারায় শেখ জামাল।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন সাইফ ও তাইবুর। তবে সময় একটু বেশিই নিয়ে ফেলেন তারা। রানের গতি দুজনে নিতে পারেননি প্রত্যাশিত জায়গায়।
ফিফটি করতে ৮৯ বল লেগে যায় সাইফের, ৭৭ বল তাইবুরের। ১৩৭ বলে আসে তাদের জুটির ১০০ রান।
পরে গতি কিছুটা বাড়াতে পারেন সাইফ। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে দশম সেঞ্চুরি ছুঁতে বল খেলেন ১৩৭টি। ৪৯তম ওভারে পায়ের পেশির টানে মাঠ ছেড়ে যান তিনি।
১৪৬ বলে ১২০ রানে ইনিংসে ৭ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা মারেন ২৫ বছর বয়সী ওপেনার। তার বিদায়ে ছেদ পড়ে ২১৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে।
চলতি লিগে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে দুটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে সাইফের সংগ্রহ ৫৪৪ রান। রানের তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি।
ফিফটির পর সাইফের তুলনায় বেশি আগ্রাসী ছিলেন তাইবুর। পঞ্চাশ থেকে শতরানে যে ৩৫ বল লাগে তার। ১১২ বলে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মূলত তার শেষের ঝড়েই আড়াইশ ছাড়াতে পারে শেখ জামাল।
কিন্তু মাহিদুল-মাহমুদউল্লাহর সামনে যথেষ্ট হয়নি তা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৯/২ (সাইফ ১২০ আহত অবসর, সৈকত ১, ফজলে মাহমুদ ১৭, তাইবুর ১০২*, জিয়াউর ২*; আবু হায়দার ৬-১-৩৪-০, নাসুম ১০-২-২৮-১, মিরাজ ১০-৪-১২-০, আসিফ ৭-০-৫৪-০, মাহমুদউল্লাহ ৮-০-৫৮-০, কামরুল ৭-০-৫৪-০, আরিফুল ২-০-১৭-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৬৩/৫ (ইমরুল ১৫, রনি ৪১, রুবেল ৮, মাহিদুল ১০১, মাহমুদউল্লাহ ৮৭*, মিরাজ ২, আরিফুল ৪*; রবিউল ৩-১-১৩-০, টিপু ৭-০-৬৮-০, রিপন ১০-০-৫১-২, শফিকুল ৯.৪-০-৫৯-১, তাইবুর ১০-১-২৩-১, জিয়াউর ৮-০-৩৩-১, সৈকত ১-০-৭-০, ফজলে মাহমুদ ১-০-৮-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম