সাইফ হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারলেন রাহাতুল ফেরদৌস। লম্বা সময় হাওয়ায় ভেসে থাকা বল লং অন সীমানায় মুঠোয় নিলেন নাদিফ চৌধুরি। দুই হাত ছড়িয়ে পিচের পাশেই উল্লাসে মাতলেন সাইফ, মুহূর্তের মধ্যে যোগ দিলেন বাকি ফিল্ডাররাও। শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলায় ঢাকার এমন উদযাপন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে জাতীয় ক্রিকেট লিগের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে ঢাকা বিভাগ। প্রথম স্তরের পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচে সিলেটকে ৫২ রানে হারিয়েছে সাইফের নেতৃত্বাধীন দল।
২০২১-২২ মৌসুমে সবশেষ শিরোপা জিতেছিল রাজধানীর দলটি। গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর বিভাগ। এবার এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থেকেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে ঢাকা। প্রতিযোগিতায় সব মিলিয়ে এটি তাদের সপ্তম শিরোপা।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাহিদুল ইসলামের সেঞ্চুরিতে ২৬৬ রান করে ঢাকা। জবাবে সিলেটের ইনিংস থামে ২১১ রানে। দ্বিতীয়বারে ঢাকা গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে। পরে ২১০ রানের লক্ষ্যে ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির সৌজন্যে ঢাকার জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন মাহিদুল।
পাঁচ ম্যাচে চার জয় ও এক ড্রয়ে ঢাকার সংগ্রহ ৯ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে সিলেট জিতেছে স্রেফ একটি। এছাড়া এক ড্রয়ের সঙ্গে তারা হেরেছে বাকি তিন ম্যাচ।
শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে সম্মিলিত পারফরম্যান্সের সুফল পেয়েছে ঢাকা। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা দশে নেই তাদের কোনো ব্যাটসম্যান। দুই ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে ৩২০ রান ১২ নম্বরে থাকা রনি তালুকদার।
বোলারদের মধ্যে নয় ইনিংসে ২৪ উইকেট নিয়ে তিন নম্বরে নাজমুল ইসলাম। বাঁহাতি পেসার সালাউদ্দিন শাকিল ৯ ইনিংসে ১৭ উইকেট নিয়ে আছেন ৯ নম্বরে।
ঢাকার শিরোপা জয়ের ম্যাচে দেখা দিয়েছে আম্পায়ারিং বিতর্ক। ম্যাচের তৃতীয় দিন সামাজিক মাধ্যমে সিলেটের প্রধান কোচ রাজিন সালেহ লিখেছেন, “জাতীয় লিগে ক্রিকেটে আম্পায়ারিং অতিব নিম্নমানের। কারো কোন জবাবদিহিতা নেই। এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক খেলোয়াড়।”
পরে ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের ছয়টি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের ভিডিও আপলোড করে তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকাকে জেতানোর জন্য...।”
চ্যাম্পিয়ন হতে ম্যাচের শেষ দিন ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৬ উইকেট। সিলেটের করতে হতো ১৭১ রান। ৪ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে দেখতে দেখতে ৬৭ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় সিলেট।
সপ্তম উইকেটে আশা দেখান জাকের আলি ও জাকির হাসান। দুজনের জুটিতে আসে ৫৫ রান। মধ্যাহ্ন বিরতির পরপর জাকের ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন। ফলে পুরো দায়িত্ব পড়ে জ্বরের কারণে টপ-অর্ডারের বদলে সাত নম্বরে নামা জাকিরের কাঁধে।
নাজমুলের বলে আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তে থামে জাকিরের ৪৪ রানের ইনিংস। তখনই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ঢাকার জয়। রাহাতুল কিছুক্ষণ লড়াই করলেও পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া কিছু করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ২৬৬
সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ২১১
ঢাকা বিভাগ ২য় ইনিংস: ১৫৪
সিলেট বিভাগ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২১০) (আগের দিন ৩৯/৪) ৭১.২ ওভারে ১৫৭ (জাকের ৩০, তৌহিদুল ১৫, জাকির ৪৪, রাহাতুল ২১, রাজা ৫, খালেদ ০, নাঈম ০*; নাজমুল ২২-৩-৫৬-৩, তাইবুর ১২-১-২৩-১, শুভাগত ২৬-৭-৫০-৪, শাকিল ৩-০-৮-০, সাইফ ৬.২-১-৯-২, রিপন ২-১-৮-০)
ফল: ঢাকা বিভাগ ৫২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম