শুবমান গিলের রেকর্ড ডাবল সেঞ্চুরিতে বিশাল স্কোর গড়ল ভারত। রান তাড়ায় মাঝপথেই হারের শঙ্কায় পড়ে যাওয়া দলকে নতুন করে আশা দেখালেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। শেষ ওভারে প্রয়োজন দাঁড়াল ২০ রান। সেঞ্চুরিয়ান ব্রেসওয়েল লং-অন দিয়ে প্রথম বলে মেরে দিলেন ছক্কা। পরের বল ওয়াইড। তাদের সম্ভাবনা তখন আরও উজ্জ্বল। কিন্তু শার্দুলের পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন ব্রেসওয়েল। অসাধারণ এক জয়ের আনন্দে মেলে উঠল ভারত।
হায়দরাবাদে বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে ১২ রানে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল। ৩৫০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩৩৭ পর্যন্ত যেতে পারে নিউ জিল্যান্ড।
ম্যাচের শুরুটা ছিল ‘গিলময়।’ ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ ওভারে ফেরার আগে কিউই বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। খেলেন ২০৮ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তার ১৪৯ বলের ইনিংসে ৯ ছক্কার পাশে চার ১৯টি।
ওয়ানডের ইতিহাসে দ্বিশতক করা সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন গিল। ২৩ বছর ১৩২ দিন বয়সে কীর্তিটি গড়েন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এই ইনিংসের পথে ভারতের হয়ে দ্রুততম এক হাজার ওয়ানডে রানের কীর্তিও গড়েন গিল, ১৯ ইনিংসে।
পরের ভাগে বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে লড়াই জমিয়ে তোলেন ব্রেসওয়েল। ১৩১ রানে ৬ উইকেট হারানো দলের আশার প্রদীপ হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন তিনি। ৭ নম্বরে নেমে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে করেন ১৪০ রান। তার ৭৮ বলের ইনিংসে ১০ ছক্কার সঙ্গে ছিল ১২টি চার।
সপ্তম উইকেটে ব্রেসওয়েলের সঙ্গে ১৬২ রানের জুটি গড়ার পথে ৫৭ রান করেন মিচেল স্যান্টনার। ওয়ানডেতে এই উইকেটে যা নিউ জিল্যান্ডের জুটির রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষেও কোনো দলের সপ্তম উইকেটে সেরা জুটি এটি।
রাজিব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতকে ভালো শুরু এনে দেন রোহিত ও গিল। তাদের ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর বিরাট কোহলি ও ইশান কিষান পারেননি টিকতে।
একপ্রান্তে নিজের মতো খেলে যান গিল। সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে গড়েন ৫৩ বলে ৬৫ রানে জুটি। হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে তার জুটি ছিল ৬৭ বলে ৭৪ রানের।
৫২ বলে ফিফটি করা গিল রানের গতি বাড়িয়ে তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৮৭ বলে। নান্দনিক সব শটের পসরা মেলে ধরে আগের ক্যারিয়ার সেরা ১৩০ রান ছাড়িয়ে ১২২ বলে পা রাখেন দেড়শতে।
ইনিংস শেষের যখন ৩ ওভার বাকি, গিলের রান তখন ১৬৯। প্রয়োজনে ঝড়ের বেগ বাড়িয়ে দেন তিনি। টিকনারের ওভারে দুই ছক্কার পর লকি ফার্গুসনকে টানা তিন ছক্কায় উড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যান গিল।
শেষ ওভারে হেনরি শিপলিকে ছক্কা মারার পরের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় গিলের চোখধাঁধানো ইনিংস। ভারতের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতকের ক্লাবে নাম লিখিয়ে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন তিনি।
রেকর্ড ইনিংসটি খেলার পথে ভাগ্যকেও পাশে পান গিল। ৪৫ রানে তার ক্যাচ ছাড়ার পর স্টাম্পিংও মিস করেন টম ল্যাথাম। পরে ১২৪ রানে গিলের ফিরতি ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি শিপলি।
বড় রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা ভালো ছিল না মোটেও। শুরুর ৬ ব্যাটসম্যানের পাঁচ জনই যান দুই অঙ্কে, কিন্তু কেউই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে ফিন অ্যালেনের ব্যাট থেকে।
১৩১ রানে ৬ উইকেট হারানো কিউইদের তখন চোখ রাঙাচ্ছিল বড় হার। খাদের কিনার থেকে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনার। দুই জনে দ্রুত রান তুলে সফরকারীদের এগিয়ে নিতে থাকেন লক্ষ্যের দিকে।
বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ফিফটি করেন ব্রেসওয়েল। সেঞ্চুরিতে পা রাখেন তিনি স্রেফ ৫৭ বলে। স্যান্টনারের পঞ্চাশ আসে ৩৮ বলে।
স্যান্টনারের ১ ছক্কা ও ৭ চারের ইনিংস থামিয়ে এই জুটির প্রতিরোধ ভাঙেন মোহাম্মদ সিরাজ। পরের বলেই তিনি বোল্ড করে দেন শিপলিকে। অন্যপ্রান্তে তাণ্ডব চালিয়ে যান ব্রেসওয়েল। কিন্তু শেষ ওভারে গিয়ে থামেন তিনিও।
আগামী শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৪৯/৮ (রোহিত ৩৪, গিল ২০৮, কোহলি ৮, কিষান ৫, সূর্যকুমার ৩১, হার্দিক ২৮, ওয়াশিংটন ১২, শার্দুল ৩, কুলদিপ ৫*, শামি ২*; শিপলি ৯-০-৭৪-২, ফার্গুসন ১০-০-৭৭-১, টিকনার ১০-০-৬৯-১, স্যান্টনার ১০-০-৫৬-১, ব্রেসওয়েল ৬-০-৪৩-০, মিচেল ৫-০-৩০-২)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ৩৩৭ (অ্যালেন ৪০, কনওয়ে ১০, নিকোলস ১৮, মিচেল ৯, ল্যাথাম ২৪, ফিলিপস ১১, ব্রেসওয়েল ১৪০, স্যান্টনার ৫৭, শিপলি ০, ফার্গুসন ৮, টিকনার ১*; শামি ১০-১-৬৯-১, সিরাজ ১০-২-৪৬-৪, হার্দিক ৭-০-৭০-১, কুলদিপ ৮-১-৪৩-২, শার্দুল ৭.২-০-৫৪-২, ওয়াশিংটন ৭-০-৫০-০)
ফল: ভারত ১২ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুবমান গিল