বিশ্বকাপে সব ম্যাচ হেরে ঘরের মাঠে পরের আসরে তাকিয়ে বাংলাদেশ

দেশের মাঠে পরের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভিন্ন কিছু দেখাতে পারবে, বিশ্বাস অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলমের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2023, 05:34 AM
Updated : 22 Feb 2023, 05:34 AM

সেমি-ফাইনালে খেলার স্বপ্ন তো এখন পরিহাসের প্রতিশব্দ। একটি ম্যাচ জয়ের আশাও পূরণ হয়নি। আইসিসি উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টানা হারের ধারায় ছেদ পড়েনি এবারও। দল এখন তাকিয়ে দেশের মাঠে পরের বিশ্বকাপে। অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলমের বিশ্বাস, পরের বিশ্বকাপে ভিন্ন কিছু করে দেখাবে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে এবার বাংলাদশের জয়ের শেষ আশাও বিধ্বস্ত হয় মঙ্গলবার। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ উইকেটে হেরে যান নিগার সুলতানা, জাহানারা আলমরা।

আগেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়া দল শেষ ম্যাচটিও হেরে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল টানা চার হার দিয়ে।

ব্যাটিংয়ে এই ম্যাচেও ভালো কিছু হয়নি। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ওভার খেলে তারা করতে পারে স্রেফ ১১৩ রান। এই পুঁজি নিয়েও লড়াই হয়তো করা যেত ফিল্ডিং ভালো হলো। কিন্তু দুটি করে রান আউট, ক্যাচ ও স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া হলে আর কী-ই বা করার থাকে!

আগের ম্যাচগুলিতেও ফিল্ডিং নিয়ে দলকে ভুগতে হয়েছে বাজেভাবে। শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই হলো ফিল্ডিংয়ে সুযোগ হাতছাড়া করা নিয়ে। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা জাহানারা বললেন হতাশার কথা।

“অবশ্যই খুব খারাপ লাগে। শুধু পেস বোলার হিসেবে আমারই নয়, মাঠে ১১ জনের সবারই খারাপ লাগে। বিশেষ করে, যে সুযোগ হাতছাড়া করে, তার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে। তবে সেই মুহূর্ত থেকে ইতিবাচক ভাবনা রেখে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। এভাবেই প্রতিটি ক্রিকেটারের ভাবা উচিত।”

এবার নিয়ে ৫টি বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশের জয় স্রেফ ২টি, হার ১৯টি। দেশের মাঠে ২০১৪ আসরে আয়ারল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর টানা ১৭ ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা নেই। স্কোরকার্ড বলছে, পারফরম্যান্সে উন্নতির ছাপও খুব একটা নেই।

শ্রীলঙ্কার কাছে ৭ উইকেটে হেরে এবার বিশ্বকাপ শুরু। এরপর অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে ৮ উইকেটে, নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৭১ রানে, শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০ উইকেটে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের রান ছিল ১২৬, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১০৭, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৮ আর দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ১১৩। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একার লড়াইয়ে ৫৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। এছাড়া গোটা আসরে দলের আর কোনো ব্যাটার ৩৫ রানের কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে শুরুতে তিনটি উইকেট নেওয়ার সময় সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। পরে আর কোনো উইকেটই নিতে পারেনি তারা। এছাড়া কোনো ম্যাচেই জয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

তবে জাহানারার বিস্ময়কর দাবি, তিনটি ম্যাচে ভালো সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলেন তারা। সেখানে দায় দিলেন তিনি ভাগ্যকে।

“এটা আমাদের পঞ্চম বিশ্বকাপ। প্রতিটি বিশ্বকাপে দলের গর্বিত সদস্যা আমি। এবারের বিশ্বকাপকে তবু আমি ব্যতিক্রম মনে করি। এবার তিনটি ম্যাচে খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম আমরা… শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া এবং আজকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। নিউ জিল্যান্ড ম্যাচই শুধু ব্যতিক্রম। তিনটি ম্যাচে আমরা কাছাকাছি ছিলাম।”

“হয়তো ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। আশা করি, পরের বিশ্বকাপে ভাগ্যকে পাশে পাব আমরা। আমাদের ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে আরও কাজ করব। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আমরা আরও ভালোভাবে করব। এখান থেকে অনেক কিছু আমরা বয়ে নিতে পারব। অনেক ম্যাচ আছে সামনে। আশা করি সেই ইতিবাচক দিকগুলো আমরা কাজে লাগাব।”

জাহানারার পরের যুক্তিটির অবশ্য শক্ত ভিত্তি আছে বলা যায়। বিশ্বকাপ ছাড়া বড় দলগুলির সঙ্গে খেলার সুযোগ বাংলাদেশ পায় না বললেই চলে। তবে আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হতে পারায় এখন যেহেতু নিয়মিতই ম্যাচ পাবে বাংলাদেশ, দেশের মাঠে পরের বিশ্বকাপে নতুন কিছুর আশায় জাহানারা।

“পাঁচটি বিশ্বকাপ খেললেও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে, এমনকি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও খুব বেশি খেলার সুযোগ পাই না আমরা। কোনো দলের বিপক্ষেই বেশি খেলতে পারিনি। মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পেরেছি। দুই বছর পরপর বিশ্বকাপে এরকম ম্যাচ খেলতে পারি।”

“এবারের পর সামনে ভিন্ন কিছু আপনারা দেখতে পাবেন। কারণ, আমরা এফটিপিতে থাকব (আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপ), অনেক ম্যাচ আমাদের অপেক্ষায়। বেশি ম্যাচ খেলতে পারব আমরা, পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা হবে আরও। যেমনটি আগে বললাম, এবার তিনটি ম্যাচে খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম আমরা। যদি আমাদের অভিজ্ঞতা থাকত, তাহলে অন্যরকম হতে পারত। এই বিশ্বকাপের পর অন্যরকম কিছু দেখতে পারবেন।”

আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশে হবে উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর।