Published : 29 Apr 2025, 09:18 PM
শিশুসুলভ হাসি, চেহারায় কৈশোরের ছাপ। কথাবার্তায়ও খুব চটপটে নন ভিনসেন্ট মাসেকেসা। সংবাদ সম্মেলন শেষে তার বয়স নিয়ে অনেকের মধ্যেই দেখা গেল কৌতূহল। টিনএজ বয়সের হবেন? কিংবা বড়জোর ২০-২১! যখন বলা হলো তার বয়স ২৮, তারা সবাই অবাক। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও সম্ভবত কোনোভাবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। সেখানে বয়সের ব্যাপার নেই, আছে বোলিংয়ের ধরন। তার বোলিংয়ে বিশেষ কিছু আছে বলে মনে হয়নি কখনোই, কিন্তু দিনশেষে অভিষিক্ত লেগ স্পিনারই জিম্বাবুয়ের সফলতম বোলার!
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশ যে ২০ রানের মধ্যে ৪টি উইকেট হারিয়েছে, এর ৩টিই নিয়েছেন মাসেকেসা।
অথচ দিনের বেশির ভাগ সময় তার কেটেছে হতাশায়। শেষ সেশনের আগ পর্যন্ত বোলিং করতে পেরেছিলেন স্রেফ ৫ ওভার। উইকেটশূন্য ছিলেন ২২ রান দিয়ে। ঠিক জায়গায় বল রাখতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। টার্ন খুব একটা আদায় করতে পারছিলেন না।
নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের জুটি যখন জমাট, ইনিংসের ৭০ ওভার পেরিয়ে গেছে, আবার মাসেকেসার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। এরপরই জাদুকরী পরিবর্তন।
নাহ, তার বোলিংয়ে তেমন জাদু ছিল না। তবে ভোজভাজির মতোই বদলে যায় ইনিংসের চিত্র। নতুন স্পেলের প্রথম ওভারেই তিনি পান প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ। উদাসীন শটে তাকে উইকেট উপহার দেন শান্ত। জুটি ভাঙে ৬৫ রানে।
পরে জাকের আলি ও নাঈম হাসানের উইকেটও পান তিনি। সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের রান আউটে ৩ উইকেটে ২৫৯ থেকে বাংলাদেশের রান হয়ে যায় ৭ উইকেটে ২৭৯!
বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে। ৬৪ রানে এগিয়ে থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে এখনও তারাই। তবে জিম্বাবুয়ে যে লড়াইয়ে ফিরেছে, সেখানে বড় কৃতিত্ব মাসেকেসার।
বয়স ২৮ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটেও অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই তার। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০টি। এবার সফল হলেন টেস্ট অভিষেকেও।
মাসেকেসা তাতে উচ্ছ্বসিত। শান্তর বিদায়ে যেভাবে প্রথম উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন, সেটা তার কাছেও ছিল অপ্রত্যাশিত।
“আমি খুবই খুশি। আমার জন্য স্পেশাল এক মুহূর্ত এটি। আমার মনে হয়, দলও শেষ পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থানে আসতে পেরেছে।”
“ঠিক ওই সময়টাতেই প্রথম উইকেট আশা করিনি আমি। তবে আমার কাছে এটার মূল্য অনেক। জিম্বাবুয়েকে টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা অনেক বড় ব্যাপার এবং আমি খুবই খুশি।”
নবীন লেগ স্পিনার শোনালেন অন্য লেগ স্পিনারদের প্রতি তার অনুরাগের কথাও। সেখানে থাকল তার চেয়ে ছয় বছরের ছোট বাংলাদেশি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের নামও।
“আমি সবসময়ই লেগ স্পিনারদের বড় ভক্ত। অবশ্যই শেন ওয়ার্ন এবং জিম্বাবুয়ের প্রায় সব লেগ স্পিনারের ভক্ত। বেড়ে ওঠার সময়টায় গ্রায়েম ক্রিমারকে অনুসরণ করেছি। ইংল্যান্ডের আদিল রাশিদকেও দারুণ পছন্দ করি। ভারতের ইউজভেন্দ্রা চেহেল, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জ্যাম্পাকেও ভালো লাগে… এমনকি বাংলাদেশের রিশাদকেও। তাদের সবার বোলিংই দেখি এবং শেখার চেষ্টা করি।”
বাংলাদেশ ম্যাচে এগিয়ে থাকলেও জিম্বাবুয়ে প্রবলভাবে লড়াইয়ে ফিরবে বলেই আশা মাসেকেসার।
“বাংলাদেশ খুব ভালো খেলছে, কোনো সংশয় নেই। তবে আমরা ভালোভাবেই এখনও ম্যাচে আছি। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামীকাল আমরা প্রবল লড়াই করব।”