সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথা বলে তাদের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
Published : 03 Jul 2024, 08:31 AM
সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তরুণ পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। বিশেষ করে, তাওহিদ হৃদয়, তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেনকে দেখে তিনি মুগ্ধ। তাকে হতাশ করেছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়েও সম্ভাব্য একটি চিত্র তুলে ধরলেন বোর্ড প্রধান।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে গিয়েই এই কথাগুলি তুলে ধরেন বিসিবি সভাপতি। মঙ্গলবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, দলের পারফরম্যান্সে তিনি সন্তুষ্ট কি না। জবাবে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে তুলে ধরেন বাংলাদেশের স্কোয়াডের গঠন, তার নিজের প্রত্যাশা, উইকেট, কন্ডিশন, বিভিন্ন দলের বাস্তবতাসহ আরও অনেক কিছু।
সুদীর্ঘ ব্যাখ্যার এক পর্যায়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ও ফলাফল তাকে সন্তুষ্টই করেছে।
“প্রথম রাউন্ডে যে খেলা, বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তো ভালো খেলেছেই। সবচেয়ে ভালো খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আমাদের সবসময়ই জেতার মতো অবস্থা ছিল, এই ম্যাচ হারার কথা নয়। বরং যে দলের সঙ্গে কখনো চিন্তাই করিনি (হারতে পারে)… আমার বুক ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিল নেপালের সঙ্গে ম্যাচ দেখে।”
“কিছু একটা আছে, যা আমি এখন বলতে চাই না। সেটা আমাদের প্রত্যাশামতো হয়নি। তবে এই সব কিছু মিলিয়ে যদি বলি, প্রথম রাউন্ডের খেলা দেখে আমরা অবশ্যই খুশি হয়েছি যে আমরা কোয়ালিফাই করেছি (সুপার এইটে)। যে ধরনের কন্ডিশনে ও উইকেটে খেলেছি, যে কোনো কিছু হতে পারত। ভালো-খারাপ বলে কিছু নেই।”
সুপার এইটের পারফরম্যান্স নিয়ে সেভাবে তিনি সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির কথা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। তবে দলের মূল্যায়নে তিনি তুলে আনলেন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সকে। এখানেই জানালেন সিনিয়রদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশার কথা।
“আরেকটা জিনিস পুরো উল্টো হয়ে গেছে। আমার এত বছরের অভিজ্ঞতা কোনো কাজেই এলো না। যেখানে ভেবেছিলাম ‘এই নতুন ছেলেগুলোকে নেওয়া হবে ঝুঁকিপূর্ণ, এরা কিচ্ছু করতে পারবে না, আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা ভালো করবে’- এটা উল্টো হয়ে গেল। সিনিয়র যারা ছিল, তারা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।”
“শান্ত, লিটন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ-ওদের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা ছিল… সব ম্যাচ তো আর ভালো খেলবে না, কিন্তু কিছু ম্যাচে যেরকমভাবে আমরা ওদের কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা পূরণ হয়নি। সেদিক থেকে মনটা একটু খারাপ।”
সবগুলি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা সাকিব এবারের আসরে ৭ ইনিংসে রান করেছেন ১১১। তার ব্যাটিং গড় ১৮.৫০, স্ট্রাইক রেট ১০৬.৭৩। উইকেট নিতে পেরেছেন কেবল তিনটি। পাঁচ ম্যাচেই তিনি উইকেটশূন্য ছিলেন। ‘ফিনিশার’ হিসেবে দলে থাকা মাহমুদউল্লাহর রান ৭ ইনিংসে ৯৫। ১৫.৮৩ গড়ের সঙ্গে স্ট্রাইক রেট তো চরম বিব্রতকর (৯৪.০৫)।
৭ ইনিংসে ১৬ গড়ে ১১২ রান করেছেন অধিনায়ক শান্ত, স্ট্রাইক রেট ৯৫.৭২। শেষ ম্যাচে অপরাজিত ফিফটি করা লিটন কুমার দাস ২৩.১৬ গড়ে ৭ ইনিংসে করেছেন ১৩৯ রান। স্ট্রাইক রেট ৯৩.২৮।
শান্ত ও লিটনের সামনে ক্যারিয়ারের পথচলা বাকি অনেক এখনও। তবে ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ ও ৩৭ বছর বয়সী সাকিবের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে বিশ্বকাপ চলার সময়ই থেকেই। দুই বছর পর আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদেরকে পাওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই।
নাজমুল হাসান জানালেন, এই দুজনের সঙ্গে আলোচনা করেই ভবিষ্যতের পথরেখা আঁকা হবে।
“আমার এখনও পর্যন্ত ওদের ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। তবে যতই আস্থা থাকুক না কেন, একটা সময় ওরা আর খেলবে না। একটা হতে পারে, ওরা নিজেরাই বলবে যে খেলবে না, আরেকটা হতে পারে বোর্ড থেকে বলবে… আমরা চাই একসঙ্গে হোক। ওরকমই হবে আশা করি, বসে পরিকল্পনা করব কখন কে যাচ্ছে।”
তাদেরকে এখনই বিবেচনার বাইরেও রাখছেন না বিসিবি সভাপতি। বিশেষ করে সাকিবের ফর্মে ফেরার অপেক্ষাতেই আছেন তিনি।
বোর্ড সভার দিনই মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা হয়েছেন সাকিব। এই টুর্নামেন্টে সাকিবের পারফরম্যান্সের দিকে আগ্রহী হয়ে তাকিয়ে থাকবেন নাজমুল হাসান।
“এই যে সাকিব, ও তো টি-টোয়েন্টি খেলতে যাচ্ছে (মেজর লিগ ক্রিকেটে)। ওখানে গিয়ে ও যদি (ভালো) খেলা শুরু করে দেয়, তখন কি বাদ দিতে পারবেন? নাকি আমি পারব! আমি তো পারলে ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসব। এগুলো পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে।”