চান্দিকা হাথুরুসিংহ কোচ থাকার সময় তার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে গুঞ্জন ছিল সেই সময়, এবার তা খোলাসা করলেন আফিফ হোসেন নিজেই।
Published : 21 Jan 2025, 09:13 PM
চান্দিকা হাথুরুসিংহে কোচ থাকার সময় তার সঙ্গে আফিফ হোসেনের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। অসমর্থিত সূত্র থেকে সংবাদমাধ্যমে খবরও এসেছিল কিছু। এবার তা খোলাসা করলেন আফিফ নিজেই। শ্রীলঙ্কান ওই কোচের সঙ্গে কাজ করার সময় আত্মবিশ্বাস নড়ে গিয়েছিল বলে দাবি এই ব্যাটসম্যানের।
বাংলাদেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৪ ওয়ানডে ও ৭০ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন আফিফ। নিজেকে মেলে ধরার জন্য ও দলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সুযোগ তিনি পেয়েছেন বলা যায়। তবে তার পারফরম্যান্স একদমই সাদামাটা। দুই সংস্করণেই দারুণ কয়েকটি ইনিংস তিনি খেলেছেন। তবে ধারাবাহিক হতে পারেননি কখনোই। দলে আসা-যাওয়ার পর্বই চলেছে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ে।
আফিফ অবশ্য একটি অভিযোগ করতে পারেন, নিজের পছন্দের পজিশনে বা ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ তিনি পেয়েছেন সামান্যই। ওয়ানডেতে চারে ব্যাট করেছেন স্রেফ একবার আর পাঁচে পাঁচবার। ছয় নম্বরে তিনবার ব্যাট করেছেন। এর মধ্যে একটিতে করেছেন ৮১ বলে অপরাজি ৮৫, আরেকটি ৪১। তার পরও এখানে আর বেশি সুযোগ পাননি। সাত ও আট নম্বর মিলিয়ে খেলেছন ২১ ইনিংস।
টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য দুই ইনিংসে ওপেন করার সুযোগ পেয়েছেন। চারে খেলেছেন ১২ ইনিংস, তার পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভালো এই পজিশনেই। পাঁচে খেলেছেন ২১ ইনিংস, ছয়ে ২০ ইনিংস।
ওপরের দিকে ব্যাট করতে চাওয়ার ইচ্ছের কথা তিনি নানা সময়েই টুকটাক বলেছেন। বিপিএলে এক মৌসুমে ওপেন করে ভালো পারফরম্যান্সও ছিল তার।
ওপরের দিকে ব্যাট করার ইচ্ছা প্রকাশ করেই সেই সময়ের জাতীয় দলের কোচ হাথুরুসিংহের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি এবং খেসারত দিতে হয়েছিল দলে অনিয়মিত হয় পড়ে, এমন খবর এসেছিল দু-একটি সংবাদমাধ্যমে।
আফিফ এখন বিপিএলে খেলছেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে। চট্টগ্রামে মঙ্গলবার অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের পারফরম্যান্সের প্রশ্নে ২৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার নিজেই টেনে আনলেন আগের কোচের প্রসঙ্গ।
“গত সাত-আট মাস আমার একটু সমস্যা হচ্ছিল… আত্মবিশ্বাস নিয়ে। বিশেষ করে, আমাদের সবশেষ কোচ (হাথুরুসিংহে) যখন ছিলেন, তার সঙ্গে কাজ করছিলাম, তখন সত্যি বলতে আমার আত্মবিশ্বাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল।”
“আপাতত আমার মনে হয় না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। খুব ভালো ছন্দে আছি। যেগুলো নিয়ে কাজ করছি, ওগুলো আশা করি সামনে আমাকে ভালো পারফরম্যান্স এনে দেবে।”
হাথুরুসিংহের বিদায়ের পর বাংলাদেশের সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে হুট করেই তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই একাদশে জায়গা পান তিনি। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়দের অনুপস্থিতিতে তিন ম্যাচে পাঁচে ব্যাট করার সুযোগও পান। কিন্তু প্রতিবারই ভালো কিছুর আভাস দিয়ে তিনি আউট হয়ে যান। তিন ইনিংসে তার রান ছিল ২৮, ২৪ ও ১৫। টি-টোয়েন্টি সিরিজে এক ম্যাচ খেলে চারে নেমে করতে পারেন ১১ বলে ৮।
আফিফ অবশ্য ভালো কিছুর আশ্বাস দিচ্ছেন। জাতীয় দলে নতুন যুক্ত হওয়া সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ করেছেন তিনি। সেগুলো রপ্ত করতে পারলে পারফরম্যান্সও ভালো হবে বলে বিশ্বাস তার।
“অবশ্যই কাজ করছি। যেগুলোর কিছু কিছু ফলও পাচ্ছি। আরেকটু উন্নতির কিছু জায়গা আছে। ওগুলো করতে পারলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারব।”
“সবশেষ সফরে সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কিছু কাজ করা হয়েছিল। ওগুলো নিয়েই কাজ করছি। আশা করি, ওগুলো ঠিকঠাক হলে আরও ভালো পারফর্ম করা সম্ভব।’
এবারে বিপিএল খুব ভালো পারফরম্যান্স তিনি এখনও পর্যন্ত করতে পারেননি। প্রথম দুই ম্যাচে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে আউট হয়েছেন। পরে টানা তিন ইনিংসে ২০ ছুয়েঁও ৩৫ পর্যন্ত যেতে পারেননি। এর মধ্যে এক ম্যাচে একাদশের বাইরেও যেতে হয়েছে। অবশেষে সোমবার দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে তিনে নেমে তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৫৬ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন।
এই ইনিংস তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।
“গত কয়েকটি ম্যাচে আমি শুরুটা পাচ্ছিলাম। তবে ২০-৩০ করে করছিলাম। এর চেয়ে বড় করতে পারছিলাম না। সবশেষ ম্যাচে দলের যেটা দরকার ছিল, তিন উইকেট পড়ার পর দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী যেটা দরকার ছিল, ওভাবে খেলার চেষ্টা করেছি এবং শেষ দল একটা বড় স্কোর পেয়েছে। আমিও এখন আত্মবিশ্বাস অনুভব করছি।”
বিপিএলে আফিফদের পরের ম্যাচ বুধবার ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।