অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুর রাইডার্সের এগিয়ে চলার বড় কান্ডারি আজমতউল্লাহ ওমারজাই।
Published : 30 Jan 2024, 08:25 PM
নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মাদ নাবির সঙ্গে পাশাপাশি নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। একের পর এক বড় শটে কখনও কাভার, আবার কখনও মিড উইকেট দিয়ে বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলছিলেন এই আফগান অলরাউন্ডার। যা সহজেই মনোযোগ কাড়ছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মাঠের আশপাশে থাকা সবার।
শুধু অনুশীলনেই নয়, চলতি বিপিএলে মাঠের পারফরম্যান্সেও নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলেছেন ওমারজাই। সাকিব আল হাসান, বাবর আজম, নবিদের মতো তারকা থাকার পরেও রংপুর রাইডার্সের তিন জয়ের দুটিতেই নায়ক তিনি। অন্যটিতেও তিনি রেখেছেন বড় অবদান।
পাওয়ার প্লেতে সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী আর ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ দিকে ঝড় তোলার সামর্থ্যে রংপুরের জন্য পরিপূর্ণ প্যাকেজই হয়ে উঠেছেন ওমারজাই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মঙ্গলবারের ম্যাচেই যেমন ছয় ওভার বাকি থাকতে ক্রিজে গিয়ে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ২০ বলে ৩৬ রান। বল হাতে প্রথম ওভারেই তিনি নিয়েছেন লিটন দাসের উইকেট। পরে ফিরিয়ে দিয়েছেন জয়ের পথে কাঁটা হওয়ার শঙ্কা জাগানো খুশদিল শাহকেও।
এবারের আসরের শুরু থেকেই উজ্জ্বল ওমারজাই। মিরপুরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১২১ রানের লক্ষ্যে স্রেফ ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। সেদিন আট নম্বরে নেমে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ওমারজাই খেলেন ৩৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংস। চাপের মুখে অনবদ্য ব্যাটিংয়ে সেদিন জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সিলেটে এসে প্রথম ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন আফগান অলরাউন্ডার। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২৮ রানে হারে রংপুর। পরের ম্যাচেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ান ওমারজাই। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৭৯ রানের জয়ে তার অবদান ১৫ বলে ৩২ রান ও ১৪ রান খরচায় ২ উইকেট। এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্যের পরও অবশ্য ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পাননি সেদিন।
তবে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৮ রানে হারানো ম্যাচে আবারও পেলেন এই পুরস্কার। চলতি আসরে দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি গ্রহণ করে নিজের সাফল্যে দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন ওমারজাই।
“তারা (রংপুর রাইডার্স) হয়তো খুশি। বরং আমিই তাদের ওপর খুশি। কারণ তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে এবং আমার ওপর আস্থা রেখেছে। রংপুর রাইডার্সের হয়ে আমি সবসময় নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
রংপুরের প্রতি ওমারজাইয়ের কৃতজ্ঞ থাকার কারণও অবশ্য আছে যথেষ্ট।
বিপিএলের গত আসরেও একই দলে খেলেন তিনি। সেবারই প্রথম নতুন বলে তার সামর্থ্য কাজে লাগায় কোনো দল। আস্থার প্রতিদানও দারুণভাবে দেন ওমারজাই। সেবার খেলা ৮ ম্যাচে তিনি নেন ১৫ উইকেট। এর মধ্যে ১১টিই পাওয়ার প্লেতে।
এমন পারফরম্যান্সের পর আফগানিস্তান জাতীয় দলেও নিয়মিতই নতুন বল পেতে শুরু করেন ওমারজাই। গত বছরের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে পরপর দুই বলে ডেভিড ওয়ার্নার ও জশ ইংলিসের উইকেট নেন তিনি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে নেন ৭ উইকেট।
বিশ্বকাপে অবশ্য বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাট হাতে বেশি কার্যকর ছিলেন ওমারজাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চাপের মুখে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৭ রানের ইনিংসসহ দলের দ্বিতীয় সর্বাধিক ৩৫৩ রান করেন তিনি।
বিশ্বকাপের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার বিপিএলেও তিনি নিয়মিতই খেলছেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১২৫ রান। এই রান করেছেন তিনি ৪১.৬৬ গড় ও ১৫২.৪৩ স্ট্রাইক রেটে। ছক্কা মেরেছেন ৮টি। এখন পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন শুধু এভিন লুইস, ১২টি।
রংপুরের আগে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার হয়ে ২০২২ সালের বিপিএল খেলেন ওমারজাই। তবে সেবার স্রেফ দুই ম্যাচে সুযোগ পান তখনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেলা অলরাউন্ডার। ওই বছরই এশিয়া কাপে তাকে দেখে মুগ্ধ হন রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। পরে দলের সঙ্গে কথা বলে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে ওমারজাইকে নেন তিনি।
সোহানের পর্যবেক্ষণ সত্যি প্রমাণ করেই বিপিএলে তারকাদের ভিড়েও নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করে ছুটে চলেছেন ওমারজাই। হয়ে উঠেছেন রংপুরের ধ্রুবতারা।