৪৩ বছর বয়সে ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি, প্রায় ৬ বছর পর স্বাদ পেলেন আইপিএলে ম্যাচ-সেরা হওয়ার।
Published : 15 Apr 2025, 09:58 AM
ধারাভাষ্যে গ্রায়েম সোয়ান আরেকবার মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হলেন, “ভুলে যাবেন না, খেলাটি হচ্ছে লাক্ষ্নৌতে…!” ম্যাচের শেষ দিকে এসে ভেন্যুর কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ ছিল বটে। লাক্ষ্নৌর একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলছিল ঘরের দল লাক্ষৌ সুপার জায়ান্টস। কিন্তু গ্যালারিজুড়ে হলুদের স্রোত দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থকই বুঝি বেশি মাহেন্দ্র সিং ধোনি যখন মাঠে নামলেন, গ্যালারি থেকে ভেসে আসা উল্লাস আর গর্জনে মনে হলো, ভেন্যু বুঝি চেন্নাই!
আইপিএলে এই দৃশ্য অবশ্য নতুন নয়। ধোনিকে ঘিরে উন্মাদনা নানা সময়ই দেখা গেছে নানা ভেন্যুতে। তবে এবার তার পারফরম্যান্স, ব্যাটিং অর্ডার, এই বয়সেও খেলা চালিয়ে যাওয়া, দলের পারফরম্যান্স, সব মিলিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে ছিলেন এই কিংবদন্তি। এসবের মধ্যেও লাক্ষ্নৌতে এমন ভালোবাসা পাওয়া তার জন্য নিশ্চয়ই প্রেরণাদায়ী। সেটির প্রতিদানও দিলেন তিনি। এই ৪৩ বছর বয়সেও মনে করিয়ে দিলেন সেরা সময়কে। দারুণ ক্যামিও খেলে দলকে জিতিয়ে পেলেন প্রায় ভুলে যাওয়া স্বাদ।
১১ বলে ২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে যাওয়া দল পেল জয়ের দেখা। ছোট্ট কিন্তু ম্যাচ জেতানো ইনিংস ধোনিকে এনে দিল ম্যান অব দা ম্যাচের স্বীকৃতি। আইপিএল তথা স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রায় ৬ বছর পর এই স্বাদ পেলেন তিনি।
সবশেষ ম্যাচ-সেরা হয়েছিলেন তিনি ২০১৯ সালের ১ মে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ২২ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সেদিন।
ওই ম্যাচের আগে ২০১৯ আইপিএলে আরও দুটি ম্যাচে ম্যাচ-সেরা হয়েছিলেন তিনি। পরে বাড়তে থাকে তার বয়স, কমতে থাকে ব্যাটের ধার, যোগ হয় চোট আর অস্ত্রোপচারের ধকল, বদলে যায় ভূমিকা। পারফরম্যান্সে ওঠানামা চলতে থাকে। তার অবসর নিয়ে গুঞ্জন তো গত ৫-৬ বছর ধরেই নিয়মিত চলছে। ‘এবারই কি তার শেষ আইপিএল’, এই প্রশ্ন প্রতিটি আইপিএলেই চলছে। তিনি তবু ছুটছেন। এবার তো রুতুরাজ গায়কোয়াড় চোটে পড়ার পর দলের নেতৃত্বও দিচ্ছেন আবার।
গত আইপিএলে ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে নেমে স্রেফ কয়েকটি বল খেলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন নতুন ভূমিকায়। এবার তবু তাকে নিয়ে জন্ম হয় অনেক প্রশ্নের। রান তিনি করছিলেন কিছু। দুই ম্যাচে করেছেন ৩০, আরেকটিতে ১২ বলে ২৭। কিন্তু ব্যাটিংয়ের ধরন, কার্যকারিতা, ব্যাটিং অর্ডার, এসব মিলিয়ে আলেচনা চলছিল, ধোনি চেন্নাইয়ের হয়ে বোঝা হয়ে উঠেছেন কি না। সাবেক ক্রিকেটারদের কেউ কেউ বলাবলি করছিলেন, আরও আগেই সসম্মানে অবসর নেওয়া উচিত ছিল তার। সামাজিক মাধ্যমে নানা ট্রল তো চলছিলই।
অবশেষে ধোনি দেখাতে পারলেন, তার ভেতরের বারুদ একদম মিইয়ে যায়নি।
লাক্ষ্নৌর বিপক্ষে ১৬৭ রান তাড়ায় সোমবার যখন ক্রিজে যান ধোনি, ৫ ওভারে যখন চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ৫৬ রান। উইকেট বাকি ৫টি।
ক্রিজে থাকা শিভাম দুবে তখন টাইমিং করতে ভুগছিলেন। ধোনি গিয়েই বদলে দিলেন চিত্র। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তিনি টানা দুটি বাউন্ডারি মারলেন আভেশ খানের বলে। পরের ওভারে দারুণ শটে ছক্কায় ওড়ালেন শার্দুল ঠাকুরকে।
আরেক প্রান্তে জেগে উঠলেন শিভাম। দুজনের মিলে লক্ষ্যটা তাড়া করলেন সহজেই। ৫৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ শেষ তিন বল আগেই।
ম্যাচ শেষে শিভাম কৃতিত্ব দিলেন সঙ্গীকে।
“এমএস ধোনি ক্রিজে এসে যখন বোলারদের তুলাধুনা করা শুরু করলেন, আমার কাজ সহজ হয়ে উঠল। আমার পরিকল্পনা এরপর ছিল সাধারণ, বলে খুব জোরে হিট না করা এবং উইকেট না হারানো।”
এই নিয়ে ১৮ বার আইপিএলে ম্যাচ-সেরা হলেন ধোনি। স্পর্শ করলেন তিনি ভিরাট কোহলি ও ডেভিড ওয়ার্নারকে। তাদের ওপরে আছেন কেবল তিনজন- রোহিত শার্মা হয়েছে ১৯ বার, ক্রিস গেইল ২২ বার, আর সবার ওপরে এবি ডি ভিলিয়ার্স ২৫ বার।