ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দলকে জয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দিলেন নাসুম, পরে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস।
Published : 19 Apr 2024, 03:38 PM
প্রথম দুই ওভারে নাসুম আহমেদ নিলেন দুই উইকেট। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিনি ভেঙে দিলেন প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় জুটি। শেষ নয় সেখানেই। পরে শিকার ধরলেন আরও দুটি। পাঁচ উইকেটের ক্ষুধা মেটালেন তিনি পাঁচ বছর অপেক্ষার পর। তার বাঁহাতি স্পিনে সাজিয়ে দেওয়া মঞ্চ পরে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রাঙালেন ইমরুল কায়েস।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনে ১০ ওভারে ২২ রানে ৫ উইকেট নেন নাসুম। পরে ইমরুলের ঝড়ো অপরাজিত ইনিংসে ৫ উইকেটের জয় পায় মোহামেডান।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ১৩৬ রানের লক্ষ্য ২৩.২ ওভারে ছুঁয়ে ফেলে তারা। ছোট্ট রান তাড়ায় ইমরুল একাই করেন ৭১ বলে অপরাজিত ৯২।
মোহামেডানের জয়ে আলাদা করে বলতে হবে মেহেদী হাসান মিরাজের কথাও। এই অফ স্পিনার নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা নাসুমই। খেলা শেষে তিনি বলেছেন, তীব্র তাড়না নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন এই দিনের।
“অনেক দিন ধরে উইকেটের একটা ক্ষুধা নিয়ে ছিলাম। দু-একটা করে উইকেট পেতাম… প্রথম চার ম্যাচে মনে হয় দুইটা উইকেট পেয়েছি। বোলিংয়ের তালিকা যখন দেখতাম, একদম তলানিতে আছি... তো অনেক বেশি ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি যে, একটা ম্যাচে ভালো করব।”
এই সংস্করণে তার আগের ৫ উইকেট ছিল ২০১৯ প্রিমিয়ার লিগে। সেবার ব্রাদার্সের বিপক্ষেই ৪৯ রানে ৫ উইকেট নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। মাঝের পাঁচ বছরে ৫৬ ইনিংসে দুইবার চার উইকেট পেয়েছেন। অবশেষে পাঁচ উইকেটের ভুলতে বসা স্বাদ পেলেন আবার।
লিগে এখন পর্যন্ত ১১ ইনিংসে নাসুমের শিকার ১৮ উইকেট।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামা মোহামেযানকে দ্রুতই সাফল্য এনে দেন আবু হায়দার। প্রথম ওভারে আব্দুল মজিদকে ফেরান দারুণ ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি পেসার।
পরের ওভারে নাসুমের শিকার রহমতউল্লাহ আলি। বাঁহাতি এই স্পিনারের দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন অভিজ্ঞ ইমতিয়াজ হোসেন। স্লিপে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ দুটি ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ব্রাদার্সের শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন জাকিরুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান। জাকিরুল ২৫ রানে ফিরলে জোট বাধেন মাহমুদুল ও রাহাতুল ফেরদৌস।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নাসুম ভাঙেন ৫৩ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। ৪৫ রান করে ফেরেন মাহমুদুল।
রাহাতুল আরও কিছুক্ষণ এগিয়ে নেন ব্রাদার্সকে। তাকেও ৪৫ রানে থামান নাসুম। অন্যপ্রান্তে মিরাজ জোড়া আঘাত করলে দেড়শর আগেই গুটিয়ে যায় ব্রাদার্স।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন ইমরুল। অন্যপ্রান্তে রনি তালুকদার যেন দর্শক বনে যান। ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে রনির অবদান স্রেফ ১০ রান।
এরপর ১ রান করে ফেরেন মাহিদুল ইসলাম। প্রথম সাত ম্যাচে ছয়টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান সবশেষ চার ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন দুই অঙ্ক ছুঁতে।
লক্ষ্য কঠিন না হলেও রুবেল মিয়া, মাহমুদউল্লাহ, আরিফুল হকরা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। প্রাথমিক পর্বের আট ম্যাচে এক ফিফটিতে মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ মাত্র ১৫৭ রান।
তবে মোহামেডানকে বেগ পেতে হয়নি জিততে। মিরাজকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন ইমরুল। ৩৬ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর একই ছন্দে এগোতে থাকেন মোহামেডান অধিনায়ক। রহমতউল্লাহর বলে ছক্কায় দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
প্রাথমিক পর্বে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট মোহামেডানের ঝুলিতে। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগ শুরু করবে মোহামেডান। সমান ম্যাচে তিন জয়ে অবনমন অঞ্চল এড়াতে পেরেছে ব্রাদার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৩৪.৩ ওভারে ১৩৫ (রহমতউল্লাহ ১, মজিদ ০, ইমতিয়াজ ২, জাকিরুল ২৫, মাহমুদুল ৪৫, আসিফ ৫, রাহাতুল ৪৫, মনির ৪, আবু জায়েদ ৪, ওয়ালিদ ০, নুর ০*; আবু হায়দার ৪-০-২০-১, নাসুম ১০-২-২২-৫, কামরুল ৫-০-২৭-০, আসিফ ৪-০-১৮-১, মিরাজ ৭.৩-০-২৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-১৮-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ২৩.২ ওভারে ১৪০/৫ (ইমরুল ৯২*, রনি ১০, মাহিদুল ১, রুবেল ১৪, মাহমুদউল্লাহ ৭, আরিফুল ২, মিরাজ ৭*; নুর ৬-০-৫১-২, আবু জায়েদ ২-০-১৩-০, রহমতউল্লাহ ৫.২-০-২৯-০, রাহাতুল ৬-০-২৪-১, ওয়ালিদ ৪-০-২১-১)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ