সেঞ্চুরি করেও অবশ্য দিনের শেষটা হতাশায় হয়েছে এনামুলের, আর দলগত সাফল্যে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছেন শাহরিয়ার।
Published : 23 Apr 2025, 07:51 PM
শহিদুল ইসলামের ডেলিভারিটি অফসাইডে খেলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন সৌম্য সরকার। ব্যাটের হাতলের ওপর হেলমেট রেখে, ব্যাটকে বুকে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন ফেললেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। লম্বা সময় পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া বলে কথা।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বুধবার সেঞ্চুরি ছুঁয়ে আরও এগিয়ে যেন সৌম্য। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বোলারদের ওপর ছড়ি গুঁড়িয়ে অপরাজিত থাকেন ১৫৩ রান করে। তিনে নেমে ১১২ বলের ইনিংসটি ৬টি ছক্কা ও ১২টি চারে গড়েন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ব্যাটসম্যান।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২০ ইনিংস পর শতকের দেখা পেলেন সৌম্য। সবশেষটি করেছিলেন ২০২৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে, ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯। এই সংস্করণে এ নিয়ে অষ্টম সেঞ্চুরি করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে এদিন সেঞ্চুরি উপহার দেন এনামুল হকও। আগের ম্যাচে স্বীকৃত ক্রিকেটে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের অধিনায়ক এবার করেন ১০৮ রান। আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে তার ১১৩ বলের ইনিংসে চার ৯টি, নেই ছক্কা।
সৌম্য-এনামুলের সেঞ্চুরির দিনে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন আবাহনীর ওপেনার শাহরিয়ার কমল। স্রেফ ৪ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের স্বাদ নিতে পারেননি তিনি। ১০০ বলে ৯৬ রানের ইনিংসটি ৩ ছক্কা ও ৮টি চারে সাজান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
দিনের শেষভাগে যদিও দলগত সাফল্যে হাসিমুখে মাঠ ছাড়েন শাহরিয়ার, আর সেঞ্চুরি করেও হতাশ হতে হয় এনামুলকে।
সৌম্যর সেঞ্চুরিতে রূপগঞ্জের বড় জয়
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ৩ উইকেটে ৩৩৩ রান করে রূপগঞ্জ। জবাব দিতে নামা অগ্রণী ব্যাংককে ১৩০ রানে গুটিয়ে ১০৩ রানের বড় জয় তুলে নেয় তারা।
রূপগঞ্জকে ভালো শুরু এনে দেন তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসান। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৩ বলে ৪৩ রান করা তানজিদের বিদায়ে ভাঙে ৮১ রানের উদ্বোধনী জুটি। সাইফের ব্যাট থেকেও আসে ৪৩ রান, এক ছক্কা ও ৪টি চারে।
এরপর দলের রান বাড়ান সৌম্য। চলতি লিগে আগে দুটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এদিন ফিফটি করেন ৫৮ বলে। পরে রানের গতিতে দম দেন তিনি। কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ৯২ বলে।
সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন সৌম্য। পরের পঞ্চাশ রান করেন স্রেফ ১৯ বলে। তার সঙ্গে মেহেদি মারুফের ৭৭ ও আফিফ হোসেনের ১৬১ রানের জুটিতে তিনশ ছাড়ানো পুঁজি পায় রূপগঞ্জ।
১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। মারুফ করেন ২৪ রান।
রান তাড়ায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই পান ভালো শুরু। কিন্তু তাদের মধ্যে কেবল মার্শাল আইয়ুব ছুঁতে পারেন পঞ্চাশ। ৩ চারে ৯৬ বলে ৭৪ রান করেন তিনি।
পরের ব্যাটসম্যানদের কেউ ২১ রানের বেশি করতে পারেননি। তাতে বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় অগ্রণী ব্যাংককে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ৩৩৩/৩ (সাইফ ৪৩, তানজিদ ৪৩, সৌম্য ১৫৩*, মারুফ ২৪, আফিফ ৪৯*; রবিউল ৮-০-৫৫-০, শহিদুল ৮-০-৭০-০, রুয়েল ৯-১-৯১-০, শুভাগত ১০-০-২৬-১, আরিফ ৬-১-৩৩-১, তাইবুর ৬-০-৪১-০, জাহিদ ৩-০-১৩-১)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৩.১ ওভারে ২৩০ (ইমরানউজ্জামান ২৯, অমিত ১৮, ইমরুল ২৩, শুভাগত ৩৯, মার্শাল ৭৪, তাইবুর ৪, জাহিদ ২১, শহিদুল ৮, রবিউল ০, আরিফ ১২, রুয়েল ০*; আব্দুল ৪-০-২৩-১, তানভির ১০-০-৬৬-০, রিজওয়ান ৩-০-৩৪-২, সাইফ ৮-১-২৮-৩, স্বাধীন ৯.১-১-৪০-২, টিপু ৮-০-৩৮-২, আকবর ১-০-১-০)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১০৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার
আবাহনীর রোমাঞ্চকর জয়
শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ১০ রানের দারুণ জয় পেয়েছে আবাহনী। টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ২৪৯ রান করা দলটি প্রতিপক্ষকে থামিয়ে দিয়েছে ২৩৯ রানে।
আবাহনীকে ভালো শুরু এনে দেন শাহরিয়ার ও পারভেজ হোসেন। দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১০৭ রানে। ৭ চারে ৪৫ রান করে পারভেজ ফিরলেও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান শাহরিয়ার। শেষ পর্যন্ত যদিও তা পারেননি তিনি।
মেহরব হাসানের ৪৫ রানের ইনিংস ছাড়া পরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউ ২০ রানও ছুঁতে পারেননি। তাতে কোনোমতে আড়াইশ করে আবাহনী।
জবাবে গাজী গ্রুপকে একাই টানেন এনামুল। ক্যারিয়ারের ২৪তম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরিতে দলকে জয়ের স্বপ্নও দেখান তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, তার ব্যাটেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছাবে গাজী গ্রুপ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য হতাশ করেন তিনি।
শেষ ৩০ বলে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৮ রান দরকার ছিল গাজী গ্রুপের। কিন্তু পরপর দুই ওভারে আব্দুল গাফফারের পর এনামুলকে হারিয়ে তাদের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়।
এনামুল ছাড়া গাজী গ্রুপের আর কেউ ৪০ রানও করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৪৮.২ ওভারে ২৪৯ (শাহরিয়ার ৯৬, পারভেজ ৪৫, জিশান ০, মিঠুন ৮, মেহরব ৪৫, মোসাদ্দেক ১০, মাহফুজুর ১৯, শামসুল ৩, মৃত্যুঞ্জয় ১৫, রকিবুল ১, রিপন ৩*; সালমান ৩-০-১৬-০, আব্দুল গাফফার ৯-০-৪৫-১, লিওন ১০-০-৪৫-০, তোফায়েল ৫-০-৪৪-০, পারভেজ জীবন ১০-০-৪০-৩, ওয়াসি ৮.২-১-৩৮-৪, আবু হাসিম ৩-০-২১-১)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৯.৩ ওভারে ২৩৯ (সাদিকুর ০, এনামুল ১০৮, শামসুর ২৭, সাব্বির ৩, ওয়াসি ৩৮, সালমান ৭, তোফায়েল ০, পারভেজ ১২, আব্দুল গাফফার ১৭, লিওন ৭*, আবু হাসিম ১৩; রিপন ৭-০-৪০-২, রকিবুল ১০-১-৫১-১, মৃত্যুঞ্জয় ৬.৩-০-৫১-৩, মোসাদ্দেক ১০-০-৩৫-২, মাহফুজুর ৯.২-০-৩৪-০, মেহরব ৫-০-২০-০, জিশান ১.৪-০-৬-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ১০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শাহরিয়ার কমল
হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে মোহামেডানের জয়
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে ৫ উইকেটে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ২২৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২০ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা গুলশানের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু তাদের কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি।
দলটির হয়ে একমাত্র পঞ্চাশ আসে শাকিল হোসেনের ব্যাট থেকে। ৭ নম্বরে নেমে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৫৭ রান করেন তিনি।
রান তাড়ায় ৩৭ রানে দুই ওপেনার রনি তালুকদার (১ ছক্কা ও ২ চারে ২০) ও আনিসুল ইসলামকে (২ চারে ১২) হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তৌফিক খানও (দুটি করে ছক্কা-চারে ২৭) পারেননি ইনিংস বড় করতে।
এরপর, ৯৪ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। ৪টি চারে ৬২ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন অধিনায়ক হৃদয়।
জয় থেকে দল ৪ রান দূরে থাকতে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ১০৩ বলে ৭১ রান করেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৭.৪ ওভারে ২২৪ (হাবিবুর ১৯, খালিদ ১৫, ইলিয়াস ২৫, সাকিব ২২, নাঈম ২, শাহাদাত ২১, শাকিল ৫৭, মেহেদি ১৫, নিহাদ ১৭, ফরহাদ ৫, রায়হান ৭*; আবু হায়দার ৯-০-৪৭-২, এবাদত ৭-০-৫৩-০, সাইফ ৮.৪-১-৪২-৩, নাসুম ১০-০-৩৮-২, নাবিল ১০-০-৩০-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৮-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৬.৪ ওভারে ২২৫/৫ (রনি ২০, আনিসুল ১২, তৌফিক ২৭, হৃদয় ৬২, মাহমুদউল্লাহ ৭১, আরিফুল ২৫*, সাইফ ০*; নিহাদ ১০-০-৫২-০, রায়হান ৬-০-২৯-১, ইলিয়াস ১০-০-৪৪-০, মেহেদি ৪-০-২৭-১, ফরহাদ ৪-০-১৪-০, শাহাদাত ৮-০-৩৬-১, খালিদ ৩-০-১৫-১, সাকিব ১.৪-০-৬-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ