টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের খেলার ধরন নিয়ে অধিনায়কের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন বিসিবি সভাপতি, অধিনায়কের অমন কথা বলার কারণ জানেন না বোর্ড পরিচালকদের কেউ।
Published : 02 Jul 2024, 11:41 PM
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের খেলার ধরন নিয়ে দ্বিধান্বিত বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দলের খেলার আর অধিনায়কের কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পাননি তিনি। দলীয় পরিকল্পনা নিয়ে ম্যাচ শেষে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তা গ্রহণযোগ্য নয় বিসিবি প্রধানের। তার দাবি, অধিনায়কের ওই কথা বলার কারণ জানেন না বোর্ড পরিচালকদের একজনও।
সুপার এইটের প্রথম দুই ম্যাচে বাজেভাবে হারার পরও অভাবনীয় সেমি-ফাইনালে খেলার একটি সুযোগ বাংলাদেশের সামনে এসেছিল। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১১৫ রানেই আটকে রাখেন বোলাররা। সেই রান ১২.১ ওভারে টপকে যেতে পারলেই সেমি-ফাইনাল খেলার ইতিহাস গড়া হয়ে যেত। বৃষ্টিতে পরে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯ ওভারে ১১৪। কিন্তু সেমি-ফাইনালের লক্ষ্য পূরণ করা তো বহুদূর, বাংলাদেশ উল্টো হেরে যায় ৮ রানে।
ম্যাচের পর অধিনায়ক শান্ত জানান, তাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথম তিন উইকেটে 'হার্ড যাওয়া', যেটির মানে বলা যায় সেমি-ফাইনালে যাওয়ার চেষ্টা করা। এরপর দ্রুত উইকেট হারালে 'নরম্যাল' খেলার চেষ্টা করা। যেটির অর্থ হয়, সেমি-ফাইনালের আশা বাদ দিয়ে স্রেফ জয়ের চেষ্টা করা।
ইতিহাস গড়ার হাতছানিতে অমন সুযোগ পেয়েও যথেষ্ট বা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা না করায় সামাজিক মাধ্যমে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রিকেট অনুসারীরা।
মঙ্গলবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তুমুল আলোচিত সেই ম্যাচ নিয়ে নিজের ভাবনা জানালেন বোর্ড প্রধান। তার মতে, কন্ডিশনের বিবেচনায় সেমি-ফাইনালের লক্ষ্য নাগালের বাইরে ছিল।
“১২ ওভারে ১১৫ করা কঠিন কিছু নয় টি-টোয়েন্টিতে। কিন্তু ওই উইকেটে কেউ করে দেখাতে পেরেছে বা পারত কেউ? আফানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া খেলল তো ওই মাঠে… কি করেছে? কত করেছে? আমি বলছি যে, একতরফা বললে হবে না। কন্ডিশন ওইরকম ছিল কি না, সেটাও তো দেখতে হবে! কন্ডিশন উপযুক্ত ছিল না, আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন। তবে ওরা চেষ্টা করেছে।”
তবে ম্যাচ শেষে শান্ত যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন, তা মেনে নিতে নারাজ বিসিবি সভাপতি। তার মতে, অধিনায়ের কথার সঙ্গে দলের খেলার ধরনের মিল ছিল না।
“সমস্যাটা হলো কোথায়… আমি একটা শুনেছি যে, আমাদের অধিনায়ক বলেছে, তিন উইকেট করার পর চেষ্টা করেনি (সেমি-ফাইনালে যাওয়ার)। এটা অগ্রহণযোগ্য নয়… এটা যদি বলে, গ্রহণযোগ্য নয়।”
“কিন্তু দলের খেলা দেখে এটা মনে হয়নি। আমি তো দেখলাম ৫ উইকেট যতক্ষণ ছিল… তাওহিদ হৃদয় তো মেরেই খেলেছে। তার পর মাহমুদউল্লাহ, রিশাদ… রাশিদ খানের শেষ ওভারে গিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে দুজনই আউট হয়েছে। ওরা পড়ে যাওয়ার পর দেখলাম যে, কোনোরকমে খেলছে।”
এক পর্যায়ে ১৯ বলে যথন ৪৩ রান দরকার, তখন আফগানদের নবীন স্পিনার নুর আহমাদের ওভারের ৫ বল থেকে রান নিতে পারেননি অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। চেষ্টা করার প্রসঙ্গে এই প্রশ্নও ছুটে গেল বোর্ড প্রধানের দিকে। তার ধারণা, মাহমুদউল্লাহর অমন খেলা ইচ্ছাকৃত ছিল না।
“যে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নুরের বলে ৫টি ডট বল খেলল, সেই রিয়াদ রাশিদ খানের বলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে এলো! মানে জিনিসটা আমরা এখান থেকে দেখে যা মনে করছি, তা তো নয়। আমার যেটা বিশ্বাস, মাহমুদউল্লাহ সুযোগ পেত, অবশ্যই মারত। আমার কাছে মনে হয়েছে, সুযোগ পেলে মারত…।”
বাংলাদেশের খেলার ধরন নিয়ে ম্যাচ চলার সময়ই ধারাভাষ্যকারদের সমালোচনা, ক্রিকেটারদের তাড়না নিয়ে প্রশ্ন, ক্রিকেটবিশ্বজুড়ে সমালোচনা, এসব নিয়েও সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলো বিসিবি সভাপতিকে। তিনি আবারও বললেন, শান্তর ব্যাখ্যা তিনি মানতে নারাজ। সংবাদকর্মীদের ওপর তিনি ছেড়ে দিলেন বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব।
“ওর এই কথার সঙ্গে আমি একমত নই। এটা তো বলছিই, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ১২ ওভার পর্যন্ত অবশ্যই আমাদের জেতার জন্য লড়া উচিত ছিল। এইটা যদি বলেন, তাহলে ঠিক আছে।”
“যখন ডিফেন্স করার কথা ছিল, তখন দেখেছি মারতে গেছে, যখন মারার কথা, তখন ডিফেন্স করেছে। এখন বলেন, এটার মানে কী! আমাকে এসব জিজ্ঞেস করে লাভ আছে? আপনারা খেলা বোঝেন না? এটার কি উত্তর দেব আমি?”
বিশ্বকাপ থেকে দল দেশে ফিরেছে কয়েক দিন আগেই। কিন্তু অধিনায়কের কাছে কারণ জিজ্ঞাসা করা কিংবা তার সঙ্গে এখনও আলোচনা করেননি বিসিবি সভাপতি। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান কিংবা কোনো পরিচালকই শান্তর অমন কথার কারণ জানেন না বলে দাবি করলেন নাজমুল হাসান।
“আপনাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম, যদি ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। আমি নই, বোর্ডে যারা আছে, অপারেশন্স… আজকে বোর্ডে আমি যাদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ জানে না। (অধিনায়ক ওই কথা) কেন বলেছে, কেউ জানে না… তাহলে আমি কি বলব?”
“আপনাকে যদি একটা প্রশ্ন করি, আপনি যদি বলেন যে জানেন না, তাহলে আমি কি করব? আশ্চর্য কথা… আমি এখন করবটা কী…!”