ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলা, বোলিংয়ে প্রথম বল থেকেই উইকেটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া আর ফিল্ডিংয়ে নিজেদের উজাড় করে দেওয়া- ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টিতে এই ঘরানার ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। এই অভিযানের সেনানীদের একজন রনি তালুকদার জানালেন, সবার মধ্যে আগ্রাসী মনোভাবের এই বীজটা বুনে দিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
পরপর দুই বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর টি-টোয়েন্টিতে আরও একবার নতুন শুরুর ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার এই পথচলার শুরুটা হয়েছে দারুণ। প্রথম সিরিজেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৩-০তে হারিয়েছে তারা। আইরিশদের বিপক্ষেও সিরিজ জয় নিশ্চিতের পর অপেক্ষা এখন একই ফলের।
দুই সিরিজের এই পাঁচটি ম্যাচই খেলেছেন রনি। তার সঙ্গে লিটন দাসের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটিতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই পথ ধরে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন পরের ব্যাটসম্যানরা। বোলাররাও দাপুটে পারফরম্যান্সে প্রতিনিয়তই যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেদের।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটি করেন রনি। ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংসের সৌজন্যে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দ্বিতীয় ম্যাচেও উজ্জ্বল তার ব্যাট। রেকর্ড ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পথে খেলেন ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।
জাতীয় দলে নতুন অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন রনি প্রায় ৮ বছর পর। তার জন্য বলা যায় সবকিছুই নতুন। তবে একজনকে তিনি দেখছেন পুরনো রূপেই। এক যুগ আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যার সঙ্গে খেলেছেন, সেই সাকিব আল হাসানকে তিনি এখন পেয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে। এই অলরাউন্ডারের মানসিকতায় বরাবরের সেই আগ্রাসী রূপটাই এখনও দেখছেন তিনি।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টির আগের দিন চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রনি বললেন, দলের মধ্যে দাপুটে মনোভাবে আগুন জ্বেলে দিয়েছেন সাকিবই।
“সাকিব ভাই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। উনার সঙ্গে আবাহনীতে খেলেছি প্রায় ১২ বছর আগে। তখন একই ইনটেন্ট, একই মনমানসিকতা উনার ভেতরে ছিল। উনি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেন, ডমিনেট করার চেষ্টা করেন। উনার যে ডমিনেটিং চিন্তাভাবনা, সেটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব। আমরা ডমিনেট করার চেষ্টা করব।”
“আমাদের ভয়ডর থাকবে না, আমরা সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে যাব। হতে পারে কখনও আমরা ব্যর্থ হব, আবার সফল হব। তবে যদি আমরা এই জিনিসটা ধরে রাখতে পারি, এটা ধারণ করে চললে আমাদের সাফল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কোচ-অধিনায়কের চিন্তাভাবনা একই।”
টি-টোয়েন্টির দুই ম্যাচ হারের আগে ওয়ানডে সিরিজেও ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টিতে এক ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় তাদের হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। বাকি দুই ম্যাচে স্রেফ উড়ে গেছে আইরিশরা। টি-টোয়েন্টিতেও তাদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই।
রনি অবশ্য সেখানে আইরিশদের ব্যর্থতার চেয়ে নিজেদের কৃতিত্বই দেখছেন বেশি।
“আমরা ভালো খেলছি। আমাদের দল ভালো খেলছে, ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলছে, বোলাররা ভালো খেলছে, দলগতভাবে আমরা ভালো খেলছি।”
প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড হলেও অন্য যে কোনো বড় দলের সঙ্গে খেলার মতো মনোভাবই এই বাংলাদেশ দলের আছে বলে বিশ্বাস রনির।
“আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। আমরা প্রতিটা সিরিজে পরিকল্পনা করেই মাঠে নামি। ওটাই মাঠে দেখানোর চেষ্টা করি। ম্যাচ বাই ম্যাচ সেই পরিকল্পনাটা করি। সিরিজ অনুযায়ী, আমরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেমন খেলব, আয়ারর্যান্ডের বিপক্ষে কেমন খেলব- এমন নয়।”
“আমরা প্রতিটি ম্যাচ অনুযায়ী পরিকল্পনা করি। যদি এক ধাঁচে আমরা খেলতে পারি ভবিষ্যতে কাজে দেবে। এ জিনিসটাই আমরা এগিয়ে নিতে চাচ্ছি। দলগতভাবে আমরা যে জিনিসটা বুস্ট আপ করতে চাচ্ছি, আগ্রাসী খেলার একটা প্রবণতা যেন ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকে।”
আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার সেই পথচলায় শুক্রবার আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু দুপুর ২টায়।