টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা কম দেখছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন, সুপার এইট পর্বে যেতে তাই শ্রীলঙ্কাকে হারানোর আশা করছেন তিনি।
Published : 14 May 2024, 07:56 PM
‘প্রত্যাশা…? আপনার প্রত্যাশা কী’- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাশার প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্নটি করে হাসলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন। এরপর অবশ্য প্রত্যাশার কথা শোনালেন তিনি। যেখানে মিশে থাকল বাস্তবতার ছোঁয়া। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিকেই মহাগুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা তার চোখে ‘কম।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে আগামী ১ জুন শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট শুরু ৭ তারিখ। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। 'ডি' গ্রুপে তাদের পরের তিন ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে।
ওয়ানডেতে যেমন-তেমন, টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়। এখন পর্যন্ত আট আসরে বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের জয় কেবল ৩টি। এর দুটি আবার ২০২২ সালে সবশেষ টুর্নামেন্টে, জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের সার্বিক পরিসংখ্যানও আশা জাগানিয়া নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজটি জিতলেও মাঠের পারফরম্যান্স জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। শেষ ম্যাচটি হেরে আরও প্রকট হয়ে সামনে এসেছে সেসব বিষয়।
একদমই ছন্দে নেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। স্টাইলিশ ওপেনার লিটন কুমার দাসও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন বেশ কিছু দিন ধরে। বিকল্প ওপেনার সৌম্য সরকারের ব্যাটেও নেই ধারাবাহিকতা। টপ-অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই থেকেই যাচ্ছে।
তাসকিন আহমেদের চোটে বোলিং বিভাগের শক্তিও কমেছে অনেকটা। বিশ্বকাপের কোনো এক পর্যায়ে তাকে পাওয়ার আশা করছে দল। শেষ পর্যন্ত তাকে যে টুর্নামেন্টে পাওয়া যাবে, জোর দিয়ে সেটি বলার সুযোগ আপাতত নেই।
তাই বলে আশা হারাতে নারাজ প্রধান নির্বাচক। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি জিততে পারলে সুপার এইট খেলার বাস্তব ছবি এঁকে দেখালেন গাজী আশরাফ।
“প্রত্যাশা তো নিশ্চয়ই থাকে। এটাকে ভেঙে ভেঙে দেখতে হবে। প্রাথমিক রাউন্ডে প্রত্যাশা যতটা বেশি সুযোগ আছে... আমি যদি বলি, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমরা আগে থেকেই হেরে বসে থাকব, তা নয়। প্রতিটি ম্যাচ আমরা জেতার জন্য চেষ্টা করব।”
“বাস্তবতার নিরিখে আমি মনে করি, মোমেন্টাম পাওয়ার জন্য প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গায় দুটি দলই বিশ্বাস করে, তারা একে অন্যকে হারাতে পারে। দুটি দলই চাপের মধ্যে থাকবে। সেটায় যারা জয়ী হবে, যদি আমরা জয়ী হই, সেখান থেকে আমাদের বাকি তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল দেখছি।”
গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে নুয়ান থুশারার স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের বোলিংয়ের কোনো জবাবই দিতে পারেননি টপ-অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। বিশ্বকাপেও এমন কিছু হলে প্রথম ম্যাচেই সুপার এইট খেলার স্বপ্নে লাগতে পারে বড় ধাক্কা।
আর সেই সম্ভাবনা অনেকটা শেষ হয়ে যেতে পারে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেই। কুইন্টন ডি কক, এইডেন মারক্রাম, হাইনরিখ ক্লসেন, ডেভিড মিলারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের বাস্তবিক সম্ভাবনা যে খুবই কম, তা মেনে নিয়েছেন প্রধান নির্বাচক।
“দক্ষিণ আফ্রিকাকেও যে হারানো যাবে না, সেটি আমি বলছি না। তবে তারা সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের ক্রিকেট খেলছে দলগতভাবে বা তাদের ক্রিকেটাররা খেলছে পার্শ্ববর্তী দেশে, সেই ছন্দের আলোকে অবশ্যই তাদের সঙ্গে আমাদের একটা ব্যবধান আছে। তাদের খারাপ খেলে কিংবা আমাদের বেশি ভালো খেলে ব্যবধানটা কমাতে হবে। এছাড়া আমি এই ঘাটতি ঘোচার বাস্তবিক অর্থে তুলনামূলক অনেক কম সম্ভাবনা দেখছি। সম্ভাবনাটা হিসেব করলে, বাস্তবিক সম্ভাবনার কথা যদি বলেন, কম।”
এর আগে সংবাদমাধ্যমে শান্ত বলেছিলেন, বিশ্বকাপে প্রত্যাশার পারদ যেন খুব বেশি উঁচুতে না নেওয়া হয়। প্রত্যাশার মাত্রা বেশি হলেও সেটি মাতামাতি যেন অন্তত দমিয়ে রাখা হয়, সেই অনুরোধও করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর প্রত্যাশার প্রসঙ্গে অধিনায়কের ওই মন্তব্যের প্রসঙ্গে শান্তর পক্ষেই ব্যাট ধরেন প্রধান নির্বাচক।
“আমাদের দেশে ক্রিকেটের একটা বিশাল উন্মাদনা আছে। যখন আমরা বড় আসরে খেলিনি, তখনও দেখেছি গ্যালারি ভর্তি দর্শক। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি থেকে সেটা লক্ষ্য করছি। সেই উন্মাদনা এখন ব্যাপকভাবে ডালপালা মেলেছে। সেই আলোকে হয়তো দলনায়ক বুঝতে পেরেছেন এবং সবাইকে এই ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন যেন অতিরিক্ত আশা না থাকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমরা সেই পর্যায়ে এখনও যাইনি যে, আপনি দলটাকে সেমি-ফাইনালে ধরে নিতে পারবেন। যে কোনো কিছু হতে পারে।”
“আমার মনে হয়, তিনি (শান্ত) যেটা বলতে চেয়েছেন, ধাপে ধাপে এগোনোর জন্য। প্রথম ধাপ, এরপর যদি দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া যায়। এরপর সেখানে একটা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি গড়ে তুলতে পারে… বাস্তব শক্তির নিরিখেই তিনি হয়তো এই কথা বলার চেষ্টা করেছেন। অবশ্যই আমরা আশা করি, প্রথম রাউন্ড পার হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেন খেলতে পারি। তখন আবার প্রচেষ্টা থাকবে পরের ধাপে যাওয়ার।”