প্রায় পাঁচ বছর পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চার উইকেটের স্বাদ পেলেন আবু জায়েদ, তবে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের নায়ক ইফরান।
Published : 05 Apr 2024, 07:00 PM
আগের ম্যাচে দারুণ বোলিংয়ে চার উইকেট নিয়েও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় পরাজিত দলে ছিলেন ইফরান হোসেন। দীর্ঘদেহী এই পেসার এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন আরও। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নিয়ে তিনি নিশিচত করলেন দলের জয়। ইফরানের আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা হলো এবার আবু জায়েদ চৌধুরির। অভিজ্ঞ এই পেসার প্রায় পাঁচ বছর পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চার উইকেট নিলেও জিততে পারল না তার দল।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নিচের সারির দুই দলের লড়াইয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২০ রানে হারিয়ে জয়ের খরা কাটাল সিটি ক্লাব। আট ম্যাচে তাদের প্রথম জয় এটি।
ফতুল্লায় শুক্রবার সাজ্জাদুল হকের ৭০ রানের ইনিংসের সঙ্গে মইনুল ইসলাম সোহেলের ফিফটিতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫১ রান তোলে সিটি ক্লাব। ২৪ রানে ৪ উইকেট নেন আবু জায়েদ।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো করেও পরে পথ হারিয়ে ব্রাদার্স যেতে পারে ২৩১ রান পর্যন্ত। ৪৭ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচের সেরা ইফরান।
ব্রাদার্সের ইনিংসের শেষ দিকে বিস্ময়কর ছিল অধিনায়ক মনির হোসেনের ব্যাটিং। ওভারপ্রতি যখন সাত-আট রান করে প্রয়োজন, এক প্রান্তে রাহাতুল ফেরদৌস দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করলেও মনিরের মধ্যে তেমন কোনো তাড়নাই দেখা যায়নি। বলের পর বল ঠেকিয়েছেন তিনি, শট খেলার চেষ্টা দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান ৩৬ বলে ১৮ রান করে।
এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় সাত বছর পর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার সুযোগ পান লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন। প্রথম চার ওভারে ১০ রান দিলেও তার পরের দুই ওভার থেকে রান আসে ২১। এরপর আর বোলিং পাননি। এই ম্যাচের আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে তাকে সবশেষ দেখা গেছে ১৪ মাস আগে। ২০২৩ বিপিএলে তিনি খেলেছিলেন তিনটি ম্যাচ।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিটি ক্লাব এ দিন প্রথম বলেই হারায় সাদিকুর রহমানকে। সুইং করে ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে বাঁহাতি ওপেনারকে বোল্ড করে দেন আবু জায়েদ।
এই পেসারকেই পরে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন কাফিল উদ্দিন। তিনে নামা শাহরিয়ার কমল ১৫ রানে ফেরেন মারাজ মাহবুব নিলয়ের বলে বোল্ড হয়ে। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারায় সিটি ক্লাব।
সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করেন হাসান ও সাজ্জাদুল। চতুর্থ উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। হাসান ফেরেন ৬৭ বলে ৪১ করে।
চতুর্থ উইকেটে ৫৯ রানের জুটিতে দলকে আরও টেনে নেন সাজ্জাদুল ও মইনুল সোহেল। অফ স্পিনার মাহমুদুল হাসানের অনেক টার্ন করা বলে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৮৪ বলে ৭০ রান করা সাজ্জাদুল।
সিটি ক্লাবকে পরে আরেকটু টেনে নেন দুই মইনুল। ৫৩ রান করেন মইনুল ইসলাম সোহেল, ২১ বলে ২২ রান মইনুল ইসলাম। দুজনকেই ফেরান আবু জায়েদ।
এই সংস্করণে সবশেষ চার উইকেটের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আফগানিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে। পরের এই প্রায় পাঁচ বছরে অবশ্য লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি কেবল ১৩টি। ঢাকা লিগে সবশেষ চার উইকেট নিতে পেরেছিলেন ২০১৮ সালে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে।
২৫২ রান তাড়ায় ব্রাদার্স ইউনিয়নকে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৯ রান এনে দেন রহমতউল্লাহ আলি ও ইমতিয়াজ হোসেন। পরের জুটিতে একশ ছাড়িয়ে যায় দলীয় সংগ্রহ।
দৃশ্যপটে ইফরানের আবির্ভাব তখনই। মাহমুদুল হাসানকে ফিরিয়ে ৪৪ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। এই পেসার পরে ফিরিয়ে দেন দারুণ খেলতে থাকা রহমতউল্লাহ আলিকে। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৯ বলে ৬০ রান করেন ব্রাদার্সের ওপেনার।
চতুর্থ উইকেটে আবার দলকে পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান আসিফ আহমেদ ও আব্দুল মজিদ। কিন্তু এই দুজনকেও থামান ইফরান। আগ্রাসী শুরুর পর খেই হারিয়ে আসিফ আউট হন ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ করে।
এরপর রাহাতুল ফেরদৌসের ব্যাটেই জিইয়ে ছিল ব্রাদার্সের আশা। কিন্তু লেংথ বল স্লগ করতে গিয়ে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। ৫ উইকেট পূর্ণ করার পাশাপাশি দলের জয়ও নিশ্চিত করে দেন ইফরান।
মনিরকে তো কোনো চেষ্টাই করতে দেখা যায়নি দ্রুত রান তোলার। পারেননি লোয়ার অর্ডারের অন্যরাও।
আট ম্যাচে ব্রাদার্সের এটি পঞ্চম পরাজয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫১/৯ (সাদিকুর ০, হাসান ৪১, কমল ১৫, কফিল ০, সাজ্জাদুল ৭০, মইনুল সোহেল ৫৩, রাফসান ১০, মইনুল ২২, ইফরান ৩*, নয়ন ১, গালিব ১*, আবু জায়েদ ৭-১-২৪-৪, সাকিল ৪.৩-০-২১-০, নিলয় ৭-০-২৬-১, রহমতউল্লাহ ৮-০-৩৯-১, রাহাতুল ৪-০-২৪-০, মনির ৫.৩-০-৩৩-০, মাহমুদুল ৮-০-৪২-২, জুবায়ের ৬-১-৩১-০)।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৩১/৮ (রহমতউল্লাহ ৬০, ইমতিয়াজ ২৫, মাহমুদুল ১৫, আসিফ ৪৪, মজিদ ১৩, রাহাতুল ৩০, নিলয় ১৩, মনির ১৮*, আবু জায়েদ ৩, জুবায়ের ১*; ইফরান ১০-০-৪৭-৫, গালিব ৯-০-৪৮-১, মইনুল ১০-০-৩৬-১, নয়ন ১০-০-৩৮-১, রাফসান ১০-১-৪৮-০, সাজ্জাদুল ১-০-১০-০)।
ফল: সিটি ক্লাব ২০ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইফরান হোসেন।